জী ব বি জ্ঞা ন ১ ম প ত্র

অধ্যায়-৮ 
প্রিয় শিক্ষার্থী, আজ জীববিজ্ঞান ১ম পত্রের অধ্যায়-৮ থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।

প্রশ্ন:
ক. টিস্যুতন্ত্র কাকে বলে?
খ. উদ্ভিদের সেকেন্ডারি বৃদ্ধি হয় কেন?
গ. চিত্র-P কীভাবে চিত্র-Q হতে আলাদা? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. চিত্র P ও Q চিত্রের মধ্যে একটি উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখলেও অন্যটি ছাড়া উদ্ভিদের পরিপক্বতা অসম্ভব—বিশ্লেষণ কর।

উত্তর: ক. একই ধরনের শারীরবৃত্তীয় বা যান্ত্রিক কাজ সম্পাদনে নিয়োজিত এক বা একাধিক টিস্যুকে টিস্যুতন্ত্র বলে।

উত্তর: খ. শীর্ষস্থ ভাজক টিস্যুর কোষসমূহের বিভাজন ও বিকাশের মাধ্যমে উদ্ভিদের প্রাথমিক স্থায়ী টিস্যুসমূহের সৃষ্টি হয়। স্থায়ী টিস্যু বিধায় এসব টিস্যুর আর অধিক বৃদ্ধি হয় না। কিন্তু শীর্ষস্থ টিস্যু ক্রমাগত বিভাজনের মাধ্যমে উদ্ভিদকে দৈর্ঘ্যে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত করে এবং নতুন নতুন শাখা-প্রশাখা সৃষ্টি করে থাকে। নতুন শাখা-প্রশাখা সৃষ্টি হওয়ায় মাটি হতে অধিক পরিমাণে পানি ও খনিজ লবণ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় এবং এসব নতুন সৃষ্ট শাখা-প্রশাখা ও পাতার ভার বহনের জন্যও নিচের অংশে ভারবহনকারী টিস্যুর প্রয়োজন দেখা দেয়। এ প্রয়োজন মেটানোর জন্যই উদ্ভিদের মূল ও কাণ্ডের বেড় বৃদ্ধির মাধ্যমে নতুন পরিবহন টিস্যু ও নতুন ভারবহনকারী টিস্যুর সৃষ্টি হয়। সেকেন্ডারি বৃদ্ধি না হলে উদ্ভিদের বেড় বৃদ্ধি পায় না।

উত্তর: গ. চিত্র-P ভাজক টিস্যু। আর চিত্র-Q কোলেনকাইমা টিস্যু, যা একধরনের স্থায়ী টিস্যু। নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যের কারণ চিত্র-P (ভাজক টিস্যু) হতে চিত্র-Q (স্থায়ী টিস্যু) আলাদা।
১. চিত্র-P (ভাজক টিস্যু) এর কোষগুলো বিভাজনে সক্ষম। কিন্তু চিত্র-Q (স্থায়ী টিস্যু) কোষগুলো বিভাজনে অক্ষম।
২. ভাজক টিস্যু অপরিণত। কিন্তু স্থায়ী টিস্যু পরিণত।
৩. ভাজক টিস্যুতে কোষের নিউক্লিয়াস আকারে বড় ও সাইটোপ্লাজম ঘনীভূত অবস্থায় থাকে। অপর পক্ষে স্থায়ী টিস্যুতে কোষের নিউক্লিয়াস আকারে অপেক্ষাকৃত ছোট ও সাইটোপ্লাজম ঘনীভূত অবস্থায় থাকে না।
৪. ভাজক টিসু্যু উদ্ভিদের বৃদ্ধিসাধন করে। কিন্তু উদ্ধিদের বৃদ্ধিতে স্থায়ী টিস্যুর কোনো ভূমিকা নেই।
৫. ভাজক টিস্যুতে কোনো কোষাবকাশ থাকে না। স্থায়ী টিস্যুতে সাধারণত কোষাবকাশ থাকে।
৬. যান্ত্রিক কাজে ভাজক টিস্যুর কোনো ভূমিকা নেই। কিন্তু স্থায়ী টিস্যু উদ্ভিদের যান্ত্রিক দৃঢ়তা বাড়ায়।
৭. ভ্রূণাবস্থাতেই ভাজক টিস্যুর সৃষ্টি হয়। আর ভাজক টিস্যু থেকেই স্থায়ী টিস্যুর সৃষ্টি হয়।
৮. উদ্ভিদের বর্ধিষ্ণু অঞ্চলে ভাজক টিস্যু অবস্থান করে। কিন্তু বর্ধিষ্ণু অঞ্চলে স্থায়ী টিস্যু থাকে না।
৯. খাদ্য পরিবহনে ভাজক টিস্যুর কোনো ভূমিকা নেই। জাইলেম ও ফ্লোয়েম নামক স্থায়ী টিস্যু যথাক্রমে পানি ও উৎপাদিত খাদ্য পরিবহন করে।
১০. ভাজক টিস্যুর কোষপ্রাচীর পাতলা। স্থায়ী টিস্যুর কোষপ্রাচীর পুরু হয়।

উত্তর: ঘ. চিত্র-P ভাজক টিস্যু। ভাজক টিস্যুর কোষগুলো বিভাজন ক্ষমতাসম্পন্ন। ভাজক টিস্যুর কোষগুলো ভ্রূণ অবস্থায় সৃষ্টি হয় এবং ভ্রূণ অবস্থায় তা বিভাজিত হয়ে পূর্ণাঙ্গ উদ্ভিদের সৃষ্টি করে। বিশেষ করে উদ্ভিদের কোষগুলো মূল, কাণ্ড বা পাতার অগ্রভাগে বিদ্যমান থেকে মূলের বৃদ্ধি, কাণ্ডের বৃদ্ধির মাধ্যমে উদ্ভিদের দৈহিক বৃদ্ধি করে থাকে। কিন্তু উদ্ভিদের শুধু যদি বৃদ্ধিই ঘটত, তবে উদ্ভিদের আকার-আকৃতি সুস্থিত হতো না। ফলে উদ্ভিদ তার জীবনচক্র এবং খাদ্য গ্রহণ ও অন্যান্য জৈবনিক কার্যাবলি সম্পন্ন করতে পারত না। তাই কোষগুলোর তথা কোষ দ্বারা সৃষ্ট উদ্ভিদের পরিপক্বতা প্রয়োজন। যে টিস্যু বিভাজনে অক্ষম এবং পরিপূর্ণরূপে বিকশিত, তাকে স্থায়ী টিস্যু বলে। চিত্র-Q একধরনের স্থায়ী টিস্যু। ভাজক টিস্যুর কোষগুলো বিভাজনক্ষমতা হারিয়ে স্থায়ী টিস্যুতে পরিণত হয়। স্থায়ী টিস্যু উদ্ভিদের বিভিন্ন জৈবনিক কাজকে সুচারুভাবে সম্পন্ন করার জন্য বিভিন্নভাবে বিন্যস্ত হয়ে বিভিন্ন আকার-আকৃতিতে পরিবর্তিত হয়ে নির্দিষ্ট ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়। এদের সরল বা জটিল বিভিন্ন টিস্যুতে বিন্যস্ত করা হয় অর্জিত ক্ষমতার ভিত্তিতে। কোনো টিস্যু দৃঢ়তা প্রদানের কাজে, কোনো টিস্যু খাদ্য প্রস্তুতের কাজে, আবার কোনো টিস্যু খাদ্য পরিবহনের কাজে নিয়োজিত। এভাবে এসব টিস্যুর মাধ্যমে উদ্ভিদের সব জৈবনিক ক্রিয়া সম্পন্ন হয় এবং উদ্ভিদ পরিপক্বতা অর্জন করে। আর এসব তখনই সম্ভব হয়, যখন ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোষগুলো বিভাজিত না হয়ে পরিপক্বতা লাভ করে এবং ক্ষেত্রবিশেষে প্রয়োজন অনুসারে কোষের সব সজীব উপাদান হারিয়ে নির্জীব বা মৃত কোষে পরিণত হয়। এসব কোষ সামগ্রিকভাবে স্থায়ী টিস্যুর অংশ। অর্থাৎ উদ্ভিদের পরিপক্বতার জন্য চিত্র-Q (স্থায়ী টিস্যু) ছাড়া পরিপক্বতা অসম্ভব।

রূপনগর মডেল স্কুল ও কলেজ, ঢাকা