রক্ষণভাগই ডোবাল রিয়ালকে

ঘরের মাঠে আলাভেসের কাছে হেরে বসেছে রিয়ালছবি: রয়টার্স

রক্ষণভাগ ফর্মে না থাকলে দলের যে কী দুর্দশা হয়, হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদ। লিগের ম্যাচ কীভাবে জিততে হয়, গতবারের লিগ চ্যাম্পিয়নরা এবার যেন হুট করে ভুলে গিয়েছে। আলাভেসের বিপক্ষে গত রাতের কথাই ধরুন, ২-১ গোলে হেরেছে জিনেদিন জিদানের দল। এই নিয়ে গত তিন লিগ ম্যাচে দুবার হেরে বসল তারা, ড্র করেছে বাকিটায়।

শেষ দিকে কাসেমিরোর গোল কাজে আসেনি
ছবি: রয়টার্স

চ্যাম্পিয়নস লিগে কদিন আগেই ইন্টার মিলানকে হারিয়ে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। কিন্তু কিসের কী? লিগ ফিরতে না ফিরতেই আবারও সে ছন্নছাড়া মাদ্রিদ। আর তাদের ছন্নছাড়া খেলার পেছনে এই ম্যাচেও ভূমিকা রেখেছে রক্ষণভাগ। কয়েক সপ্তাহ আগে ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে ৪-১ গোলে হারার ম্যাচেও রক্ষণভাগের হতোদ্যম দশাটা চোখে পড়েছিল। চার গোলের প্রতিটি কোনো না কোনো রক্ষণ-তারকার ভুলে খেয়েছিল রিয়াল। এই ম্যাচেও তা–ই। এবার আলাভেসের দিকে ‘সাহায্যের হাত’ বাড়িয়ে দিলেন বেলজিয়ান গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া ও স্প্যানিশ ডিফেন্ডার নাচো ফার্নান্দেস। রিয়ালের এই বদান্যতা আলাভেস গ্রহণ না করে থাকে কী করে? তারাও জিতেছে ২-১ গোলে। ম্যাচের শেষ দিকে ব্রাজিলের মিডফিল্ডার কাসেমিরো গোল করলেও তা শুধু ব্যবধান কমানোরই কাজ করেছে, কোনো পয়েন্ট এনে দেয়নি রিয়ালকে।

রিয়ালের মাঠেই হয়েছে খেলাটা। তবে হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটের কারণে মূল একাদশে ছিলেন না অধিনায়ক সের্হিও রামোস, পর্যাপ্ত ফিটনেস ছিল না তাঁর। রামোস না থাকলে আর মার্সেলো থাকলে রিয়ালের রক্ষণে হাজারো ফুটো বেরিয়ে পড়ে, এ ম্যাচেও তা দেখা গেছে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আলাভেস আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে গেছে। ম্যাচের শুরুতেই পিছিয়ে পড়ে রিয়াল। আলাভেসের স্প্যানিশ ডিফেন্ডার ভিক্তর লাগার্দিয়ার হেড আটকাতে গিয়ে হাত লাগিয়ে বসেন নাচো। ব্যস, পেনাল্টি! সাবেক ওয়েস্ট হাম তারকা লুকাস পেরেজের সে পেনাল্টি থেকে গোল করতে সমস্যা হয়নি মোটেও।

গোল খাওয়ার পরেও রিয়ালের খেলা দেখে মনে হয়নি যে দ্রুত সমতায় ফেরা প্রয়োজন। উল্টো ২৩ মিনিটে আরেকটা গোল খেতে খেতে বেঁচে যায় তারা। লুকাস ভাজকেজকে বোকা বানিয়ে রিয়ালের ডি-বক্সে ঢুকে পড়া পেরেজ চিপ করে গোল করতে চান, কিন্তু আগুয়ান গোলরক্ষক কোর্তোয়া বাঁ হাত দিয়ে সেই শট সেভ করে ক্ষণিকের জন্য নায়ক হয়ে যান।

কিন্তু বেশিক্ষণ নায়ক থাকা হয়নি কোর্তোয়ার। বেলজিয়ান এই গোলরক্ষকের শিশুতোষ ভুলের সুযোগ নিয়ে আলাভেসকে আরও এগিয়ে দেন নিউক্যাসল ইউনাইটেডের সাবেক স্ট্রাইকার হোসেলু। ফরাসি ডিফেন্ডার রাফায়েল ভারানের ব্যাকপাসটা বেশ ভালোই আয়ত্তে এনেছিলেন কোর্তোয়া, কিন্তু ঝামেলা বাধে যখন দুপাশের দুই সেন্ট্রাল ডিফেন্ডারকে পাস না দিয়ে মাঝমাঠে থাকা রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার কাসেমিরোকে পাস দিতে যান। কাসেমিরো পর্যন্ত যেতে পারেনি বল, তার আগেই বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গোল করে বসেন হোসেলু। ম্যাচের একদম শেষ দিকে স্প্যানিশ স্ট্রাইকার মারিয়ানো দিয়াসের এক শট গোললাইন থেকে ফিরিয়ে দেন নিউক্যাসলের সাবেক সেন্টারব্যাক ফ্লোরাঁ লেজুয়েঁ। তিন মিনিট পর কাসেমিরো যদিও গোল করেন, তা রিয়ালকে পয়েন্ট এনে দিতে পারেনি। এর কিছুক্ষণ পরেই নিশ্চিত হয়ে যায়, ২০ বছর পর রিয়ালকে তাদের মাঠেই হারানোর স্বাদ পাচ্ছে আলাভেস।

আবারও চোট পেয়ে মাঠ ছেড়েছেন হ্যাজার্ড
ছবি: রয়টার্স

রিয়ালের হারের স্বাদটা আরও তেতো হয়েছে এদেন হ্যাজার্ডের। প্রথমার্ধেই এই বেলজিয়ান উইঙ্গার মাঠ ছেড়ে উঠে যান, তাঁর জায়গায় নামানো হয় ব্রাজিলের রদ্রিগোকে। এই হারের পর ১০ ম্যাচে পাঁচ জয় আর দুই ড্র নিয়ে লিগ তালিকার চতুর্থ স্থানে আছে রিয়াল মাদ্রিদ। বার্সেলোনার অবস্থা আরও খারাপ। আট ম্যাচ খেলে ১১ পয়েন্ট নিয়ে তারা আছে ১৪ নম্বরে।