সবাইকে পাশেই পাচ্ছেন স্টোকস

চারটি ছক্কা খেয়ে বিধ্বস্ত বেন স্টোকস। তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন অধিনায়ক মরগান। ছবি: এএফপি।
চারটি ছক্কা খেয়ে বিধ্বস্ত বেন স্টোকস। তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন অধিনায়ক মরগান। ছবি: এএফপি।

শিরোপা জিততে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শেষ ৬ বল থেকে দরকার ১৯ রান। লক্ষ্যটা অসম্ভব না হলেও কঠিন তো বটেই। আগের দুই ওভারে যেখানে নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে স্যামুয়েলস ও ব্রাফেটকে মোটামুটি বন্দীই করে রেখেছিলেন ইংলিশ বোলাররা, সেখানে শেষ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৯ রান যে খুব সহজেই করে ফেলবে, এমনটা ভাবার লোক কিন্তু খুব বেশি ছিল না।
শেষ ওভারটা করতে ইংল্যান্ড অধিনায়ক এউইন মরগান বল তুলে দিলেন বেন স্টোকসের হাতে। টেলিভিশন ধারাভাষ্যকার ডেভিড লয়েড দৃশ্যটা দেখে দারুণ উচ্ছ্বসিত। বলেই ফেললেন, সিদ্ধান্তটা চমৎকার হয়েছে। কেন বলবেন না? স্টোকসকে যে বলা হয় ‘ডেথ ওভারের রাজা।’ সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলে স্টোকস ১৬-২০ ওভারে বোলিংয়ের সময় প্রচণ্ড কৃপণ হয়ে যান। এই সময় তাঁর ওভারগুলোতে ‘ডট বলে’র সংখ্যা থাকে প্রায় ৫০ শতাংশ!
মরগান কি একটু নিশ্চিন্তই ছিলেন স্টোকসের হাতে বল তুলে দিয়ে। কিন্তু কিসের কী! পরের দুই মিনিটেই সব উচ্ছ্বাস হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। স্টোকসের প্রথম চারটি বল থেকেই ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান কার্লোস ব্রাফেট তুলে নিলেন ২৪ রান। পরপর চারটি বিশাল ছক্কা! স্টোকসের চেহারা দেখে তখন প্রবল ইংরেজ-বিরোধীরও মায়া হওয়ার কথা! একবার ভাবুন তো, কী গভীর কষ্ট বুকে চেপে স্টোকস কাল বিদায় জানিয়েছেন ইডেন গার্ডেনকে! এই মাঠটিকে কী কোনোদিন ভুলতে পারবেন স্টোকস? সারাজীবন কী তাঁকে তাড়িয়ে বেড়াবে না কলকাতার দুঃসহ স্মৃতি!
স্টোকস অবশ্য সবাইকে পাশেই পাচ্ছেন। অধিনায়ক মরগান রীতিমতো আগলেই রাখছেন তাঁকে, ‘আমরা জয়ের আনন্দ যদি সবাই ভাগাভাগি করে নিতে পারি, তাহলে স্টোকসের দুঃখটাও ভাগ করে নিচ্ছি। বেনের তো কোনো দোষ দেখি না আমি। আমার মনে হয় না আমরা বোলিং-ব্যাটিং-ফিল্ডিংয়ে কোনো ভুল করেছি। আমি আমার খেলোয়াড়দের নিয়ে গর্বিত। ক্রিকেট খেলাটাই এমন। মাঝে-মধ্যে বড্ড নিষ্ঠুর হয়ে ওঠে।’
মরগানের মতোই স্টোকসের পাশে দাঁড়াচ্ছেন সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটাররা। কেভিন পিটারসেন তাঁর টুইটবার্তায় বলেছেন, ‘এটা কোনো ব্যাপারই নয়। একটা দুর্ঘটনা। এমন দুর্ঘটনা হতেই পারে। যেসব খেলোয়াড়েরা চাপের মধ্যে লড়াই করে, তাদের সবার ক্ষেত্রেই এমনটা ঘটার ইতিহাস আছে। স্টোকস, তুমি এখনো একজন তারকাই।’
মাইকেল ভন বলেছেন, ‘শেষ ওভারে অমন চাপের মুখে বল হাতে তুলে নেওয়াটাই তো বীরত্ব।’
সাবেক প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান হার্শেল গিবসের মতে, ‘এটা শেখারই অংশ। স্টোকসের সবকিছু শেষ হয়ে যায়নি। ক্রিকেটের সব ফরম্যাটে সেরা হওয়ার সবকিছুই ওর মধ্যে আছে।’
স্টোকস নিজে অবশ্য এই সমর্থনে বেশ আপ্লুত। শেষ ওভারটিকে ‘হতাশাজনক’ বললেও নিজের টুইটবার্তায় ‘পাশে থাকার জন্য’ সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি ইংল্যান্ডের পক্ষে খেলতে পেরে জানিয়েছেন নিজের গর্বের অনুভূতি।