এই গরমে হট বাংলা সিনেমা, এসি কেন অফ?

এসি দিয়ে ভালোবাসা মাপা যায় না, চৌধুরী সাহেব!
এসি দিয়ে ভালোবাসা মাপা যায় না, চৌধুরী সাহেব!

১.
সৎ পুলিশ অফিসার জগলুল সাহেব তাঁর একমাত্র ছেলে সাগরের তৃতীয় জন্মদিন উদ্যাপন করছেন। বাইরে প্রচণ্ড গরম। ঘরের ভেতর এসি চালিয়ে কেক কাটা হচ্ছে। তখনই সেখানে প্রবেশ একদল ভিলেনের। ভয়ে আঁতকে ওঠে সবাই।
ভিলেন: ওই জগলুল, আমার অবৈধ আইসক্রিমের চালান তুই ধরে ফেলেছিস, তোকে আমি ছাড়ব না।
জগলুল সাহেব: তোর কেমিক্যাল দেওয়া আইসক্রিমগুলো গলিয়ে যেভাবে পানি বানিয়েছি, তোকেও বানাব, বদমাশ! মমতা, তুমি সাগরকে নিয়ে পালাও!
স্বামীর নির্দেশ মেনে ছেলে সাগরকে নিয়ে পালিয়ে গেলেন জগলুল সাহেবের স্ত্রী মমতা। চেয়ারের সঙ্গে জগলুল সাহেবকে বেঁধে ফেলল ভিলেন। তারপর এসি অফ করে বেরিয়ে গেল সবাই। কিছুক্ষণ পরই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন হতভাগ্য জগলুল।
২.
১৫ বছর পর
নদীকে গুন্ডারা আক্রমণ করেছে। সে চিত্কার করছে ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে। গুন্ডাদের মেরে তক্তা বানিয়ে নদীকে বাঁচাল সাগর। তাদের প্রেম হয়ে গেল। তারা গান গাইতে শুরু করল নৃত্যের তালে তালে।
৩.
বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে সাগর গেল নদীর বাবার কাছে। হবু শ্বশুরকে তার চেনা চেনা লাগছে। কিন্তু কোথায় দেখেছে, ঠিক মনে করতে পারল না। নদীর বাবা বিজনেস ম্যাগনেট চৌধুরী সাহেব। সাগরের মুখে ভালোবাসার কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলেন।

চৌধুরী সাহেব: সামান্য এসির মেকানিক হয়ে তুই আমার মেয়ে নদীকে পেতে চাস! জানিস, শুধু এসির বিল বাবদ মাসে নদীর পেছনে কত টাকা খরচ হয়? মাসে সে কত টাকার আইসক্রিম খায়? আরে, তোর তো একটা হাতপাখা কেনবারও মুরোদ নেই!
সাগর: চৌধুরী সাহেব, আমরা গরিব হতে পারি, তবে ছোটলোক নই! মনে রাখবেন, আমরা গায়ের ঘাম ঢেলে যে এসি ঠিক করি, সেই এসির ঠান্ডা বাতাস খেয়েই আজ আপনারা এত আরামে আছেন!
চৌধুরী সাহেব: বল, কত টাকা দামের এসি হলে তুই আমার মেয়ের জীবন থেকে সরে যাবি?
সাগর: এসি দিয়ে ভালোবাসা মাপা যায় না, চৌধুরী সাহেব!
তখনই সেখানে নদীর প্রবেশ।
নদী: বাবা, থাকো তুমি তোমার ঠান্ডা জীবনে, এসিতে থাকতে থাকতে তুমি বরফ হয়ে গেছ। আমি চললাম সাগরের সাথে। ওখানে হয়তো এসির ঠান্ডা বাতাস নেই, তবে ভালোবাসার হিমেল পরশ আছে!

.
.

৪.
মেয়ের কথা শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন চৌধুরী সাহেব। আদরের মেয়েকে বন্দী করে ফেললেন ঘরে। আর সাগরকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দিল চৌধুরীর গুন্ডাবাহিনী। রাস্তায় হেঁটে হেঁটে ফ্রিজের ঠান্ডা পানি খেতে খেতে সাগর গান ধরল—পাখা নেবে না ঘাম নেবে বন্ধু?/ যদি পাখা ফিরিয়ে দাও/ তবে দিতে পারি তোমায়/ এই শরীরে ভরে ওঠা ঘামধারা!
৫.
এর মধ্যে সাগর পরিশ্রম করা বাড়িয়ে দিল। রাত–দিন এসি ঠিক করে। পাশাপাশি হাতপাখা বানিয়ে বিক্রি করে অনলাইনে। ফলে অল্প কদিনেই সে বনে যায় ধনী। আর এর পাশাপাশি চৌধুরী সাহেবের সব ধরনের ব্যবসায় জ্বলতে লাগল লালবাতি। সাগরের ব্যবসার সঙ্গে যে তিনি পারছেন না! এর মধ্যে হুট করে ফোন এল একদিন।
সাগর: হ্যালো, সাগর স্পিকিং।
চৌধুরী সাহেব: হা হা সাগর, তোর মা এখন আমার কবজায়। তুই তোর সম্পত্তির দলিল নিয়ে এখনই আমার বাগানবাড়িতে চলে আয়। নইলে তোর বাবাকে যেভাবে এসি অফ করে মেরেছি...

সাগর: না, চৌধুরী না!

৬.
চৌধুরী সাহেবের বাগানবাড়ির দেয়াল ভেঙে গাড়ি নিয়ে ঢুকল সাগর। সামনে তার মা একটা কাচের ঘরের ভেতরে বাঁধা। মমতা বেগমকে মারার জন্য এসি বন্ধ করে রিমোট পকেটে নিয়ে ঘুরছেন চৌধুরী সাহেব। সাগরের সামনে লেলিয়ে দিয়েছেন তাঁর গুন্ডাবাহিনী। তবে একে একে সব গুন্ডাকে মেরে ফেলল সাগর। চৌধুরী সাহেবের পকেট থেকে রিমোটটা নিয়ে মাকেও উদ্ধার করল সে। সাগরের মা মমতা বেগম চিত্কার করে কাঁদছেন।
মমতা বেগম: ওকে শেষ করে দে, বাবা! ও তোর বাবাকে এসি অফ করে নির্মমভাবে মেরেছে!
মায়ের কথা শুনে সাগর প্রতিশোধের আগুনে জ্বলতে লাগল দপ দপ করে।
সাগর: তুই আমার বাবাকে এসি অফ করে মেরেছিস, আমার মাকে ফ্যানের বাতাস থেকে বঞ্চিত করেছিস। আমাকে বঞ্চিত করেছিস বাবার হাতের হাতপাখার বাতাস থেকে। তোকে আমি ছাড়ব না, চৌধুরী!
সাগরের হাতে এসির রিমোট। তখনই পুলিশের আগমন, ‘প্লিজ, কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না!’ পুলিশ সাদা রুমাল দিয়ে খুব সাবধানে রিমোটটা নিজেদের হেফাজতে নিয়ে নিল। নদী আর মাকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগল সাগর। বেজে উঠল গান ধরল—পাখা নেবে না ঘাম নেবে বন্ধু?/ যদি পাখা ফিরিয়ে দাও/ তবে দিতে পারি তোমায়/ এই শরীরে ভরে ওঠা ঘামধারা!
সমাপ্ত