শূন্য রানে ৪ উইকেট, টেস্ট ক্রিকেটে ওই একবারই

বিখ্যাত সেই স্কোরকার্ডটুইটার

০/১
০/২
০/৩
০/৪

বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে? ঠিক আছে, বুঝিয়ে বলা যাক। বাঁয়ের সংখ্যাটা রান, ডানেরটা উইকেট। মানেটাও পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার কথা। শূন্য রানেই প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ উইকেট হারিয়ে একটা দলের রান ৪ উইকেটে ০।

দুঃস্বপ্নের মতো শুরু, এটা বোধ হয় না বললেও চলছে। ক্রিকেটের ম্যাচ রিপোর্টে এই ‘দুঃস্বপ্নের মতো শুরু’ কথাটা নিশ্চয় আপনি অনেকবারই পড়েছেন। তবে ‘দুঃস্বপ্নের মতো শুরু’ বলতে আসলে কী বোঝায়, তা জানতে আপনাকে ১৯৫২ সালের ইংল্যান্ড সফরে যাওয়া ভারতীয় দলের কারও সঙ্গে কথা বলতে হবে। টেস্ট ক্রিকেটে শূন্য রানে ৪ উইকেট (ভুল পড়েননি, শূন্য রানে ৪ উইকেটই!) হারিয়ে ফেলার এই ‘রেকর্ড’ যে শুধু সেই দলেরই আছে।

রানের ঘরে শূন্য আর উইকেটের ঘরে ৪—ওপরের ছবিটি টেস্ট ইতিহাসে অনন্য সেই স্কোরবোর্ডের
আইসিসি

টেস্ট ক্রিকেট শূন্য রানে ৩ উইকেট পড়তে দেখেছে আরও চারবার, যার একটিতে ভুক্তভোগী দলের নাম বাংলাদেশ। এটি ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে। শূন্য রানে ৩ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর যেখানে একটু বিরতি দিয়ে চতুর্থ উইকেটটি পড়েছিল ৪৬ রানে। বাকি যে তিনবার, তাতে চতুর্থ উইকেট পড়েছে ১২, ১৩ ও ৫৩ রানে। শূন্য রানেই প্রথম ৪ উইকেট পড়ে যাওয়ার ঘটনা ওই একবারই। ১৯৫২ সালের ৭ জুন, অর্থাৎ ৭১ বছর আগে এই দিনেই।

আরও পড়ুন

এই দুঃস্বপ্নের সঙ্গে বিজয় হাজারের ভারতীয় দলের পরিচয় লিডসের হেডিংলিতে সিরিজের প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে। রানের ঘরে শূন্য আর উইকেটের ঘরে ৪—ওপরের ছবিটি টেস্ট ইতিহাসে অনন্য সেই স্কোরবোর্ডের। পত্রপত্রিকায় সবচেয়ে বেশিবার ছাপা হওয়া স্কোরকার্ডও সম্ভবত এটিই। ইনিংসের ১৪ বলের মধ্যে স্কোরবোর্ডকে এমন চেহারা দেওয়ার মূলে ২১ বছর বয়সী এক তরুণ, ওই টেস্টেই যাঁর অভিষেক। নাম ফ্রেড ট্রুম্যান। টেস্ট ক্রিকেটে ৩০০ উইকেট নেওয়া প্রথম বোলার।

ওই ৪ উইকেটের ৩টিই নিয়েছিলেন ট্রুম্যান, টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর প্রথম ৮ বলেই! ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের শবযাত্রার শুরু পংকজ রায়কে দিয়ে। নতুন বলই হাতে পেয়েছিলেন ট্রুম্যান, ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই হুক করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন পংকজ। পরের ওভারে অ্যালেক বেডসারের শিকার দত্তাজিরাও গায়কোয়াড়। দ্বিতীয় ওভার করতে এসে প্রথম ২ বলেই মাধব মন্ত্রী ও বিজয় মাঞ্জরেকারকে বোল্ড করে স্কোরবোর্ডের এমন চেহারা বানিয়ে দেন ট্রুম্যান।

ট্রুম্যানের হ্যাটট্রিক এবং শূন্য রানে ৫ উইকেটও হয়ে যাচ্ছিল প্রায়—‘হ্যাটট্রিক বল’টি অল্পের জন্য অধিনায়ক বিজয় হাজারের ব্যাটের কানা মিস করে।

টেস্ট ক্রিকেটে ৩০০ উইকেট নেওয়া প্রথম বোলার ফ্রেড ট্রুম্যান
আইসিসি

দুঃস্বপ্নের মতো এমন শুরুর পর ভারতের ইনিংস কত রানে শেষ হয়েছিল বলে আপনার ধারণা? ভারত করেছিল ১৬৫। শূন্য রানে ৪ উইকেটের পর এটাকে তো ‘পাহাড়প্রমাণ রান’ই বলতে হয়।

আরও পড়ুন

শূন্য রানে ৪ উইকেটের শিকার ৪ ব্যাটসম্যানের নামগুলো আবার দেখুন। তিনজনের মধ্যে অদ্ভুত একটা মিল খুঁজে পাবেন। পংকজ রায়, দত্তাজিরাও গায়কোয়াড় ও বিজয় মাঞ্জরেকার—তিনজনেরই ছেলেও টেস্ট ক্রিকেট খেলেছেন। ছেলেদের নামও হয়তো আপনি শুনে থাকবেন—প্রণব রায়, অংশুমান গায়কোয়াড় ও সঞ্জয় মাঞ্জরেকার।

প্রথম ইনিংসে ৮ নম্বরে নেমে ১৩ রানে অপরাজিত থাকার ‘অপরাধে’ যে মাধব মন্ত্রীকে দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ নম্বরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তাঁরও এমন আরেকটা পরিচয় আছে। তাঁর ছেলে টেস্ট ক্রিকেট খেলেননি, তবে ভাগ্নে খেলেছেন। ভাগ্নের নাম? সুনীল গাভাস্কার।