
কেনিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র মানুষের বেশির ভাগই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। সেখানে চোখের কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বর্তমানে পৃথিবীতে দৃষ্টিশক্তিহীন মানুষের সংখ্যা সাড়ে ২৮ কোটি। আর তাদের বেশির ভাগেরই চোখের সমস্যাই সমাধান করা সম্ভব। শুধু চশমা বা ছোট অস্ত্রোপচারের সাহায্যে তাদের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনা যাবে।
ধারণা করা হয়, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী প্রতি পাঁচজনের মধ্যে চারজনের দৃষ্টি আবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব। লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ অ্যান্ড্রু বাস্তারস বলেন, ‘চিকিৎসক থাকলেও এখানে রোগী খুঁজে বের করাটা প্রায়ই সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। তারা খুবই দুর্গম এলাকায় থাকছে, যার আশপাশে কোনো চিকিৎসক নেই অথবা তারা অর্থের অভাবে দূরের পথ পাড়ি দিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে পারছে না।’ তবে তিনি মনে করেন, এর সমাধান সহজেই করা সম্ভব। এ জন্য তিনি বেছে নিয়েছেন স্মার্টফোন। সামান্য প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ কাজ করা সম্ভব হবে। এ জন্য তিনি একটি স্মার্টফোন অ্যাপ পরীক্ষা করে দেখছেন। অ্যাপটির নাম ‘পোর্টেবল আই এগজামিনেশন কিট’, সংক্ষেপে ‘পিক’। শুরুতেই তিনি এটি কেনিয়ার পাঁচ হাজার মানুষের ওপর ব্যবহার করছেন।
স্মার্টফোনের পর্দায় প্রদর্শিত সংকুচিত অক্ষরগুলো রোগীর প্রাথমিক দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষায় ব্যবহার করা হচ্ছে। অ্যান্ড্রু বাস্তারস বলেন, স্মার্টফোনের ক্যামেরার ফ্ল্যাশলাইট চোখের পরীক্ষা ও রেটিনা পরীক্ষার কাজে ব্যবহার করা হবে। রোগীর সব তথ্য ফোনে রেকর্ড করা থাকবে। এমনকি তাদের অবস্থান জিপিএসের মাধ্যমে রেকর্ড করা হবে। পরবর্তী সময়ে এটি ই-মেইলের মাধ্যমে চিকিৎসকের কাছে পৌঁছানো হবে। ফোনটির দাম তুলনামূলকভাবে কম, প্রায় ৩০০ পাউন্ড। অন্যদিকে চোখের পরীক্ষায় যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়, সেসবের দাম এক লাখ পাউন্ডের বেশি।
প্রশ্ন হচ্ছে, এর মাধ্যমে কি সঠিক রোগ নিরূপণ সম্ভব? কেনিয়ার নাকুরুতে পরীক্ষার জন্য যে ছবিগুলো তোলা হয়েছিল, তা লন্ডনের মুরফিল্ড চক্ষু হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গবেষণা এখনো সম্পূর্ণ হয়নি, তবে প্রাথমিক ফলাফল খুবই আশাব্যঞ্জক। এখন পর্যন্ত এ পদ্ধতিতে এক হাজার রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। —বিবিসি অবলম্বনে প্রদীপ সাহা