তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সংগঠনের প্রতিক্রিয়া
একটি বাঁচাতে যেন আরেকটি খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করা না হয়
সরকারের ২০২২-২৩ সালের প্রস্তাবিত বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কিছু প্রস্তাব নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে এ খাতের সংগঠনগুলো। ল্যাপটপ, প্রিন্টার, ইন্টারনেটের মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বসানোর প্রস্তাব পুরো খাতকেই প্রভাবিত করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, একটি খাতকে বাঁচাতে গিয়ে আরেকটি খাতকে যেন ক্ষতিগ্রস্ত করা না হয়।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কন্টাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো) সংবাদ সম্মেলন করে বাজেট প্রতিক্রিয়া জানায়।
এবারের বাজেটে ল্যাপটপ, প্রিন্টার আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাটের প্রস্তাব করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বিসিএস সভাপতি সুব্রত সরকার বলেন, ডলারের দাম বেড়েছে, জাহাজীকরণের ক্ষেত্রেও ব্যয় বেড়েছে। সব মিলিয়ে ১০ থেকে ১২ শতাংশ দাম এমনিতেই বাজারে বেশি। সরকারে প্রস্তাবিত নতুন ভ্যাট বসানো হলে ৩১ দশমিক ৫ শতাংশের মতো দাম বেড়ে যাবে। একজন শিক্ষার্থীর জন্য একটি ল্যাপটপ কিনতে গেলে ৫০ হাজার টাকা খরচ হবে। এ প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে যদি সেভাবে ল্যাপটপ, প্রিন্টার তৈরির কয়েকটি শিল্প গড়ে উঠত, তাহলে এই ভ্যাট যুক্তিযুক্ত হতো। কিন্তু তা হয়নি। ল্যাপটপের ক্ষেত্রে একটি কোম্পানি সংযোজন করে। কিন্তু উৎপাদনমুখী কোনো শিল্প গড়ে ওঠেনি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ করতে চাইলে আগে ছোট ছোট করে শিল্প গড়ে উঠতে হবে। এ ছাড়া ভ্যাট বসানো হলে ল্যাপটপের মান পড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছে বিসিএস। তারা বলছে, বাংলাদেশে সংযোজিত ল্যাপটপ বাজারজাত করতে এসে মানের কারণে সফল হয়নি। এ ছাড়া দেশে ল্যাপটপ, কম্পিউটার উৎপাদন করতে হলে সব কাঁচামাল আমদানি করতে হবে।
ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার বলেন, ইন্টারনেট, ল্যাপটপ, হার্ডওয়্যারের ওপর ভ্যাট বসানো হলে ই-কমার্স খাতেও তার প্রভাব পড়বে। কারণ, করোনার পর ব্যবসার খরচ এমনিতেই বেড়ে গেছে। তাঁর অনুরোধ, ই-কমার্স খাতকে যেন আলাদা খাত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পাশাপাশি আইটি খাতের পুরো ইকোসিস্টেম মাথায় রেখে যেন বাজেট পাস করা হয়।
আউটসোর্সিংয়ের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হচ্ছে উল্লেখ করে বাক্কো সভাপতি ওয়াহেদ শরীফ বলেন, প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ২৭ শতাংশ ভ্যাট, কর দিতে হয়। তিনি তা কমানোর দাবি জানান।
বাজেটের আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে দেওয়া কোনো প্রস্তাবই রাখা হয়নি বলে অভিযোগ করেন আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক। তিনি বলেন, দেশে অপটিক্যাল ফাইবার কেব্ল আমদানিতে ১০ শতাংশ ভ্যাট ও আইএসপিতে অগ্রিম ১০ শতাংশ করের প্রস্তাবে ইন্টারনেট সেবার দাম বাড়বে। আর বাড়তি দামের প্রভাব গ্রাহকের ওপরই চাপবে। এ ছাড়া আইএসপিকে আইটিএস খাতভুক্ত করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রী দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি বলে দাবি করেন ইমদাদুল হক।
বাজেটে নিজেদের প্রস্তাবের পূর্ণাঙ্গ প্রতিফলন হয়নি বলে জানান বেসিসের সহসভাপতি আবু দাউদ খান। তিনি বলেন, আইটি খাতে দক্ষ জনবলের অভাব আছে। এখানে ইন্টার্নশিপের সুযোগ চালু করে তাতে প্রণোদনার দাবি জানান তিনি।