কলাপাড়ায় মাছচাষিদের জন্য অ্যাপ

.
.

পুকুরে মাছ চাষ সহজ করা, দ্রুত সেবা প্রদান, সময়মতো তথ্য-উপাত্ত সহায়তা এবং চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করতে বানানো হয়েছে মোবাইল অ্যাপ। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. কামরুল ইসলাম এই অ্যাপ তৈরি করেছেন। উপকূলীয় অঞ্চলের মাছ চাষে পরিবর্তন আনতে এটি কার্যকরী এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি মনে করেন।
কেন এই উদ্যোগ?
কলাপাড়া উপজেলায় প্রায় ২৪ হাজার মাছচাষি ও পুকুরমালিক রয়েছেন। তবে আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষে পুকুরমালিকেরা সেভাবে এগিয়ে আসছেন না। ইদানীং সব পুকুর সাধারণ মাছ চাষের আওতায় এলেও পাঙাশ, তেলাপিয়া, কই ইত্যাদি মাছের চাষ কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। মৎস্য অধিদপ্তরের ক্ষুদ্র লোকবল নিয়ে এত বিশাল সংখ্যক চাষির দেখভাল করা, প্রশিক্ষণ, পরামর্শ প্রদান ও সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা প্রায় অসম্ভব। প্রান্তিক চাষিরা মাছ চাষের প্রায়োগিক প্রশিক্ষণের সুযোগ পাচ্ছেন না।  স্থানীয় পর্যায় থেকে অনুপযোগী বা ভুল পরামর্শ নিয়েও অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আবার চাষিদের মাছ চাষের পরামর্শ গ্রহণের জন্য উপজেলা সদরে মৎস্য অফিসে যেতে হয়। এই বাস্তবতার কথা ভেবেই প্রযুক্তিনির্ভর এ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
যেভাবে শুরু
কলাপাড়া উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম ২০১৬ সালে অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের আওতায় ‘পাবলিক সার্ভিস ইনোভেশন’ বিষয়ে বরিশালে পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণে অংশ নেন। সেখানে তিনি ‘নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব মৎস্য চাষে পরামর্শ সেবা সহজীকরণ’ শীর্ষক একটি ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন।
প্রাথমিকভাবে কলাপাড়া উপজেলার চাকামাইয়া ইউনিয়নের উত্তর চাকামইয়া গ্রামে পুকুরমালিক বা চাষিদের তথ্য সংগ্রহ করে পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ৪৬০ জন চাষিকে নিয়ে প্রকল্পের অগ্রযাত্রা শুরু হয়।
চাষির ডেটাবেইস

বর্তমানে কলাপাড়া উপজেলার চাকামইয়া, টিয়াখালী, নীলগঞ্জ এবং ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের ১৯৭৪ জন চাষির ডেটাবেইস সংগ্রহ করা হয়েছে। এই পরামর্শ সেবার আওতায় বাকি চাষিদের তথ্যাদি সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে। ডেটাবেইসে চাষির পুকুরের তথ্যাদি অর্থাৎ পুকুরের আয়তন, সংখ্যা, চাষের প্রজাতি ও মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করা হয়েছে। চাষিকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া বা নজরদারির জন্য তৈরি করা এ মোবাইল অ্যাপ দিয়ে ‘মাছ চাষে খুদে বার্তা’ (এসএমএস) পাঠানো হয়ে থাকে। এর ফলে চাষিদের পরামর্শের জন্য মৎস্য অফিসে যেতে হয় না। কোনো কোনো চাষি খুদে বার্তায় সন্তুষ্ট না হলেই সে ক্ষেত্রে অফিসে আসার প্রয়োজন দেখা দেয়। খুদে বার্তার মাধ্যমে নানা পরামর্শ দেওয়ার ফলে অনিয়মিত চাষিদের মাঝেও মাছ চাষে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে।

.
.

চাষিদের কথা
খুদে বার্তা পেয়ে চাষিরা ভীষণ অনুপ্রাণিত ও খুশি। বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে এমনটিই লক্ষ করা গেছে। উপকারভোগী চাষিরা এমন উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। চাকামইয়া ইউনিয়নের নিশানবাড়িয়া গ্রামের চাষি নাসির উদ্দিন হাওলাদার বলেন, ‘আমি বিভিন্ন মাছের চাষ করি। পুকুরে কী পরিমাণ চুন, মাছের খাবার ব্যবস্থা, রোগপ্রতিরোধে এবং রোগের চিকিৎসায় করণীয় বিষয়ে  বাড়িতে বসে পরামর্শ পাব, এটা সত্যিই সুসংবাদ।’ একই গ্রামের আলী আহমেদ খান বলেন, ‘এখন কোনো কিছু জানার প্রয়োজন হলে আমরা বার্তা পাঠাতে পারি। আমাদের বার্তা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মৎস্য অফিস থেকে পরামর্শ দিয়ে ফিরতি বার্তা পাই। আমরা সেভাবে সবকিছু করতে পারছি। এতে মাছ চাষে আমরা লাভবান হব এবং আমাদের কাছাকাছি অনেক অনিয়মিত চাষি এই বার্তা পেয়ে চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।’
মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘খুদে বার্তাগুলো চাষিদের প্রয়োজন, চাষকাল, প্রজাতির ওপর ভিত্তি করে আঞ্চলিক ভাষায় পাঠানো হয়ে থাকে। খুদে বার্তায় চাষির পুকুর প্রস্তুতির সময়ক্ষণ, কীভাবে করবে, কী কী প্রজাতির মাছ ও সংখ্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে করণীয়, মাছের পোনার আকার, উন্নত জাতের পোনার প্রাপ্তিস্থান, উচ্চ মূল্যের মাছ চাষের (শিং, মাগুর, পাবদা) খাদ্য ব্যবস্থাপনা, পুকুর ব্যবস্থাপনা, রোগের পরামর্শ সম্পর্কে জানানো হয়ে থাকে। আমার বানানো অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের চাষ বিষয়ে ও রোগ নিরাপত্তা বা চিকিৎসাসেবা পদ্ধতির বিস্তারিত তথ্যাদি সংযোজিত আছে। যেসব চাষি অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করেন, তাঁরা অ্যাপটি সংযোজন করে মাছ চাষের বিভিন্ন প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন।’

এ ধরনের অ্যাপ নিশ্চয়ই কাজে লাগবে প্রান্তিক মাছ চাষিদের। নির্মাতা মনে করেন, এই অ্যাপ কৃষি, প্রাণিসম্পদ এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগেও ব্যবহার করা যাবে।