স্নায়ু-ট্যাকটিকস আর ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের লড়াই

তীব্র স্নায়ুর লড়াই, ট্যাকটিকস আর খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত নৈপুণ্য। এই তিনের যোগফলই আর্জেন্টিনা-হল্যান্ড আজকের সেমিফাইনালের ভাগ্য গড়বে।
স্নায়ুর চাপটা আর্জেন্টিনার ওপরই বেশি। সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন হিসেবে তাদের নামটা ব্রাজিল-জার্মানির সঙ্গে সমানভাবেই উচ্চারিত হয়ে আসছে। কাজেই কাপ নিয়ে দেশে ফেরার একটা বিরাট প্রত্যাশার বোঝাও চেপে আছে। ভুল করার সম্ভাবনাও তাই আর্জেন্টিনার বেশি। আমার বিশ্বাস, ভুল না করে চাপটাকে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে আর্জেন্টিনা। কিন্তু ভুল করলেই বিপদ। হল্যান্ড তা কাজে লাগাতে ওত পেতে থাকবে।
ফাইনালে উঠে গেলেও অবাক হব না। হল্যান্ডকে বিশ্বকাপ শুরুর আগে ফেবারিট মনে হয়নি। তাদের নামটা পাঁচ-ছয় নম্বরেই এসেছে। দলটি আসলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেনি। সেদিক থেকে আজ ডাচরা চাপমুক্ত হয়েই খেলবে। যেটা তাদের জন্য বড় সুবিধাই।
ট্যাকটিকসের দিক থেকে হল্যান্ড চাইবে কোনোভাবেই যেন মেসি খেলার জন্য খোলা জায়গা না পান। এই কাজটা কত ভালোভাবে করতে পারে তারা, ম্যাচের গতিপ্রকৃতি তার ওপরও অনেক নির্ভর করবে।
এবার হল্যান্ডের খেলার বড় বৈশিষ্ট্য, কোচ লুই ফন গাল ম্যাচের মধ্যেই ছক পাল্টাতে থাকেন। নিশ্চয়ই সেটা আজও করবেন। প্রতিপক্ষ এর পাল্টা কীভাবে দিতে পারে, সেটা হবে দেখার। সাবেলা আর ফন গালের চতুর মস্তিষ্ক আজ নিজ নিজ দলে দ্বাদ্বশ ব্যক্তি হিসেবে খেলবে।
আর্জেন্টিনার শুধু নিজেদের খেলাটা খেললেই চলছে না, একই সঙ্গে আটকাতে হবে প্রতিপক্ষকেও। সে ক্ষেত্রে ট্যাকটিকসের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে পারেন আরিয়েন রোবেন। যদিও তাঁকে আটকানো সহজ ব্যাপার নয়। দেখা গেল, বাঁ পায়ে বল নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ ডান পায়ে একটা কাট করলেন রোবেন। যেটা বুঝলই না প্রতিপক্ষ। সেই মুভ থেকে গোলও বের করে ফেলতে পারেন। এই বিশ্বকাপে যাঁর খেলা দেখে আমি মুগ্ধ। সত্যি বলতে আর্জেন্টিনার ঘাতক হয়ে উঠতে পারেন রোবেন।
ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের লড়াইও হয়ে যাচ্ছে ম্যাচটি। একদিকে মেসি, হিগুয়েইন, আগুয়েরো (যদি খেলেন)। অন্যদিকে রোবেনের সঙ্গে স্নাইডার, ফন পার্সি। স্নাইডার এই বিশ্বকাপের শুরুতে নিষ্প্রভ থাকলেও নিজেকে ফিরে পেয়েছেন। পার্সির ব্যাপারটা আবার উল্টো। তাঁর বিশ্বকাপের শুরুটা ভালো হলেও যেন ধার হারিয়ে ফেললেন আস্তে আস্তে। তবে দলকে বিশ্বকাপের ফাইনালে তোলার দুয়ারে দাঁড়িয়ে নিজেকে মেলে ধরবেন বলেই আমার বিশ্বাস।
সবাইকে ছাপিয়ে যেতে অবশ্য ওই একজনই যথেষ্ট—লিওনেল মেসি। জাদুকর একাই ধ্বংস করে দিতে পারেন হল্যান্ডকে। ফর্মে থাকা ডি মারিয়া না থাকায় আজ একটু বেশিই দায়িত্ব নিতে হবে মেসিকে। আর্জেন্টিনার জন্য ভালো খবর হিগুয়েইনের ছন্দে ফেরা। স্নাইডাররাও আর্জেন্টিনাকে বিদায় করার ক্ষমতা রাখেন। মাঠে তাই লড়াইটা সমান-সমানই হতে পারে।
কাগজ-কলমে খানিকটা এগিয়ে আর্জেন্টিনাই। কিন্তু এ ধরনের ম্যাচে কাগজ-কলমের ফেবারিট সব সময় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারে না। অনেক উদাহরণ হাতের কাছেই আছে। এ কারণে আর্জেন্টিনার ভয়টা থেকেই যাচ্ছে। সব চাপ সামলে কক্ষপথে হাঁটা সাবেলার দলের জন্য এটা বড় চ্যালেঞ্জও বটে।