বিশ্বকাপ শুরুতেই দিল অনেক চমক

সিজার লুইস মেনোত্তি
সিজার লুইস মেনোত্তি

বিশ্বকাপ নিয়ে কিছু বলার আগে এটা বলি যে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কিছুই আমি বুঝিনি। কায়তানো ভেলোসো বা বেথানিয়ার গান, ভিনিসাস দা মোরায়েসের সংগীত বা টোকিনহোর গিটার না শুনতে পেরে আমি খুব অবাক হয়েছি।
ফুটবলের সঙ্গে সংগীতের তো সব সময়ই একটা অনন্য রসায়ন ছিল। সেটা বাদ দিলে ফুটবলের দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্বকাপের শুরুটা চমৎকার কিছু দৃশ্য উপহার দিয়েছে। মনে তো রাখতেই হবে, প্রথম ম্যাচে অনেক স্নায়ুর চাপ থাকে।
বিশেষ করে ইতালি বনাম ইংল্যান্ড ম্যাচের কথা তো বলতেই হবে। দুই দলের খেলায় ছিল বুদ্ধিমত্তার ছাপ, অনেক ক্ষেত্রে সাহসীও। ইংল্যান্ডের তরুণ তুর্কিরা চমৎকার দেখিয়েছে, উপভোগ করার মতো একটা ম্যাচ ছিল সেটা। বাকি ম্যাচগুলোয় তেমন চমক আমি দেখিনি।
যেমন জার্মানির কথাই ধরুন। পর্তুগালের বেশ কিছু ভালো খেলোয়াড় আছে। সব সময়ই মনে হয় ওরা অসাধারণ কিছু করে ফেলবে, কিন্তু শেষমেশ করতে পারে না। এমনকি যেবার ওরা ঘরের মাঠে খেলল, সেবারও না। জার্মানির কৌশল সুপ্রতিষ্ঠিত। ওরা জানে কীভাবে খেলতে হবে। আর ওদের শক্তির উৎস নিরেট, ঠিক কোচের (জোয়াকিম লো) কথার মতো। ওর কথাবার্তা খুব পরিষ্কার, ও কী চায় আর কীভাবে চায়, ওর খেলোয়াড়েরা জানে।
আমার মনে হয় না ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ওর মতো খেলতে পেরেছে। ওর দক্ষতা বা গতিকে কাজে লাগানোর মতো জায়গা ও বের করে নিতে পারেনি। পর্তুগাল আসলে খেলার মতো জায়গাই পায়নি। যেমন: জার্মানি বলের দখল হারিয়ে ফেললে মনে হয় যেন ২০ জন মিলে রক্ষণদুর্গ পাহারা দিচ্ছে। সবগুলো দলের মধ্যে ওদের রক্ষণব্যূহই ছিল সবচেয়ে দুর্ভেদ্য। দর্শকদের ওরা আর হল্যান্ড সেরা খেলাটা উপহার দিয়েছে।
ব্রাজিলকে সম্মান দিয়েই বলছি, ওদের কৌশল নিয়ে আমি সন্দিহান। খেলায় নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে হলে কখনো কখনো আপনাকে ঝুঁকি নিতে হবে। ঝুঁকির কথা যখন বলছি, সেটা জেনেশুনে নেওয়ার কথা বলছি। উন্মাদের মতো ঝুঁকি নিলে কেউ বেশি দিন বাঁচবে না, দেখা যাবে নিজেই নিজেকে মেরে ফেলছে। কিন্তু কিছু কিছু সময় জার্মানির মতো করে ঝুঁকি নিতে হবে। ব্রাজিলের বেলায় আমি বলব, খেলার ওপর আরও জোর দিতে হবে। (হোর্হে লুইস) বোর্হেস একবার বলেছিলেন সাহিত্য হলো নিয়ম মানা আর নিয়মভাঙার খেলা। ফুটবলও তাই। তবে আমি মনে করি ফুটবলে নিয়মই বেশি মানা হয়, নিয়মভাঙার চেষ্টা কমই থাকে। ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার কথা বলছি না, দলীয় প্রচেষ্টার কথাই বলছি।
স্পেনের ব্যাপারে বলব, হল্যান্ডের সঙ্গে খেলার পর সংবাদমাধ্যম ওদের প্রতি নির্মম আচরণ করেছে। ফলাফল অবশ্যই জঘন্য ছিল, কিন্তু ফুটবলে এমন তো হতেই পারে। গত বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ইকার ক্যাসিয়াস কিছু হাস্যকর ভুল করেছে। গোলরক্ষক যদি এমন ভুল করে গোল তো হবেই। কিন্তু অন্যরাও ভুল করতে থাকলে বুঝতে হবে তাদের কোথাও ভুল হচ্ছে।
আর্জেন্টিনার খেলার আগে দল নিয়ে মনে হলো দ্বিধাবোধ ছিল। জানি না কারণটা কী, তবে ওরা খুব একটা ভালো খেলেনি। যদিও উন্নতির সুযোগ সব সময়ই থাকে, দ্বিতীয়ার্ধে সেটা আমরা দেখেছি। আর্জেন্টিনা এমন একটা দলের সঙ্গে সেদিন খেলেছে যাদের খেলা ছিল পরিকল্পিত। তবে এর পরই তো দৃশ্যপটে আবির্ভাব ঘটল লিওনেল মেসির। বাকি দুই ম্যাচ ওদের জন্য সহজই হওয়ার কথা।
মোটের ওপর দক্ষিণ আমেরিকার দলগুলো খুব একটা ভালো খেলেনি। কলম্বিয়া গ্রিসের সঙ্গে জিতলেও আমি মনে করি ওরা আরও ভালো করতে পারে। ওরা কিন্তু ওদের সেরা খেলাটা খেলতে পারেনি।
সবচেয়ে বেশি হতাশ করেছে উরুগুয়ে। কোস্টারিকার সঙ্গে ওদের পরাজয়ে আমি খুবই অবাক হয়েছি। নিঃসন্দেহে কাজটা অনেক কঠিন হয়ে গেল ওদের জন্য, কিন্তু সবাইকে বিস্মিত করার ক্ষমতা ওদের আছে। কোস্টারিকার খেলায় অনেকে বিস্মিত হলেও আমি হইনি। অনেক দিন ধরেই ওরা ভালো খেলছিল। আর এখন ওরা যে দল গড়েছে ওদের হারানো অন্য দলগুলোর জন্য সহজ হবে না।
শেষ করার আগে বলতে চাই, অনেকবারই প্রথম ম্যাচগুলো তেমন উপভোগ্য না হওয়ার পরও চমৎকার টুর্নামেন্ট আমরা উপহার পেয়েছি। এই বিশ্বকাপ নিয়েও তেমন আশাবাদ থাকল।