মোহামেডানের মাঝমাঠের নেতা

কলকাতা মোহামেডানের জার্সিতে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার পারফরম্যান্সে খুশি দলটির কোচ ও অধিনায়ক।

ফুটবলে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের উপস্থিতি অনেকটাই অদৃশ্য। কিন্তু তাঁদের অনুপস্থিতিটা টের পাওয়া যায় হাড়ে হাড়ে। ভারতের আই লিগে খেলতে গিয়ে কলকাতা মোহামেডানে যেন সে রকমই একজন হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের জামাল ভূঁইয়া। কলকাতার ঐতিহ্যবাহী দলটির কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তীর মুখে জামালের প্রশংসা। দলের অধিনায়ক নাইজেরিয়ার ডিফেন্ডার কিংসলে ওবুনেমেও মুগ্ধ জামালের খেলায়।

প্রায় ৭ বছর পর আই লিগে ফিরে সুপার সিক্সে উঠেছে মোহামেডান। প্রথম পর্বের ১০ ম্যাচ শেষে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থ স্থানে তারা। চোটের কারণে একটি ছাড়া সব ম্যাচই খেলেছেন জামাল। এখনো কোনো গোল করা বা করাতে পারেননি তিনি। তবে রক্ষণভাগকে বাড়তি ছায়া দেওয়ায় জামালে মজেছেন শঙ্করলাল।

শুরুতে কলকাতা মোহামেডানের কোচ ছিলেন স্প্যানিশ হোসে হেভিয়া। দল ভালো না খেলায় ৮ ম্যাচ পর তাঁকে বরখাস্ত করে প্রধান কোচের দায়িত্ব দেওয়া হয় টেকনিক্যাল ডিরেক্টর শঙ্করলালকে। তাঁর অধীনেই সর্বশেষ দুটি ম্যাচ জিতে সুপার সিক্সে ওঠে মোহামেডান। সর্বশেষ ম্যাচে ১০ খেলোয়াড় নিয়েও ২-০ গোলে হারিয়েছে লিগে অপরাজেয় হয়ে ওঠা রিয়াল কাশ্মীরকে। সে ম্যাচে মাঝমাঠে জামালের ভূমিকা বিশেষভাবেই চোখে পড়েছে শঙ্করলালের, ‘শেষ ম্যাচে জয়ের কোনো বিকল্প ছিল না। যে রিয়েল কাশ্মীর লিগে অপরাজিত ছিল, তাদেরই আমরা ১০ জন নিয়ে হারিয়েছি। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে যে দু-তিনজনের নেতৃত্বে দল ঘুরে দাঁড়াল, তাঁদের মধ্যে জামাল একজন।’

খুব কাছে থেকে দেখা জামালকে বড় সার্টিফিকেটই দিচ্ছেন কলকাতা মোহামেডানের কোচ শঙ্করলাল, ‘আমরা দলে নেতা খুঁজি। সে যদি মাঝমাঠের খেলোয়াড় হয়, তাহলে পরিকল্পনা সাজাতে সুবিধা হয়। জামাল মুখে কথা বলে দলটাকে খেলাচ্ছে। পায়ে ফুটবল নিয়ে খেলাচ্ছে। রক্ষণভাগ ও আক্রমণভাগকে সাহায্য করছে। জুনিয়র খেলোয়াড়দের গাইড করছে। দলে এ রকম ছেলে বেশি থাকলে সাফল্য পেতে সুবিধা হয়।’

সাদা চোখে আই লিগে জামালের পারফরম্যান্স সাদামাটা মনে হলেও কোচের চোখ বলে ভিন্ন কথা। শঙ্করলাল বলছিলেন, ‘কে গোল করল, কে গোল করাল—এগুলো বিষয় নয়। দল জিতল কি না, ভালো খেলল কি না—এগুলোই বিষয়।’ আই লিগে বিদেশি কোটায় জামাল ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়া থেকে খেলছেন নেপালের অধিনায়ক কিরণ চেমজং ও ভুটানের অধিনায়ক চেনসো গেইলশেন। তুলনামূলকভাবে গোলরক্ষক কিরণ ও স্ট্রাইকার চেনসোর চেয়ে জামালের পারফরম্যান্সকেই এগিয়ে রাখছেন তিনি।

জামালের প্রশংসা মোহামেডান অধিনায়ক কিংসলের মুখেও। জামালকে দলের অন্য রকম এক নেতা হিসেবেই স্বীকৃতি দিচ্ছেন মোহনবাগানের জার্সিতে দুই মৌসুম দাপটের সঙ্গে খেলা কিংসলে, ‘জামাল দলের জন্য বড় অনুপ্রেরণা। তাঁর ওপরই আমাদের মাঝমাঠের দায়িত্ব এবং তাঁর জন্যই মাঝমাঠ ভালো করছে। একজন নেতার ভূমিকা পালন করছে সে। কঠোর পরিশ্রম করছে। তাঁকে সতীর্থ হিসেবে পাওয়াটা সৌভাগ্যের ব্যাপার।’

কলকাতা মোহামেডান তাদের পুরোনো চার বিদেশির মধ্যে ছেঁটে ফেলেছে ঘানার মিডফিল্ডার মোহাম্মাদ ফাতাও এবং নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার রাফায়েল অনব্রোকে। তবে তাদের খেলোয়াড় তালিকায় নিজের নামটি উজ্জ্বলই করে রেখেছেন মাঝমাঠের নেতা জামাল ভূঁইয়া।