লিভারপুলকে ধসিয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে গার্দিওলার সিটি

সিটির গুন্দোয়ান বল জালে জড়াচ্ছেন। ম্যাচে দুই গোল করেছেন গুন্দোয়ান।
ছবি: রয়টার্স

ম্যানচেস্টার সিটিই শেষ পর্যন্ত লিভারপুলের শিরোপা ধরে রাখার স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিয়েছে? নাকি লিভারপুলেরই গোলকিপার আলিসনের দুঃস্বপ্নের দুটি মুহূর্ত প্রায় নিশ্চিত করে দিল, এই মৌসুমে আর শিরোপা ধরে রাখা হবে না ইয়ুর্গেন ক্লপের লিভারপুলের?
দুটিই হয়তো সত্যি। কয়েক ম্যাচ ধরেই পুরোনো দুর্ধর্ষ ফর্মে ফেরা ম্যানচেস্টার সিটি আজ অ্যানফিল্ডেও দারুণ খেলেছে। পাশাপাশি পেপ গার্দিওলার দলকে সাহায্য করেছে তিন মিনিটের ব্যবধানে লিভারপুলের ব্রাজিলিয়ান গোলকিপার আলিসনের ভয়ংকর দুটি ভুল। দুটি মিলিয়েই আজ লিভারপুলের মাঠ অ্যানফিল্ডে ৪-১ গোলে জিতেছে ম্যানচেস্টার সিটি। প্রথমার্ধে পেনাল্টি করে ‘খলনায়ক’ হওয়ার আশঙ্কায় থাকা ম্যান সিটি মিডফিল্ডার ইলকায় গুন্দোয়ান দ্বিতীয়ার্ধে জোড়া গোল করে প্রায়শ্চিত্ত করেছেন দারুণভাবেই।

চোখধাঁধানো শটে সিটির চতুর্থ গোলটি করেছেন ফিল ফোডেন।
ছবি: রয়টার্স

অনানুষ্ঠানিকভাবেই হোক, এই হারে লিভারপুলের শিরোপাস্বপ্নের বিসর্জন হয়ে গেছে। ২৩ ম্যাচে ৪০ পয়েন্ট নিয়ে লিভারপুল পয়েন্ট তালিকার চার নম্বরে আছে, এক ম্যাচ কম খেলেই শীর্ষে থাকা সিটি ১০ পয়েন্ট এগিয়ে লিভারপুলের চেয়ে। দুই নম্বরে থাকা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের চেয়েও এক ম্যাচ কম খেলে সিটির ৫ পয়েন্ট এগিয়ে থাকা বলে, চার মৌসুমে তৃতীয় লিগ শিরোপা থেকে গার্দিওলার সিটিকে বঞ্চিত করা অন্য যেকোনো দলের জন্য প্রায় অসাধ্যসাধনই হবে।

এই কদিন আগেও অ্যানফিল্ড ছিল লিভারপুলের ‘দুর্গ।’ ২০১৭ সালের এপ্রিলে ক্রিস্টাল প্যালেসের কাছে হারের পর টানা ৬৮ ম্যাচ অ্যানফিল্ডে অপরাজিত ছিল সালাহ-মানে-ফিরমিনোদের দল। কিন্তু গত কদিনে সেই অ্যানফিল্ডই যেন লিভারপুলের অচেনা হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে অ্যানফিল্ডে টানা তিনটি লিগ ম্যাচ হারল লিভারপুল—৫৮ বছরে এই প্রথম! আর অ্যানফিল্ডে লিগ ম্যাচে জয়ের দেখা পাচ্ছে না পাঁচ ম্যাচ ধরে!

ভার্জিল ফন ডাইক, জো গোমেজ ও জোয়েল মাতিপ—লিভারপুলের প্রধান তিন সেন্টারব্যাকই চোটে বলতে গেলে পুরো মৌসুমের জন্য ছিটকে গেছেন। এরপর থেকেই ভুগছে লিভারপুল। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আক্রমণভাগের গোল করার ব্যর্থতা।

সব মিলিয়ে লিগে সর্বশেষ ৮ ম্যাচে মাত্র ২ জয় লিভারপুলের, হার ৩টি।
আজ প্রথমার্ধেও অবশ্য লিভারপুল এত বড় ব্যবধানে হারবে, তা কল্পনা করা যায়নি। গোলশূন্য প্রথমার্ধে দুই দলই অল্পবিস্তর সুযোগ পেয়েছে, তবে সবচেয়ে বড় সুযোগটা পেয়েছে সিটিই। ৩৭ মিনিটে লিভারপুল বক্সে সিটির রাহিম স্টার্লিংকে ফাউল করেন ফাবিনিও, কিন্তু পেনাল্টি পেয়েও সেটি কাজে লাগাতে পারেননি গত কয়েক ম্যাচে দারুণ ছন্দে থাকা সিটি মিডফিল্ডার ইলকায় গুন্দোয়ান।

কিন্তু বিরতিতে গার্দিওলা দলকে কী শিখিয়ে-পড়িয়ে মাঠে নামিয়েছেন, কে জানে! দ্বিতীয়ার্ধে নেমেই ভয়ংকর সিটি। অন্যদিকে লিভারপুল গোলকিপার আলিসন কাটালেন দুঃস্বপ্নের ৪৫ মিনিট। ৪৯ মিনিটে গুন্দোয়ানের প্রায়শ্চিত্তের শুরু। ফিল ফোডেনের শট আলিসন ঠেকিয়েছিলেন, কিন্তু বল এসে পড়ে পোস্টের সামনেই থাকা গুন্দোয়ানের পায়ে। লিগে সর্বশেষ ৯ ম্যাচে এটি ছিল জার্মান মিডফিল্ডারের ৭ম গোল। সংখ্যাটা ম্যাচ শেষে ৯ ম্যাচে ৮ গোল।

পিছিয়ে পড়ে তেড়েফুঁড়ে খেলতে থাকা লিভারপুল সমতায় ফেরে ৬৩ মিনিটে। বক্সে লিভারপুলের মো সালাহর হাত ধরে টান দেন সিটির ডিফেন্ডার রুবেন দিয়াজ। পেনাল্টিটা দারুণভাবে কাজে লাগিয়ে লিভারপুলকে সমতায় ফেরান সালাহই। তখন মনে হচ্ছিল, ম্যাচটাতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই-ই হবে!

গুন্দোয়ানের গোল, আর হতাশ হয়ে মাটিতে বসে লিভারপুল গোলকিপার আলিসন। ম্যাচে আলিসনের প্রথম ভুলে হয়েছে সেই গোল। পরে আরেকটি ভুল করেছেন লিভারপুল গোলকিপার।
ছবি: রয়টার্স

কিন্তু আলিসনের ওপর কী যেন ভর করল! ৭৩ মিনিটে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে দুবার দিলেন বিপজ্জনক দুটি ভুল পাস। প্রথমে বল তাঁর পায়ে আটকে গেলেও কোনোমতে সেটিকে ডান দিকে ফাবিনিওর দিকে পার করে দেন আলিসন, ফাবিনিও অনেকটা দৌড়ে এসে বল মাঝমাঠের দিকে উড়িয়ে মারেন। সেখান থেকে আবার বল জর্ডান হেন্ডারসন হয়ে আলিসনের কাছে আসে, বল দখলে দারুণভাবে ঝাঁপিয়ে পড়া সিটির খেলোয়াড়দের পার করে লেফটব্যাক অ্যান্ডি রবার্টসনের দিকে বলটা দিতে চেয়েছিলেন আলিসন, কিন্তু পাস ঠিকমতো হলো না। লিভারপুল বক্সের বাইরে বল পান সিটি মিডফিল্ডার ফিল ফোডেন। ইংলিশ তরুণ মিডফিল্ডার দারুণভাবে দুই লিভারপুল ডিফেন্ডারকে ঠেকিয়ে বলটা যখন বাড়ান গুন্দোয়ানের দিকে, পোস্টের সামনেই দাঁড়িয়ে থাকা গুন্দোয়ানের গোল করতে তেমন কসরত করতে হলো না!

তিন মিনিট পর আবার আলিসনের ভুল পাস! আবারও বক্সের সামনে তাঁর পাস গেল সিটি খেলোয়াড়ের পায়ে, এবার বল গেল সিটির ফরোয়ার্ড বার্নার্দো সিলভার পায়ে। তাঁর দারুণ বল বলতে গেলে গোললাইন থেকে হেডে জালে জড়ান লিভারপুলেরই সাবেক খেলোয়াড় রাহিম স্টার্লিং। লিভারপুল থেকে ম্যান সিটিতে যাওয়ার পর এই প্রথম অ্যানফিল্ডে গোল পেলেন স্টার্লিং।

লিভারপুলের জয়ের স্বপ্ন সেখানেই শেষ। সিটি তখন মনের আনন্দে টিকি-টাকা খেলছে। খেলতে খেলতেই ৮৩ মিনিটে চোখধাঁধানো এক বুলেট গতির শটে সিটির চতুর্থ গোলটি করেন ফোডেন। চাইলে সেটিতেও আলিসনের ভুলের দায় দেখা যায়।

ব্রাজিলিয়ান গোলকিপারের দুঃস্বপ্নের রাতটা সিটির জন্য একটা মাইলফলকের। ২০০৩ সালের মে মাসের পর এই প্রথম অ্যানফিল্ডে জিতল সিটি। একটা বড় বাধা পার করলেন গার্দিওলাও। সিটি কোচ হওয়ার পর এই প্রথম লিভারপুলকে তাদেরই মাঠে হারানোর স্বাদ পেলেন স্প্যানিশ কোচ।
হয়তো স্বাদ পেতে শুরু করেছেন শিরোপারও।