বোর্ড পরিচালকেরা অন্ধকারে

এক দিনের ব্যবধানে দুটি সভা। একটি আজ ঢাকায়, আরেকটি এর মধ্যেই হয়ে গেছে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১০ হাজার মাইল দূরের ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের (ডব্লুআইসিবি) জরুরি সেই সভাটি হয়েছে টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে। আলোচনার বিষয় ছিল একটাই। আর ঢাকায় বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের সভার আলোচ্যসূচিতে আছে ১৫টি বিষয়!
ক্রিকেটের তিন নব্য ‘জমিদার’-এর বিতর্কিত প্রস্তাবটি তোলা হবে দুবাইয়ে অনুষ্ঠেয় আইসিসির ২৮-২৯ জানুয়ারির সভায়। ওই সভা সামনে রেখে নিজেদের অবস্থান ঠিক করতে গত সোমবার ডব্লুআইসিবির পরিচালকেরা টেলিকনফারেন্স করেছেন। বাংলাদেশ সময় কাল রাতে আবারও। অথচ এমন জরুরি একটা বিষয়ের গুরুত্বই যেন বুঝতে পারছে না বিসিবি! আজকের বোর্ড সভার আলোচ্যসূচিতে এটি আছে। তবে সঙ্গে আরও ১৪টি বিষয়। বোর্ড পরিচালকেরা সভা করতে যাবেন বিতর্কিত ওই প্রস্তাব সম্পর্কে পুরোই অন্ধকারে থেকে। ৯ জানুয়ারি আইসিসির আইডিআই (আইসিসি ডেভেলপমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স) সভায় বিষয়টা নিয়ে আলোচনা হলেও সে সভা থেকে ফিরে কাল পর্যন্তও এ নিয়ে কারও সঙ্গে আলোচনা করেননি বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। এ নিয়ে পরিচালকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভও আছে।
গত দুই দিনে বিসিবির বেশ কয়েকজন পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা বিষয়টা জেনেছেন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন খবর থেকে। তবে বোর্ড সভাপতি আলোচনা না করলেও পত্রপত্রিকা পড়ে ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন তাঁরা সবাই। আজ বোর্ড সভায় নিজেদের সে অবস্থান শক্তভাবে তুলে ধরবেন পরিচালকেরা। তবে বিসিবিতে এমন গুঞ্জনও আছে, ভারতের কাছে এর মধ্যেই প্রস্তাবে সম্মত হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছে বিসিবি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বোর্ড পরিচালক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘এর পক্ষে অবস্থান নেওয়া হবে আত্মহত্যার মতো। বিসিবির কোনোভাবেই উচিত হবে না এই প্রস্তাবকে সমর্থন করা। আমরা যদি টেস্টই না খেলব, তাহলে ৫০ বছর ধরে ক্রিকেটটাকে তিলে তিলে এভাবে গড়ে তোলা কেন!’ আইসিসির বর্তমান এফটিপি অনুযায়ী ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৩০টি টেস্ট খেলার কথা বাংলাদেশ দলের। বিতর্কিত প্রস্তাবটি পাস হয়ে গেলে তা আর খেলা হবে না। বিসিবি যে ছয় বছরের জন্য টেলিভিশন সম্প্রচার স্বত্ব বিক্রির চিন্তা করছে, বাস্তবায়ন হবে না সেটাও। এক পরিচালকের প্রশ্ন, ‘যদি ওই তিন দেশই ক্রিকেট চালাবে, তাহলে আর আইসিসির দরকার কী? এটাই কি ক্রিকেটের বিশ্বায়ন! আমরা কোনোভাবেই এই প্রস্তাবে রাজি হব না।’ তাঁর পাল্টা প্রস্তাব, ‘আইসিসি বরং ভারত, ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়াকে আলাদা করে দিক। আমরা বাকি দেশগুলো একসঙ্গে খেলব।’
বোর্ড পরিচালকদের এই অবস্থান আজকের সভাতেও টিকে থাকলে ভালো। নয়তো অন্ধকারের দিকেই হাঁটবে বাংলাদেশের ক্রিকেট এবং সে আশঙ্কা উড়িয়েও দেওয়া যাচ্ছে না। দুবাইয়ের সভার আগে প্রস্তাবের পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো মতই প্রকাশ না করার মতও আছে বোর্ডে। আগে থেকে নিজেদের অবস্থান না জানিয়ে কৌশলী হওয়া এবং সভার পরিস্থিতি বুঝে মতামত দেওয়ার পক্ষে তাঁরা। ‘সামনে এশিয়া কাপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এই অবস্থায় সরাসরি ভারতের বিপক্ষে যাওয়া উচিত হবে না আমাদের। এর চেয়ে পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া ভালো’—বলেছেন এক বোর্ড পরিচালক। প্রয়োজনে বিষয়টি সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়ারও পক্ষে তিনি, ‘এখানে যেহেতু অনেক কিছুই জড়িত, সভাপতির উচিত এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা। সরকারকে পরিস্থিতি বুঝিয়ে এ অবস্থায় বোর্ডের করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা চাওয়া।’