সেই কোটান, এই কোটান

অস্ট্রিয়ায় নিজের বাড়ির দেয়ালে টাঙানো লাল-সবুজ পতাকাটা মলিন হয়ে গেছে। ঢাকা থেকে নতুন একটা পতাকা নিয়ে যাবেন ভাবছেন। যাওয়ার আগে একটা পতাকা কিনে দিতে বলেও ফেললেন একজনকে। কী অদ্ভুত ব্যাপার, তাঁর গায়ে তখন চাঁদ-তারা খচিত সাদা টি-শার্ট!একটু আগে সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের কোচ হয়ে কথা বলেছেন। ‘আস্সালামু আলাইকুম’ বলে শুরু করে একটু বাংলাদেশি আবেগই কি বয়ে আনেননি? স্বভাবগত হাসি-ঠাট্টা আর দুষ্টুমির ফাঁকেও পাওয়া গেল আবেগাপ্লুত জর্জ কোটানকে, ‘বাংলাদেশ তো আমার দ্বিতীয় বাড়ি। এখানে আবার এসে সেই অনুভূতিই হচ্ছে।’পরশু রাতে হোটেলে উঠেই খোঁজ নিয়েছেন সাবেক শিষ্যদের। যে আমিনুলকে উঁচুমানের গোলরক্ষকের স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন ডিডো, সেই আমিনুলের ক্যারিয়ার বাঁচিয়েছেন তো এই কোটান। ২০০৩ সাফ ফুটবলের আগে ইনজুরি-আক্রান্ত আমিনুলকে শুধুই ফিটই করে তোলেননি, গোটা দলকে উজ্জীবিত করে সাফ ফুটবল জয়ের অপেক্ষাটাও ঘুচিয়েছেন তিনি।‘হেই আমিনুল, হেই বিপ্লব ভাই’...বলে কখনো সাবেক শিষ্যদের জড়িয়ে ধরছেন। কখনো বাদল রায়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ‘সোনালী অতীতে’র খবর নেন। বাংলাদেশে তাঁর অলস বিকেল কাটত সাবেক ফুটবলারদের ক্লাব সোনালী অতীতে গিয়ে ফুটবল খেলে। এভাবে সংবাদমাধ্যম, সংগঠক, খেলোয়াড়—যাঁর সঙ্গে দেখা হয় জড়িয়ে ধরে নানা কথা জানতে চান। কুশল বিনিময়ের পর স্মৃতি রোমন্থন করেন, নিজের নতুন কর্মস্থল নিয়ে সবার আগ্রহ মেটান।কখনো বলেন, ‘প্রথমবার বাংলাদেশের কোচ হিসেবে লাকি টাইম ছিল আমার জন্য।’ পরক্ষণেই চোখে-মুখে বিরক্তি, ‘২০০৫ সালে মুক্তিযোদ্ধার কোচ হয়ে আসার পরের সময়টা বাজে কেটেছে। দেখেছি পর্দার আড়ালে কীভাবে চিটিং হয়।’ একটু বিশদ হওয়ার অনুরোধ যেতেই আবার চোখ টিপে সেই দুষ্টুমি, ‘আমি যাওয়ার আগে এয়ারপোর্টে এসো, সব বলে দেব (পাতানো খেলা আর সংঠকদের নানা কাণ্ডকীর্তিই কী?)।’এর আগে কোটান একটু বিব্রত হলেন একটি প্রশ্নে। বাংলাদেশ-পাকিস্তান যখন ৬ ডিসেম্বর এই টুর্নামেন্টে মুখোমুখি হবে...। হোটেল লবিতে নড়েচড়ে বসেন কোটান, ‘জানি না কী করব। এটা আবেগের ম্যাচ হবে অবশ্যই। চাইব পাকিস্তান জিতুক, কিন্তু বাংলাদেশ হারলে খারাপ লাগবে।’যখন যেখানে থাকেন বাংলাদেশকে স্মরণ করেন, ‘বাড়িতে থাকলে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বাংলাদেশের গল্প মাসে অন্তত দু-তিন দিন করি।’ ডিডোর বিদায়ের খবরটা জেনেছেন কাতারে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে গিয়ে। সরাসরি ছাঁটাই না হলেও কোটানের বিদায়টাও সুখকর হয়নি, এটা মনে পড়লেও সমালোচনায় আর যেতে চাইলেন না। শুধু বললেন, ‘এটা দলের জন্য ভালো কিছু হয়নি।’আবারও বাংলাদেশের কোচ হওয়ার প্রস্তাব পেলে আসবেন? ‘বাংলাদেশ অত টাকা দিতে পারবে না আমাকে’—অনিচ্ছাই প্রকাশ করলেন কোটান।’ তবে প্রকাশ করলেন না পাকিস্তান কত দিচ্ছে, ‘অনেক, অনেক।’ ফেব্রুয়ারিতে নিয়োগ পেয়ে পাকিস্তানে কাটিয়ে ফেললেন ১০ মাস। পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের ফুটবলকে মেলাতে পারেন না একটা জায়গায়, ‘আর্থিক দিক থেকে বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবল এগিয়ে।’থাকেন লাহোরের ফুটবল ফেডারেশন ভবনে। সশস্ত্র প্রহরী বলয়ে চলতে ফিরতে একটু যেন হাঁপিয়েই উঠেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের মুক্ত বায়ুতে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে পারবেন? মাথায় যে থাকবে পাকিস্তান আর এই টুর্নামেন্ট থেকে তাদের কিছু দেওয়ার তাড়না!