চেতনা

আঁকা: রাজীব
আঁকা: রাজীব

চেতনা। তাকে আমি প্রথম দেখি ফেসবুকে; আমি কেন, সবাই তাকে ফেসবুকেই দেখে। সে ফেসবুকে মাঝেমধ্যে চরম পর্যায়ের ‘অ্যাকটিভ’, মারমার কাটকাট স্ট্যাটাস পোস্ট করে ফেসবুকের নিউজফিডে বান ডাক আনে! এলাহি কাণ্ড যাকে বলে আর কি! আবার মাঝেমধ্যে ফেসবুক আইডি ডিঅ্যাকটিভেট করে সে যেন কোথায় হারিয়ে যায়! চেতনার ফেসবুকে অ্যাকটিভ থাকা আর ডিঅ্যাকটিভেট থাকার হার শেয়ারবাজারের সূচকের মতো। যখন খুব দরকার, তখন হঠাৎ করে সূচক ধপ করে নিচে নেমে যাবে। আবার কখনো কখনো মনে হয় সে যেন কোনো অভিমানী প্রেমিকা! প্রেমিকের সঙ্গে রাগ করে হুটহাট ফেসবুক আইডি ডিঅ্যাকটিভেট করে দেয়!
চেতনা আবার ফেসবুকে ফিরে আসে হঠাৎ করে। এসেই কতগুলো জ্বালাময়ী স্ট্যাটাস দেয়। ‘স্ট্যাটাসের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’—এই যেন তার মূলনীতি। আর সেসব স্ট্যাটাস নিয়ে মানুষের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক-প্রশংসারও কমতি নেই। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, তাকে নিয়ে সব সময় আমরা দুভাগে ভাগ হয়ে যাই। কেউ কেউ তার পক্ষ নিয়ে কথা বলে, আবার কেউ কেউ বলে সম্পূর্ণ বিপরীতে গিয়ে। তার কথাবার্তা নিয়ে ফেসবুকে দুই পক্ষের মধ্যে বিশাল হাঙ্গামা বাধে। তুমুল বেগে চলে ইট-পাথরের মতো কমেন্টের ছোড়াছুড়ি!
এই পরিপ্রেক্ষিতে বলতে গেলে চেতনা যে কেবল ফেসবুকেই আছে, সেটা একটা দারুণ স্বস্তির ব্যাপার। চেতনা যদি প্রতিদিনকার জীবনেও অবস্থান করত, তাহলে রক্তের বন্যায় অন্যায় ভাসত কি না জানি না! তবে রক্তের বন্যায় বাদবাকি সবকিছু যে পগারপার হতো, সেটা মোটামুটি বুদ্ধিসুদ্ধি আছে এমন যে–কেউই মেনে নেবেন।
তবে ব্যাপার হলো, সে যে কখন ঘুমায় কখন জেগে থাকে, সেটাই বোঝা যায় না! বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সময় সে ঘুমিয়ে থাকে। আবার দেখা যায়, লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও অস্কার পাওয়ার পর কোন অভিনেত্রী কী বলল, তা নিয়ে সে জাগ্রত হয়, ফেসবুকে জ্বালাময়ী স্ট্যাটাস দেয়! তার সমাজসচেতনতা দেখে মনে হয়, ফেসবুকে সে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কিংবা রাজা রামমোহন রায়ের মতো না হলেও তাঁদের কাছাকাছি মানের কোনো সমাজসংস্কারক হয়ে যাবে! ক্রিকেট বলুন আর ইতিহাস—সে সবকিছুতেই ‘এক্সপার্ট’। কোন ম্যাচে বাংলাদেশের কী কী ভুল ছিল কিংবা বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য কে দায়ী—সব যেন তার একদম নখদর্পণে! মাঝেমধ্যে সে আবার গোপাল ভাঁড়। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সে এত মজার মজার কথাবার্তা আর ছবি শেয়ার করে যে হাসতে হাসতে আপনার হাত থেকে মোবাইল ফোনটাই পড়ে যাবে। আবার মাঝেমধ্যে তার কথাবার্তা শুনে আপনার ইচ্ছা করবে হাতের মোবাইল ফোনটা নিজের মাথায় ঠুকে সব সমস্যার সমাধান করে ফেলি!
তাকে একবার ফেসবুকে পেলাম। ভাবলাম, সে সময় সময় কোথায় থাকে—এটা তাকে জিজ্ঞেস করব। মেসেজ লিখতে গেলাম। কিন্তু ওমা! এ কী! মেসেজ টাইপ করলাম, সেন্ড করব, এর মাঝেই দেখি সে হাওয়া! ঘুমাল তো ঘুমাল, আবার কবে আসবে কে জানে!
ফেসবুকে তার সম্পর্কে কোনো তথ্যই নেই! সে কোথায় থাকে, কী করে, তার কোনো ফোন নম্বর, প্রোফাইল পিকচার বা কভার ফটো—কিছুই নেই। শুধু তার প্রোফাইলের অ্যাবাউটে লেখা ‘ওয়ার্কিং অ্যাট সমাজ’।
মাঝেমধ্যে ভাবি, তার মতো চিন্তাশীল একজন যদি ফেসবুকের সমাজের বাইরে এসে আমাদের বাস্তব সমাজে কাজ করত, তাহলে দেশ এত দিনে উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে ভেসে কই যে চলে যেত! সে যাহোক, আপনারা যদি তার সঙ্গে যোগাযোগের কোনো পথ বাতলে দিতে পারেন, তাহলে একটু জানাবেন, এই আমার নিবেদন! তাকে কিছু প্রশ্ন করার ছিল!