মূলভাব অংশ-৬
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, আজ বাংলা বিষয়ের ৭নং প্রশ্ন অনুচ্ছেদ বা কবিতাংশটুকুর মূলভাব লিখ। প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করা হলো। প্রশ্নের নম্বর থাকবে ৫।
১৫.
গ্রামের নাম আনন্দপুর। মামার বাড়ি। কথায় আছে মামার বাড়ি রসের হাঁড়ি। আসলেই তাই। পড়া নেই, বাধা নেই, যেখানে খুশি ঘুরে বেড়াও, যা খুশি খাও। এই তো মামার বাড়ি। গেল বছর পয়লা বৈশাখের ছুটিতে গিয়েছিলাম আনন্দপুর। সেখানে পয়লা বৈশাখে মেলা বসে। মামা বললেন, তোমাদের মেলা দেখতে নিয়ে যাব।
আমরা দুটি শখের হাঁড়ি কিনলাম। আবাক হলাম, পুতুলের পাশেই ঘোলা চোখে চেয়ে আছে এক চকচকে রূপালি ইলিশ। পদ্মার তাজা ইলিশের মতোই। তেমনি সাদা আঁশ, লাল ঠোঁট। আমরা একটা মাটির ইলিশও কিনলাম।
মামা বললেন, এগুলো হচ্ছে মাটির শিল্পকলা। শিল্পকলা কথাটি বেশ ভারী ভারী মনে হলো। মামা বুঝিয়ে বললেন, যখন কোনো কিছু সুন্দর করে আঁকি, সুন্দর করে বানাই, সুন্দর করে গাই, তখন তা হয় শিল্প। শিল্পের এ কাজকে বলে শিল্পকলা। আমাদের দেশের সবচেয়ে প্রাচীন শিল্প হচ্ছে মাটির শিল্প।
মূলভাব: বাংলাদেশের প্রাচীন শিল্পকলার পরিচয় পাওয়া যায় মাটির শিল্পে। এটা একেবারে এ দেশের নিজস্ব শিল্প। প্রতি বছর বৈশাখি মেলায় এসব শিল্পের বিপুল সমাবেশ ঘটে। আনন্দপুর গ্রামেও মেলা বসে। মেলায় বিক্রি হয় মাটির নানা রকম জিনিসপত্র। ময়নামতির শালবন বিহার, বগুড়ার মহাস্থানগড়ে দেখা যায় পোড়ামাটির ফলক বা টেরাকোটার নিদর্শন। তাই মাটির শিল্প আমাদের ঐতিহ্য ও গর্বের বিষয়।
১৬.
দুই বোন বাবা-মায়ের আদরের ছায়ায় বড় হয়। স্কুলে যাওয়ার পথে বুনোফুল ছিঁড়ে বেণির সঙ্গে গেঁথে রাখে। ফড়িং ধরে। আবার আকাশে উড়িয়ে দেয়। ফুলের পাপড়ি ছিঁড়ে খাতার ভেতর চাপা দিয়ে রাখে। শুকিয়ে গেলে বাবার কপালে লাগিয়ে দিয়ে বলে, বাবা তোমার হাজার বছর আয়ু হোক। মায়ের কপালে লাগিয়ে দিয়ে বলে, মা তোমার ভাতের হাঁড়ি ভরা থাকুক।
রুমার বয়স ১২। আর রুবার ১০। দুজনের জন্মদিন নিয়ে ওদের বাবা-মায়ের একেকটি গল্প আছে। ওদের মা রাহেলা বলে যেদিন রুমার জন্ম হয় সেদিন বাড়ির উঠোনের শিউলিগাছটা ফুলে ফুলে ভরে ছিল। এত ফুল নাকি আর কখনো দেখেনি রাহেলা বানু। খুশবু ছড়িয়ে গিয়েছিল চারদিকে।
দু মুঠো চাল মাটির কলসিতে জমিয়ে রাখেন রাহেলা বানু। রাতে কোনো মুক্তিযোদ্ধা এলে তাঁর জন্য ভাত রান্না করবেন। দুই বোন শুকনো লাকড়ি কুড়িয়ে এনে রান্নাঘরে জমিয়ে রাখে। যদি লাকড়ির দরকার হয় তখন কী দিয়ে ভাত রান্না করবেন মা? দুই বোন অধীর অপেক্ষায় থাকে।
মূলভাব: নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দিয়েছে এ দেশের অসংখ্য মানুষ। বাবার লাশ দেখে চুপ হয়ে যায় রুমা ও রুবা। এ থেকে তাদের ধারণা হয়— যুদ্ধ মানে বাবার মরে যাওয়া। রাতের আধারে মুক্তিযোদ্ধারা আসে তাদের বাড়িতে। বিশ্রাম নিয়ে চলে যায়। দু বোন অপেক্ষায় থাকে একটি ডাক শোনার জন্য— খুকুমনিরা, দরজা খোল, আমরা মুক্তিযোদ্ধা।
শিক্ষক, আইডিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঢাকা