অধ্যায়-১১
প্রিয় শিক্ষার্থী, আজ জীববিজ্ঞান ২য় পত্রের অধ্যায়-৭ থেকে সৃজনশীল পদ্ধতির একটি নমুনা প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।
# পলাশ সাহেব লক্ষ করছেন, তাঁর ছেলে তারিক লাল-সবুজ রঙের পার্থক্য বুঝতে পারে না। তার মেয়ে অর্পিতার এ ধরনের কোনো সমস্যা না থাকলেও স্ত্রী সেঁজুতির তারিকের মতো একই ধরনের সমস্যায় ভুগছেন।
ক. বংশগতি কাকে বলে?
খ. সন্তানসন্ততি হুবহু মা-বাবার মতো না হওয়ার কারণ কী?
গ. উদ্দীপকের ঘটনাটি বংশগতির বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করো।
ঘ. তারিকের সমস্যার জন্য তার বাবা, না মা দায়ী? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তর: ক. যে প্রক্রিয়ায় মা-বাবার আকার, আকৃতি, চেহারা, দেহের গঠনপ্রকৃতি, শারীরবৃত্ত, আচরণ ইত্যাদি নানাবিধ বৈশিষ্ট্য বংশানুক্রমে তাঁদের সন্তানসন্ততির দেহে সঞ্চারিত হয়, তাকে বংশগতি বলে।
উত্তর: খ. নানা ক্ষেত্রে মা-বাবার সঙ্গে সন্তানসন্ততির বৈশিষ্ট্যের মিল দেখা গেলেও সন্তানসন্ততি কখনো হুবহু মা-বাবার মতো হয় না। এমনকি, একই মা-বাবার সন্তানসন্ততিরাও এক রকম হয় না। এভাবে দেখা যায়, একই প্রজাতির বিভিন্ন সদস্যের মধ্যেও কমবেশি কিছু পার্থক্য রয়েছে, যাকে প্রকরণ বলা হয়। প্রকরণ প্রধানত দুই প্রকার। যথা: ১. বংশগতীয় প্রকরণ এবং ২. পরিবেশগত প্রকরণ। প্রথমটি জীনের গঠনগত তারতম্যের কারণে এবং দ্বিতীয়টি পরিবেশের প্রভাবে সংঘটিত হয়।
উত্তর: গ. উদ্দীপকের ঘটনাটি সেক্স-লিংকড বংশগতির। সেক্স ক্রোমোসোমের মাধ্যমে সেক্স-লিংকড বৈশিষ্ট্যের বংশপরম্পরায় সঞ্চারিত হওয়াকে সেক্স-লিংকড বংশগতি বলে। নিচে সেক্স-লিংকড বংশগতির বৈশিষ্ট্যগুলো দেওয়া হলো:
১. বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জিন শুধু x ক্রোমোসোমে থাকে, y ক্রোমোসোমে নয়।
২. এ জিন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রচ্ছন্ন প্রকৃতির।
৩. সেক্স-লিংকড বৈশিষ্ট্য মহিলাদের চেয়ে পুরুষে বেশি প্রকাশিত হয়। কারণ, পুরুষে এ জিন উপস্থিত থাকলেই বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটে, কিন্তু স্ত্রীতে হোমোজাইগাস অবস্থায় প্রকাশ ঘটে।
৪. সেক্স-লিংকড বৈশিষ্ট্যধারী পুরুষের সব কন্যাসন্তানই এই বৈশিষ্ট্যের বাহক হবে, কোনো পুত্রসন্তানে এ জিন সঞ্চারিত হয় না।
৫. সেক্স-লিংকড বৈশিষ্ট্যধারী স্ত্রীর সব পুত্রসন্তানে বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটে, কিন্তু কন্যারা বাহক হয়।
উত্তর: ঘ. তারিকের এ সমস্যার জন্য তার মা দায়ী। বিভিন্ন রঙের পার্থক্য বুঝতে না পারা হলো বর্ণান্ধতা, যা একটি সেক্স-লিংকড বৈশিষ্ট্য। অর্থাত্, বর্ণান্ধতা সেক্স ক্রোমোসোমে উপস্থিত জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। সেক্স-লিংকড বংশগতির বৈশিষ্ট্য অনুসারে এই জীন x ক্রোমোসোমে থাকে এবং এরা প্রচ্ছন্ন প্রকৃতির। নারীর সেক্সন ক্রোমোসোম xx এবং পুরুষের xy বর্ণান্ধ (xc×xc) মহিলার সঙ্গে যদি স্বাভাবিক (x+y) পুরুষের বিয়ে হয়, তবে তাদের পুত্র বর্ণান্ধ ও কন্যা বাহক হবে।
মাতা-পিতা: ফিনোটাইপ ® বর্ণান্ধ মহিলা x স্বাভাবিক পুরুষ
জিনোটাইপ® xc xc
গ্র্যামিট® xc xc x+ y
x1জিনু: জিনোটাইপ ® x+xc xcy x+xc xcy
ফিনোটাইন্বর্ণান্ধ বাহক কন্যা (x+xc)এবং বর্ণান্ধ পুত্র (xcyc)
উল্লিখিত ক্রস থেকে দেখা যায়, বর্ণান্ধ সেঁজুতির (xc×xc) থেকে একটি xc ক্রোমোসোম স্বাভাবিক দৃষ্টিসম্পন্ন পলাশের (x+y) x+ ক্রোমোসোমের সঙ্গে জোড় গঠন করে। ফলে, কন্যা অর্পিতা (x+×xc) বর্ণান্ধতার বাহক হয়। অন্যদিকে বর্ণান্ধ সেঁজুতির xc ক্রোমোসোম স্বাভাবিক দৃষ্টিসম্পন্ন পলাশের y ক্রোমোসোমের সঙ্গে জোড় গঠন করায় পুত্র তারিক (xcy) বর্ণান্ধ হয়। সুতরাং, উপরিউক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, পুত্রের বর্ণান্ধতার জন্য পলাশ সাহেবের কোনো ভূমিকা নেই। তারিকের বর্ণান্ধতার জন্য তার মা সেঁজুতিই দায়ী।
প্রভাষক
রূপনগর মডেল স্কুল ও কলেজ, ঢাকা