আঙুল তুলে একবার আউট দেখালেন শ্রীনিবাস চন্দ্রশেখরন, এরপর দিলেন রিভিউয়ের সঙ্কেত। টেলিভিশন রিপ্লেতে বাংলাদেশ দলের বিশ্লেষককে যতক্ষণে এমন করতে দেখা গেল, তার আগেই আল্ট্রা-এজ নিশ্চিত করেছে ‘ভুল’টা। ইবাদত হোসেনের বলে বাংলাদেশ রিভিউ নিলেই ফিরতে পারতেন এনক্রুমা বোনার। একটু পর আবার চন্দ্রশেখরন ল্যাপটপের পর্দায় নজর প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর। এবার নাজমুল হোসেন কী করছিলেন, সেটিই যেন বুঝতে চাচ্ছিলেন তাঁরা! খালেদ আহমেদের বলে ক্যাচ তুলেছিলেন বোনার, প্রথম স্লিপে থাকা নাজমুল বুঝেই উঠতে পারেননি সেটি!
দ্বিতীয় দিন সকালটা বাংলাদেশের জন্য কেটেছে ওপরের ওই দুই ঘটনার মতোই! সুযোগ এসেছে, তবে হেলায় সে সব হারিয়েছেন তাঁরা। বোনারকে অবশেষে ফেরাতে পেরেছেন সাকিব, তবে প্রথম সেশনে সাফল্য ওই একটিই। ৫৬ রানের লিড নিয়ে মধ্যাহ্নবিরতিতে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অধিনায়ক ক্রেগ ব্রাফেট পেয়েছেন ক্যারিয়ারের ২৬তম ও বাংলাদেশের বিপক্ষে চতুর্থ অর্ধশতক, তিনি অপরাজিত ৭৫ রানে। ক্রিজে তাঁর সঙ্গী জেরমাইন ব্ল্যাকউড ব্যাটিং করছিলেন ৯ রানে। সেশনে ১ উইকেট হারিয়ে স্বাগতিকেরা তুলেছে ৬৪ রান।
পেসাররা দ্বিতীয় দিন সকালে টেনে আনেন আগের দিনের পারফরম্যান্সই। তবে আগের দিনের ‘দুর্ভাগ্য’টা নিশ্চয়ই সঙ্গে আনতে চাননি ইবাদতরা! তবে হয়েছে সেটিই। ২ উইকেটে ৯৫ রানে দিন শুরু করা ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ব্যাটসম্যান ব্রাফেট ও বোনার সতর্ক ছিলেন বেশ, তবে ইবাদত-খালেদরা নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে তাদের চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন বারবার।
৫৩তম ওভারে বোনারকে বেশ অস্বস্তিতে ফেলেন ইবাদত। অফ স্টাম্পের বাইরে থেকে সিমে পড়া ভেতরের দিকে ঢোকা বলে পরাস্ত হলেও বোনার বেঁচে যান একটু উচ্চতায় প্যাডে আঘাত করার ফলে, পরে একটা আলগা শট খেললেও বাঁচেন আরেকবার। অবশ্য সে ওভারের শেষ বলেই আউট হতে পারতেন, ইবাদতের দারুণ ডেলিভারিতে ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটকিপার নুরুলের হাতে যায় বল। তবে সেভাবে আবেদনই করেননি কেউ! একটু পরই রিপ্লেতে চন্দ্রশেখরনের ওই ‘হতাশা’!
ইবাদতের পরের ওভারে আসে দিনের প্রথম বাউন্ডারি, মারেন ব্রাফেট। ওই চারেই প্রথম ইনিংসে লিডের দেখা পায় স্বাগতিকেরা। এরপর খালেদ অবশ্য প্রায় ফিরিয়েই দিয়েছিলেন বোনারকে। তবে এবার নাজমুলের ভুলের খেসারত দিতে হয় বাংলাদেশকে।
প্রথম ঘণ্টায় বাংলাদেশের এমন সুযোগ হাতছাড়ার মিছিলের মধ্যে অর্ধশতকটি পান ব্রাফেট। পূর্ণমেয়াদে অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর দারুণ ফর্মটা চলছেই তাঁর। সকালে প্রথম ১৪ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তোলে ৩৮ রান, যা আগের দিনের তুলনায় রান তোলার গতির দিক দিয়ে একটু বেশিই।
পানি-পানের বিরতির পরই অবশ্য বাংলাদেশকে উদ্যাপনের উপলক্ষ্য এনে দেন সাকিব। দুইবার জীবন পাওয়ার পর অবশেষে বোনার হার মানেন সাকিবের আর্ম বলে। দারুণ সেট-আপে তাঁকে বোল্ড করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ঠিক আগের বলটি কাছাকাছি জায়গায় পড়ে বেরিয়ে গেলেও এ ডেলিভারি ঢোকে ভেতরের দিকে। বোনার ৯৬ বলে করেন ৩৩ রান।
তবে সে উইকেট আদতে হয়ে থেকেছে ‘বিচ্ছিন্ন’ ঘটনাই। একটু পর ‘অভাগা’ বোলারের তালিকায় নাম লেখান মিরাজ। তাঁর বলে শর্ট লেগে ব্রাফেট ক্যাচ তুললেও প্রতিক্রিয়া দেখাতে বেশ দেরি করে ফেলেন মাহমুদুল। বিরতির আগ দিয়ে ব্ল্যাকউডের কানায় লেগে উঠেছিল আরেকটি ক্যাচ, তবে স্লিপে নাগাল পাননি লিটন দাস।