সুরিন্দর থেকে সাকিব

তাঁরা আলো ছড়িয়েছেন মাঠে, ব্যাটে কিংবা বলে। এশিয়া কাপের বিভিন্ন আসরের সেরা ক্রিকেটারদের নিয়ে লিখেছেন কামরুল হাসান

সুরিন্দর খান্না
সুরিন্দর খান্না

১৯৮৪, শারজা
সুরিন্দর খান্না

ভারতের হয়ে ১৯৭৯ বিশ্বকাপে খেলেছেন। তিন ম্যাচে ১৭ রান করে ছিটকে পড়েন দল থেকে। পাঁচ বছর পর ফেরেন এশিয়া কাপের প্রথম আসরে। শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের বিপক্ষে দুটি হাফ সেঞ্চুরিসহ মোট ১০৭ রান সুরিন্দর খান্নাকে এনে দিয়েছিল টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও। এশিয়া কাপের পর ওই বছরই এই উইকেটকিপার-ব্যাটম্যান আরও ৫টি ম্যাচ খেলেছেন ভারতের হয়ে, একবারও ব্যাট হাসেনি তাঁর। দিল্লির ওপেনার সেই যে দল থেকে বাদ পড়েন, ফেরা হয়নি আর কখনো।

১৯৮৬, শ্রীলঙ্কা
অর্জুনা রানাতুঙ্গা

গ্রুপ পর্ব ও ফাইনাল মিলিয়ে সেবার তিনটি ম্যাচ খেলেন অর্জুনা রানাতুঙ্গা। ম্যাচ-সেরা হতে পারেননি একটিতেও। তবে তিন ম্যাচে সবসুদ্ধ ১০৫ রান নিয়ে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী তিনিই। এর মধ্যে আছে ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫৫ বলে ৫৭ রানের দারুণ একটা ফিফটিও। শ্রীলঙ্কা চ্যামিপয়ন হওয়ায় টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার ওঠে রানাতুঙ্গার হাতেই। ফাইনালে হেরে কপাল পুড়ল তিন ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি পাকিস্তানের আবদুল কাদিরের।

দুবার করে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হয়েছেন অর্জুনা রানাতুঙ্গা ও নভজ্যোত সিং সিধু
দুবার করে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হয়েছেন অর্জুনা রানাতুঙ্গা ও নভজ্যোত সিং সিধু

১৯৮৮, বাংলাদেশ
নভজ্যোত সিং সিধু

চট্টগ্রামে বাংলাদেশের বিপক্ষে ফিফটি (৫০*) আর ঢাকার ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৮৭ বলে ৭৬ রান। দুটিতেই ম্যাচ সেরা নভজ্যোত সিং সিধু। গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কার কাছে একটা ম্যাচ হেরেছিল ভারত, সেটাতেও হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন ভারতীয় ওপেনার। এক সেঞ্চুরিসহ ১৯২ রান নিয়ে টুর্নামেটের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী পাকিস্তানের ইজাজ আহমেদ, সর্বোচ্চ উইকেট ভারতীয় সিপনার আরশাদ আয়ুবের (৯টি)। তবে আসর-সেরার পুরস্কারটা গেল চার ম্যাচে ৫৯.৬৬ গড়ে ১৭৯ রান করা সিধুর হাতেই।

১৯৯৫, শারজা
নভজ্যোত সিং সিধু

বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ৫১ বলে ৫৬ রানের দারুণ ইনিংস, কিন্তু ম্যাচ সেরা হয়ে গেলেন অলরাউন্ড পারফর্ম করা মনোজ প্রভাকর। পাকিস্তানের বিপক্ষে আবার হাফ সেঞ্চুরি, কিন্তু এবার দলই হেরে গেল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে নায়ক হয়ে গেলেন শচীন টেন্ডুলকার। ফাইনালে আবার প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা, কিন্তু এবারও অপরাজিত ৮৪ রান করে সিধু দেখলেন ম্যাচ-সেরার পুরস্কারটা আজহারউদ্দিনকে নিয়ে যেতে। তবে ভারতীয় ওপেনার টুর্নামেন্টজুড়ে এই ধারাবাহিকতার পুরস্কার পেলেন দ্বিতীয়বারের মতো এশিয়া কাপের টুর্নামেন্ট-সেরা হয়ে।

১৯৯৭, শ্রীলঙ্কা

অর্জুনা রানাতুঙ্গা

গ্রুপ পর্বে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো ১৫২ বলে অপরাজিত ১৩১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। বাংলাদেশের সঙ্গে হাফ সেঞ্চুরির পর ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে আবারও ৬৬ বলে ৬২। সব মিলিয়ে ১৯৯৭ এশিয়া কাপে চার ম্যাচে অর্জুনা রানাতুঙ্গার রান ১৩৬ গড়ে ২৭২, স্ট্রাইকরেট ৮৮.০২। শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক সেবার তাঁর দেশকে এনে দিলেন দ্বিতীয়বারের মতো এশিয়া কাপের শিরোপা। সুবাদে সিধুর পর দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসাবে  দ্বিতীয়বারের মতো টুর্নামেন্ট-সেরার স্বীকৃতি পেলেন রানাতুঙ্গা।

মোহাম্মদ ইউসুফ
মোহাম্মদ ইউসুফ

২০০০, বাংলাদেশ
মোহাম্মদ ইউসুফ

তখনো তিনি ইউসুফ ইয়োহানাই, মোহাম্মদ ইউসুফ হননি। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৮০, পরের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরি (১১২ বলে ১০০*), শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তৃতীয় ম্যাচে ৯০। অভাবনীয় কিছু না ঘটলে ইউসুফ টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হচ্ছেন, এটা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল গ্রুপ পর্ব শেষেই। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ফাইনালে পাকিস্তানি এই ব্যাটসম্যানের অবদান মাত্র ২৫ রানের। তবে তাতে পাকিস্তানের জয় আটকাল না, সার্বিক পারফরম্যান্সে ইউসুফকে ছাড়িয়ে যেতেও পারলেন না অন্য কেউ।

সনাৎ জয়াসুরিয়া
সনাৎ জয়াসুরিয়া

২০০৪, শ্রীলঙ্কা
সনাৎ জয়াসুরিয়া

গ্রুপে শ্রীলঙ্কার প্রতিপক্ষ ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত আর ভারত। জয়াসুরিয়া খেললেন কেবল আরব আমিরাতের বিপক্ষে, করলেন মাত্র ২১ রান। সুপার ফোরে পাকিস্তানের বিপক্ষে তাঁকে খুজে পাওয়া গেল না। কিন্তু বাংলাদেশ আর ভারতের সঙ্গে পর পর দুই সেঞ্চুরিতে যথারীতি সেই চিরচেনা জয়াসুরিয়া। সেই আসরের সর্বোচ্চ রান শোয়েব মালিকের, ৩১৬। কিন্তু পাঁচ ম্যাচে ৭৩.২৫ গড়ে ২৯৩ রান আর বল হাতে ৪ উইকেট—অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের কারণেই টুর্নামেন্ট-সেরা হলেন সনাৎ জয়াসুরিয়াই। |

অজন্তা মেন্ডিস
অজন্তা মেন্ডিস

২০০৮, পাকিস্তান
অজন্তা মেন্ডিস

এর আগের প্রতিটি এশিয়া কাপে টুর্নামেন্ট-সেরা হয়েছেন হয় কোনো ব্যাটসম্যান, নয়তো কোনো অলরাউন্ডার। ২০০৮ সালে অজন্তা মেন্ডিস সেই ধারা ভেঙে দিলেন। প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের কোনো আসরে সেরা ক্রিকেটার হলেন একজন বোলার। বাংলাদেশের বিপক্ষে ১০ ওভার বোলিং করেও উইকেট শূন্য ছিলেন। কিন্তু পরের চার ম্যাচে ১৭ উইকেট! এর মধ্যে ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ১৩ রানে ৬ উইকেট এখনো এশিয়া কাপের সেরা বোলিং পারফরম্যান্স। এক আসরের সর্বোচ্চ রান (৩৭৮) করেও তাই সেবার টুর্নামেন্ট-সেরা হতে পারেননি জয়াসুরিয়া।

শহীদ আফ্রিদি
শহীদ আফ্রিদি

২০১০, শ্রীলঙ্কা
শহীদ আফ্রিদি

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই তাঁর ব্যাটে ঝড় (৭৬ বলে ১০৯)। সেই ঝড় আরও তীব্র বাংলাদেশের বিপক্ষে (৬০ বলে ১২৪)। মাঝে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটাতেই শুধু একটু আগেভাগে আউট হয়ে গিয়েছিলেন শহীদ আফ্রিদি (২৫ বলে ৩২)। সব মিলিয়ে ৩ ম্যাচে ৮৮.৩৩ গড়ে ২৬৫ রান, স্ট্রাইকরেটও আফ্রিদিসুলভ—১৬৪.৫৯!  সঙ্গে বল হাতে ৩ উইকেট। দল ফাইনালে উঠতে না পারলেও ওই আসরে সেরার পুরস্কারটা উঠল সে সময়ের পাকিস্তান অধিনায়কের হাতে।

সাকিব আল হাসান
সাকিব আল হাসান

০১২, বাংলাদেশ
সাকিব আল হাসান

পাকিস্তানের সঙ্গে ৬৬ বলে ৬৪ করে দলকে হারতে দেখেছেন। ভারতের বিপক্ষে পরের ম্যাচটা তাই জেতালেন নিজে দায়িত্ব নিয়ে (৩১ বলে ৪৯)। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আবারও ম্যাচ সেরা অলরাউন্ডার সাকিব (৪৬ বলে ৫৬ রান ও ২ উইকেট)। এই পারফরম্যান্সের পুনরাবৃত্তি করলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে ফাইনালেও। কিন্তু ব্যাট হাতে ৬৮ আর বল হাতে ২ উইকেট নেওয়ার পরেও বাংলাদেশ হেরে গেল মাত্র ২ রানে। টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার দিয়ে কি আর সেই হারের আক্ষেপ জুড়ায়?
* আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের পুরস্কার দেওয়া হয়নি ১৯৯০ এশিয়া কাপে। তবে ১৬৬ রান নিয়ে সেই আসরে সবচেয়ে বেশি রান অর্জুনা রানাতুঙ্গার, সবচেয়ে বেশি উইকেট কপিল দেবের (৯টি)। ওই টুর্নামেন্টেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৯৫ বলে ৭৮ রান করে আন্তর্জাতিক ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পেয়েছিলেন আতহার আলী খান।