কম খরচে টিউব শিশু?

কম খরচে টেস্ট টিউব শিশুর জন্ম দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা করছেন মার্কিন গবেষকেরা। তাঁদের দাবি, উন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দরিদ্র নিঃসন্তান দম্পতির ক্ষেত্রে আশার আলো হবে এ পদ্ধতিটি।
ইউরোপ ও মার্কিন গবেষকেরা দাবি করেছেন, আইভিএফের পুরো প্রক্রিয়াটি আরও সহজ করা গেলে মাত্র ২৬৫ মার্কিন ডলার খরচে টেস্ট টিউব বেবি গ্রহণ সম্ভব। টাইম অনলাইনের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
গবেষকেরা ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন বা আইভিএফ পদ্ধতিটিকে মূলত টেস্ট টিউব বেবির জন্ম পদ্ধতি বলেন। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যাতে কম খরচে ‘টেস্ট টিউব বেবি’ সুবিধা দেওয়া সম্ভব হয়, সে লক্ষ্যে গবেষকেরা সাশ্রয়ী ও সহজ কিছু পদ্ধতি নিয়ে পরীক্ষা শুরু করেছেন।
তাঁরা বলছেন, তিন দশক আগে প্রথম টেস্ট টিউব বেবির জন্মের পর থেকে ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন প্রক্রিয়াটি অত্যাধুনিক পরীক্ষাগারে বহুল প্রচলিত। আর তা বেশ ব্যয়বহুলও। উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য সাশ্রয়ী খরচে এ পদ্ধতি প্রয়োজন। এ পদ্ধতিতে সন্তান জন্ম দিতে পশ্চিমা দেশগুলোর অধিকাংশ সন্তান গ্রহণে ইচ্ছুক বাবা-মা হাজার হাজার ডলার খরচ করেন। দামি ইনকিউবেটর বা ডিম নিষিক্তকরণ যন্ত্র ও ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য প্রচুর অর্থ খরচ করেন তাঁরা।
যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ জোনাথন ভ্যান ব্লেরকম জানান, আইভিএফ প্রক্রিয়াটি শুনতে জটিল হলেও ভ্রূণ তৈরি করা প্রক্রিয়াটি সহজ আর তা তৈরিতে খুব বেশি কিছু প্রয়োজন পড়ে না। টেস্ট টিউবে মানুষের ভ্রূণ তৈরি করতে মূল কিছু বিষয় ঠিক রাখলেই হয়। অ্যাসিডের সঠিক মাত্রা ও নির্দিষ্ট তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে বিষয়টি।
সাশ্রয়ী আইভিএফ পদ্ধতিতে মা হতে ইচ্ছুক নারীকে কম দামের ফার্টিলিটি ট্যাবলেট খাওয়ানো হয় এবং ডিম্বাশয়কে উত্তেজিত করে বেশি ডিম উত্পাদন করানো হয়। বর্তমানে অত্যাধুনিক পরীক্ষাপদ্ধতিতে ইনজেকশনের মাধ্যমে এ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করেন চিকিত্সকেরা।
ব্লেরকম দাবি করেছেন, প্রচলিত পদ্ধতিতে ৬০ হাজার মার্কিন ডলারের বেশি খরচ করে যে ফল পাওয়া যায় সাশ্রয়ী পদ্ধতিটিতে সামান্য দুটি টেস্ট টিউব ব্যবহারেও একই ফল পাওয়া সম্ভব।
ইনফার্টিলিটি চিকিত্সা নিতে ইচ্ছুকদের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি কার্যকর হবে।
গবেষকেরা বর্তমানে বেলজিয়ামে সাশ্রয়ী এই টেস্ট টিউব বেবি জন্ম দেওয়ার প্রক্রিয়াটি নিয়ে পরীক্ষা করছেন। ৩৬ বছরের কম বয়সী নারীদের নিয়ে প্রচলিত আইভিএফ পদ্ধতি ও সাশ্রয়ী আইভিএফ নিয়ে গবেষণা করছেন তাঁরা। সাশ্রয়ী পদ্ধতিতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছেন গবেষকেরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে ১২ থেকে ১৬ কোটি দম্পতি বন্ধ্যত্বের সমস্যায় ভুগছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষক শেরিল ভ্যান্ডারপোয়েল জানান, উন্নয়নশীল দেশগুলোর বন্ধ্যত্ব সমস্যাকে কেউ সমস্যা মনে করেন না অথচ পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এ সমস্যা প্রকট। সাশ্রয়ী আইভিএফ জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য সাশ্রয়ী আইভিএফ পদ্ধতি কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করা হলেও উন্নত দেশের চিকিত্সকেরাও এ বিষয়ে তাঁদের আগ্রহ দেখাচ্ছেন। যুক্তরাজ্যের বেসরকারি একটি ফার্টিলিটি সেন্টারের পরিচালক গীতা নারগান্ড জানান, ‘আইভিএফ ব্যবহারের জন্য ধনী হতে হবে এমন তো কথা নেই। উন্নত দেশেও অনেকেই আছেন যাঁরা এ পদ্ধতি গ্রহণ করার সামর্থ্য রাখেন না। সাশ্রয়ী আইভিএফ এলে অনেকেই লুফে নেবেন তা।