কমলা-হুমকি হারিয়ে গেল লাল-সবুজে

বাংলাদেশকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছিল হল্যান্ড। শুধু হুমকিই তো নয়, স্টিফেন মাইবুর্গ, পিটার বোরেন ও বেন কুপারদের দুর্দান্ত ব্যাটিং জয়ের বিশ্বাসও ছড়িয়েছিল ডাচদের মধ্যে। কিন্তু ক্রিকেটে বাংলাদেশ ও হল্যান্ড—এই দুই দেশের অভিজ্ঞতার ফারাকটা শেষ পর্যন্ত বড় হয়েই উঠল ধর্মশালার ছবির মতো মাঠটিতে। হুমকি-হুংকার যা-ই হোক, মাশরাফি-সাকিব-তাসকিন-আল আমিনরা নিজেদের অভিজ্ঞতাকে নিংড়ে দিয়েই শেষ অবধি ছিনিয়ে আনলেন দারুণ প্রত্যাশিত এক জয়। জয়ের ব্যবধানটা মাত্র ৮ রান। হলেও ধর্মশালার সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী কন্ডিশন আর কিছুটা বৈরি পরিবেশে মাত্র একটি অনুশীলন সেশনের অভিজ্ঞতা নিয়ে বাংলাদেশ আজ যা করেছে তা প্রশংসা পেতেই পারে। সঠিক সময়ে বে৶ক থ্রু আর ডাচ ব্যাটসম্যানদের উইকেটে বেঁধে রাখার মধ্য দিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টেনে পা রাখার মিশনটা দারুণভাবেই শুরু করল বাংলাদেশ।
১৫৩ রানে পুঁজিটা একটা সময় যথেষ্ট বড়ই মনে হয়েছিল। তামিম ইকবালের অনবদ্য অপরাজিত ৮৩ রানের ইনিংসটির কল্যাণে এই সংগ্রহ নিয়েও ডাচ ব্যাটিংয়ের সামনে যথেষ্টই লড়তে হলো বাংলাদেশের বোলারদের। তাসকিন দুর্দান্ত বল করেছেন। ৪ ওভার বল করে কোনো উইকেট না পেলেও তিনি রান দিয়েছেন ২১। সাকিব ২৮ রানে ২ উইকেট নিয়ে মাঝের ওভারগুলোতে দারুণ ভূমিকা রেখেছেন ডাচ ব্যাটসম্যানদের হুমকিকে উড়িয়ে দিতে। আল আমিন একটু খরুচে হলেও তিনিও তুলে নিয়েছেন জোড়া উইকেট। মাশরাফি বোলিংয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকেই। তাঁর বোলিং পরিসংখ্যানটি দেখুন—৪-০-১৪-১। ওভারপ্রতি মাত্র সাড়ে ৩ রান খরচ করে বাংলাদেশের জয়ে অধিনায়কের ভূমিকাটা অনন্য। মাইবুর্গকে বোল্ড করে নাসিরই কিন্তু প্রথম ডাচ-হুমকির পাল্টা জবাবটা দিয়েছিলেন।
মাইবুর্গ আর বোরেনের ব্যাট থেকে এসেছে ২৯। বেন কুপার করেছেন ২০। শেষের দিকে টম কুপার ১৫ আর মুদাস্‌সর বুখারি ১৪ রান করে হল্যান্ডকে লড়াইয়ে রেখেছিলেন শেষ পর্যন্তই।
আরাফাত সানি আজ কোনো উইকেট পাননি। কিন্তু তিনি দলের অভিবাদনটা ঠিকই পাবেন। বাংলাদেশের ইনিংসের শেষ ওভারটিতে তিনি দুটো বল নষ্ট করে ফন বিককে লং অনের ওপর দিয়ে যে বিশাল ছক্কাটি তিনি মেরেছিলেন, দিনশেষে সেটাই তো ‘পার্থক্য।’ তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহই তো দিন শেষে বাংলাদেশের জয়ের ব্যবধান। এর আগে, টসে হেরে ব্যাট ধরতে হয় বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের ইনিংস তো পুরোটাই তামিমময়। তাঁর ৮৩ রানের ইনিংসের বাইরে সৌম্য আর সাব্বিরের ১৫ ছাড়া বলার মতো তো কিছুই নেই। এশিয়া কাপে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মাহমুদউল্লাহকে আজ ব্যাটিং অর্ডারে ওপরে ওঠানো হলেও তিনি ১০ রানের বেশি করতে পারেননি। সাকিব আল হাসান ৫ আর মুশফিকুর রহিম শূন্য রানে আউট হয়ে যথেষ্ট বিপদেই ফেলে দিয়েছিলেন দলকে।
ম্যাচ শেষে টেলিভিশনের পর্দায় স্পষ্টই দেখা গেল তামিমের স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার দৃশ্যটি। এশিয়া কাপের ফাইনালের পরদিন সকালেই ক্লান্তি নিয়ে ধর্মশালা উড়াল দেওয়া, প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার সুযোগ না পাওয়া। মাত্র একটি অনুশীলন সেশন শেষেই একেবারে চূড়ান্ত লড়াইয়ে নেমে পড়া। প্রতিকূলতার পাহাড় ডিঙিয়ে শেষ পর্যন্ত যে জয়টি এল, সেটি আনন্দের। এই জয়টিই আয়ারল্যান্ড ও ওমানের বিপক্ষে সামনের দুটো ম্যাচে বড় কিছুর জ্বালানি হিসেবেই কাজ করবে।