তিন তারকার হালচাল
রোনালদো-নেইমার হাসিখুশি, শুধু মেসিরই মন খারাপ
ইউরোতে দুর্দান্ত শুরু রোনালদোর পর্তুগালের, কোপায় জয়ে শুরু নেইমারের ব্রাজিলেরও। কিন্তু মেসির গোলের পরও হতাশ আর্জেন্টিনা।
বিশ্বকাপ নয়, তবু প্রায় বিশ্বকাপের মতোই উন্মাদনা। ইউরোপের ১১টি দেশ আর ব্রাজিলে চলছে ইউরোপ ও আমেরিকার ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। সেই লড়াইয়ে সবার দৃষ্টিটা বেশি করে পড়ছে এই তিন তারকার দিকেই—
খুশিতেই কাটছে নেইমারের দিনকাল। জয় দিয়ে কোপা আমেরিকা শুরু করেছে তাঁর দল ব্রাজিল। তিনি গোল করেছেন, করিয়েছেন। যে দু–একটা সুযোগ নষ্ট করেছিলেন, সেগুলো আর গত রোববার ভেনেজুয়েলার সঙ্গে ৩-০ গোলের জয়ের পর মনে থাকার কথা নয়। তখন তো উদ্যাপনের সময়! আগামীকাল ভোরে নেইমার যখন ব্রাজিলের জার্সি গায়ে আবার মাঠে নামবেন, প্রতিপক্ষ পেরুও মাথায় রাখবে—এই লোকটাকে আটকাতে না পারলে তাদের কোনো আশা নেই।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো আরও বেশি খুশি। হাঙ্গেরির বিপক্ষে পরশু গোল তিনিও নষ্ট করেছেন এক-আধটা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা যে একেবারেই রোনালদোময়! জোড়া গোল করেছেন, যার প্রথমটা দিয়ে পেরিয়ে গেছেন ইউরোর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গোলের মালিক মিশেল প্লাতিনিকে, পরেরটা দিয়ে চলে গেছেন দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সবচেয়ে বেশি গোলের মালিক ইরানের আলী দাইয়ির (১০৯টি) আরেকটু কাছে। ইউরোয় ১১ গোলের মালিক রোনালদোর এখন পর্তুগালের হয়ে গোল ১০৬টি। পর্তুগাল অধিনায়কের রেকর্ডের রাতে তাঁর দলও ম্যাচ জিতেছে ৩-০ গোলে। ড্রেসিংরুম থেকে হোটেলে ফিরে যে বেশ বড়সড় উদ্যাপন হয়েছে, তা অনুমান করাই যায়। ১৯ জুন জার্মানির বিপক্ষে ম্যাচে রোনালদো নামবেন আরও দারুণ কিছু করার প্রেরণা নিয়ে, ফুরফুরে মেজাজে।
শুধু লিওনেল মেসির মনটাই কি একটু খারাপ? গোল তিনিও করেছেন। গত সোমবার চিলির বিপক্ষে ফ্রি-কিক থেকে বাঁক খাওয়ানো শটে করা তাঁর গোলটা যদি এবার কোপা আমেরিকা শেষে সেরা গোলের তালিকায় থাকে, বিস্ময়ের কিছু হবে না। কিন্তু সেই গোলেও যে জিততে পারেনি মেসির দল আর্জেন্টিনা, ম্যাচ শেষ হয়েছে ১-১ সমতায়। আর দল না জিতলে নিজে যত সুন্দর গোলই করুন, যত ভালোই খেলুন, কী লাভ! ব্যালন ডি অঁর তো মেসির অনেক আছে, নেই তো আর্জেন্টিনার হয়ে একটা ট্রফি। দল না জিতলে সেই ট্রফি আসবে কী করে!
রোনালদোর দল যেদিন আবার মাঠে নামবে, সেদিন সকালেই মেসির আর্জেন্টিনাও আবার নামবে উরুগুয়ের বিপক্ষে। সেদিন মেসিকে নামতে হবে অনেক প্রশ্নের উত্তর মেলাতে। সবচেয়ে বড় প্রশ্নটা অবশ্য ওই ম্যাচ ছাপিয়ে পুরো
কোপা নিয়েই—এবার কি পারবেন?
ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স-জার্মানি-পর্তুগাল, মেসি-রোনালদো-নেইমারদের নিয়ে ফুটবলের এই রোমাঞ্চকর দিনরাতগুলো আসে আসলে চার বছর পর পর, বিশ্বকাপের সময়ে। তবে ২০১৬ সাল থেকে ইউরো ও কোপা প্রায় একই সময়ে হচ্ছে বলে সেই সময়েও তাই প্রায় বিশ্বকাপের আমেজ থাকে। আর এবার তো বাড়তি আকর্ষণ আরও অনেক কারণে।
৩৩ বছর বয়সী মেসির এবারই সম্ভবত শেষ কোপা। ৩৫-এর রোনালদোরও হয়তো শেষ ইউরো। কিন্তু জাতীয় দলের জার্সিতে মেসির ভান্ডার যেমন একেবারেই শূন্য, রোনালদোর তেমন নয়। সেখানে সর্বশেষ ইউরোর ট্রফিটাই আছে। সমকালীন ফুটবল ছাপিয়ে নিজেদের সর্বকালের সেরাদের দলে নিয়ে যাওয়া এই দুই তারকার লক্ষ্যটাও তাই ভিন্ন। মেসি চাইবেন, দেশের হয়ে অন্তত কিছু একটা জিতে নিজের ছাপ রাখতে। ২০২২ বিশ্বকাপে তো পরীক্ষাটা আরও বড়, এখানেই বরং চ্যালেঞ্জ কিছুটা কম। ওদিকে রোনালদো চাইবেন নিজের শেষ ইউরোটাও কোনো না কোনোভাবে রাঙিয়ে যেতে। শুরুটা অবশ্য সেভাবেই হয়েছে পর্তুগিজ মহাতারকার।
এ দুজনের উত্তরসূরি হিসেবে একসময় যাকে ভাবা হতো, সেই নেইমার অবশ্য জাতীয় দলের জার্সিতে মেসির মতোই রিক্ত। বিশ্বকাপ জেতেননি, ২০১৯ সালে ব্রাজিল যখন কোপা জেতে, তিনি তখন চোটের কারণে দলের বাইরে।
নেইমারের একটা সুবিধা, বয়স তাঁর পক্ষে। ২৯-এর ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড মেসি-রোনালদোদের বয়সে যেতে যেতে আরও কোপা পাবেন, পাবেন বিশ্বকাপও। তবে এবার পাকেচক্রে কোপার স্বাগতিক হয়ে যাওয়া ব্রাজিল শিরোপা ধরে রাখার জন্য সর্বস্ব দিয়েই লড়বে এবং সফল হলে হাসিটা সবচেয়ে চওড়া থাকবে নেইমারের মুখেই।
মেসি-রোনালদোর উত্তরসূরি হিসেবে এখন নেইমারের চেয়ে যাকে এগিয়ে মনে হচ্ছে, সেই এমবাপ্পের অবশ্য এত কিছু ভাবার দরকারই নেই। মাত্র ১৯ বছর বয়সেই বিশ্বকাপ জিতে গেছেন, ২২ বছর বয়সে এসে এবার পেয়ে গেছেন ইউরো জেতারও সুযোগ। জার্মানিকে হারিয়ে পরশু ইউরোতে অসাধারণ শুরু করেছে এমবাপ্পের দল ফ্রান্স। শেষটা যদি শুরুর মতো না হয় ফ্রান্সের, তা–ও চিন্তা নেই এমবাপ্পের।
আরও গোটাকয় ইউরো আর বিশ্বকাপ তো তাঁর সামনে পড়েই আছে!