চীনে যে ৫ কারণে অ্যাপল জিম্মি

ব্যবহারকারীদের তথ্যের সুরক্ষায় অ্যাপলের গলা বরাবরই বড়। তবে দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিবেদক জ্যাক নিকাস বলছেন, চীনে তাদের কথার সঙ্গে কাজের মিল অল্পই। দেশটির সরকারের কথা মেনে চলতে গিয়ে একরকম জিম্মি হয়ে পড়েছে মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি।

ব্যবহারকারীদের তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষায় বরাবরই দৃঢ় অঙ্গীকার দেখিয়েছেন অ্যাপলের সিইও টিম কুকরয়টার্স

১.

চীন ও অ্যাপলের মধ্যে সম্পর্ক বুঝতে হলে প্রথমেই জেনে রাখা ভালো, অ্যাপল এখন তাদের প্রায় সব পণ্য চীনে তৈরি করে। দেশটিতে বছরে মোট সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি ডলারের পণ্যও বিক্রি করে তারা।

চীনে অ্যাপলের পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা (সাপ্লাই চেইন) এত বড় আর জটিল যে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা মনে করেন, বিশ্বের আর কোনো দেশের সঙ্গে সেটির তুলনা সম্ভব নয়। চীনা বেড়াজালে আটকা পড়ার সেটাও একটা কারণ।

২.

২০১৩ সালে সি চিন পিং চীনের প্রেসিডেন্ট হলে জল আরও ঘোলা হয়। চীনে পশ্চিমা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর কমিউনিস্ট পার্টির নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর চেষ্টা করেন তিনি। এতে নানা বিষয়ে আপস করতে হয় অ্যাপলকে। অনেক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা তো অ্যাপলের চেয়েও করুণ। বহু চেষ্টা-তদবির করেও গুগল ও ফেসবুক সেখানে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারেনি।

৩.

গত মাসে চীনের গুইজৌ প্রদেশে একটি ভবন উদ্বোধন করা হয়। সেটির সামনে অ্যাপল ও চীনের পতাকা উড়ছে। আর ভেতরের সারি সারি ডেটা সার্ভারে অ্যাপল তাদের চীনা গ্রাহকদের তথ্য সংরক্ষণ করে। সেখানে গ্রাহকদের ই-মেইল, ছবি, নথি ও অন্যান্য তথ্যও আছে। ভবনটির মালিকানা ও পরিচালনায় আছে চীনের রাষ্ট্রমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান।

অ্যাপল যথারীতি বলেছে, ব্যবহারকারীর তথ্য নিরাপদেই আছে। তবে জ্যাক নিকাস ও তাঁর সহকর্মীদের তদন্তে দেখা যায়, সে তথ্যের নিয়ন্ত্রণ বহুলাংশে চীন সরকারের হাতে ছেড়ে দিতে হয়েছে।

চীনে অ্যাপলের পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা এত বড় আর জটিল যে সেই বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন। ছবিটি অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের
রয়টার্স

চীন সরকারের নিযুক্ত কর্মীরা ডেটা সার্ভারটির ব্যবস্থাপনায় কাজ করে। সেই ডেটা সেন্টারে ব্যবহারকারীদের তথ্যের এনক্রিপশনের গোপন কোড সংরক্ষণ করে অ্যাপল। আর বিশ্বের অন্যান্য দেশে ডেটা এনক্রিপশনের যে পদ্ধতি অ্যাপল ব্যবহার করে, চীনা সরকারের বাধার মুখে সে পদ্ধতি বদলাতে বাধ্য হয় তারা।

দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের হয়ে যে চার নিরাপত্তা গবেষক অ্যাপলের গোপন নথি পর্যালোচনা করেছেন, তাঁরা বলেছেন, চীনের সঙ্গে অ্যাপলের সমঝোতার পর ব্যবহারকারীর তথ্যে চীনের নজরদারি বন্ধ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে অ্যাপলের জন্য।

৪.

চীনের সরকারি কর্মকর্তাদের মনঃপূত না হলে চীনে আইফোনের অ্যাপ মুছে ফেলার সিস্টেম তৈরি করেছে অ্যাপল। দেশটিতে ক্রমেই আইওএস অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপ ও গেম উধাও হয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পরিমাণটা বেড়েছে কয়েক গুণ। তা ছাড়া, তিব্বত ও তাইওয়ানের স্বাধীনতা এবং দালাই লামার মতো ‘নিষিদ্ধ’ বিষয়ের একটা তালিকা আছে অ্যাপলের।

৫.

অ্যাপল বলেছে, যস্মিন দেশে যদাচার। অর্থাৎ যে দেশে ব্যবসা করছে, সম্মতি না থাকলেও সে দেশের আইন মেনে চলে তারা।

সঙ্গে যোগ করেছে, গ্রাহকের তথ্য নিরাপদ রাখতে যা যা সম্ভব, তা-ই করে তারা।

এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, ‘চীন কিংবা বিশ্বের কোথাও আমাদের ব্যবহারকারী কিংবা তাঁদের তথ্যের নিরাপত্তার সঙ্গে কখনো আপস করিনি আমরা।’

সূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস