আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে স্মার্টফোন বাজার
গত কয়েক প্রান্তিক জুড়ে স্মার্টফোন বিক্রির ধারা নিম্নমুখী হলেও বৈশ্বিক স্মার্টফোনের বাজার আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই আবার ঘুরে দাঁড়ানোর পথে রয়েছে। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশনের (আইডিসি) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আইডিসির বৈশ্বিক মোবাইল ডিভাইস ট্র্যাকারের গবেষণা পরিচালক নাবিলা পোপাল বলেন, ২০২১ সালে আমরা বৈশ্বিক স্মার্টফোনের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৯ শতাংশ বেশি হবে বলে আশা করছি। এর কারণ হচ্ছে চলতি বছরে স্মার্টফোন বিক্রি ব্যাপকহারে কমে গেছে। তবে স্মার্টফোন বাজারের সত্যিকারের ঘুরে দাঁড়ানোর ঘটনা ঘটতে পারে ২০২২ সালে। ওই সময়ে স্মার্টফোন বাজারে আসার হার কোভিডের আগের অবস্থায় পৌঁছে যেতে পারে।
বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হতে পারে ৫জি প্রযুক্তি। উন্নয়নশীল দেশগুলোর বাজারে স্মার্টফোনের বাজার বড় হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। এসব দেশে একেবারে কম দামের ফিচার ফোন থেকে মাঝারি মানের ৪জি সুবিধার স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়তে শুরু করবে। মোট স্মার্টফোন বাজারের ৮০ শতাংশই এসব অঞ্চলে বিক্রি হবে।
আইডিসির তথ্য অনুযায়ী, আগামী বছরের স্মার্টফোন বাজারের পূর্বাভাস ধরলে স্মার্টফোনে এক দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটবে। এ ক্ষেত্রে মানুষের পছন্দের কম্পিউটিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে স্মার্টফোনই জায়গা দখল করে নেবে বলে ধরা হচ্ছে।
আইডিসির প্রোগ্রাম ভাইস প্রেসিডেন্ট রায়ান রেইথ বলেন, ‘কোভিড মহামারি পরিস্থিতিতে গ্রাহক চাহিদা কমে গেলেও সব স্মার্টফোন নির্মাতারা এখন ৫জি প্রযুক্তিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন। যদিও অধিকাংশ স্মার্টফোন নির্মাতা চলতি বছরে উৎপাদন কমিয়েছেন এবং বাজারে স্মার্টফোনের চাহিদা কমার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন।
অধিকাংশ স্মার্টফোন নির্মাতা ফোরজি ফোন থেকে লক্ষ্য সরিয়ে নিচ্ছেন। তাদের লক্ষ্য ৫জি স্মার্টফোনের দিকে। বর্তমানে অবশ্য ৫জি ফোনের চাহিদা অনেক কম।
অর্থনৈতিক মন্দার কারণে অনেকেই দামি ফোনের দিকে যাচ্ছেন না।
এদিকে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গার্টনারের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা মহামারির প্রভাব পড়েছে স্মার্টফোনের বাজারে। বিশ্বব্যাপী বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক, অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুন মাসে স্মার্টফোন বিক্রি ব্যাপক কমে গিয়েছিল। গত বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনায় এ বছর স্মার্টফোনের বাজার ২০ শতাংশ কমেছে। গার্টনার জানিয়েছে, স্মার্টফোন বাজারে করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাবের কারণে স্মার্টফোন বাজারে আসার সংখ্যা সাড়ে ২৯ কোটিতে নেমে এসেছে।
গার্টনারের প্রতিবেদনে জানানো হয়, চীন ছাড়া সব বড় বাজারগুলোতে স্মার্টফোন বিক্রিতে বাধা সৃষ্টি হয়। বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকজুড়েই স্মার্টফোন বিক্রিতে সমস্যা ছিল।
এ ছাড়া এ সময় স্মার্টফোনের চাহিদাও কমতে দেখা যায়। বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি স্মার্টফোন বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান তাদের বার্ষিক ফলাফলে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির কথা বলেছে।
গার্টনারের হিসাবে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি স্মার্টফোন কোম্পানি হিসেবে রয়েছে স্যামসাং, হুয়াওয়ে, অ্যাপল, শাওমি ও অপো। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে স্মার্টফোন বাজারের ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ দখল করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্যামসাং।
স্মার্টফোনের বাজারে তরতর করে উঠে যাচ্ছিল চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে। তবে বর্তমানে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের মধ্যে পড়ে বিপদে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
স্মার্টফোন বাজারে বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে স্যামসাংয়ের সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। গত প্রান্তিকে বাজারে ৫ কোটি ৪১ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন এনেছে হুয়াওয়ে। বাজারের ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ এখন তাদের দখলে।
স্মার্টফোনের বাজারে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে অ্যাপল। বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৩ কোটি ৮০ লাখ ইউনিট আইফোন বাজারে এনেছে অ্যাপল। স্মার্টফোন বাজারে তাদের দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কমেছে। স্মার্টফোনের বাজারে চমক দিয়েছে চীনা স্মার্টফোন ব্র্যান্ড শাওমি। বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ২ কোটি ৬০ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রি করে স্মার্টফোন বাজারের চতুর্থ স্থানটি দখল করেছে শাওমি। বর্তমানে স্মার্টফোন বাজারের ৮ দশমিক ৯ শতাংশ শাওমির দখলে। তবে গত বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের সঙ্গে তুলনা করলে শাওমির প্রবৃদ্ধি ২১ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে।
গার্টনারের হিসাবে স্মার্টফোন বাজারের পঞ্চম স্থানটি এখন অপোর দখলে। বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে তাদের প্রবৃদ্ধি কমেছে ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ। এ সময় অপো ২৩ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন বাজারে এনেছে। বর্তমানে স্মার্টফোনের বাজারে ৮ শতাংশ অপোর দখলে।