প্রিয় শিক্ষার্থী, আজ জীববিজ্ঞান ১ম পত্রের অধ্যায়-৯ থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।
# কনক বিভিন্ন ধরনের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকে। একদিন সে একটি বড় কাচের বোতলে দুটি মাছ, কিছু সবুজ জলজ উদ্ভিদ ও পানি নিয়ে বোতলটিকে কর্ক দিয়ে এঁটে দিল। তারপর বোতলটিকে এমনভাবে রেখে দিল, যাতে দিনে পর্যাপ্ত সূর্যালোক পায়।
প্রশ্ন:
ক. ফটোসিস্টেম কাকে বলে?
খ. সালোকসংশ্লেষণ উদ্ভিদের পাতায় হয় কেন?
গ. উল্লিখিত অবস্থায় উদ্ভিদ ও মাছগুলো কার্বন ডাই-অক্সাইড উত্পন্ন করবে কি? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বোতলটিকে সূর্যালোকে রাখার যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: ক. ক্লোরোফিল অণুসমূহ এবং তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইলেকট্রন গ্রহীতাসমূহ একসঙ্গে একটি ইউনিট হিসেবে অবস্থান করে। এই ইউনিটকে ফটোসিস্টেম বলে।
উত্তর: খ. সালোকসংশ্লেষণ একটি জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া। কার্বন ডাই-অক্সাইড, পানি, আলো ও ক্লোরোফিলের উপস্থিতিতেই শুধুমাত্র সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। উদ্ভিদের সবুজ অংশ, বিশেষ করে পাতাতেই থাকে সালোকসংশ্লেষণের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ক্লোরোফিল। উদ্ভিদের অন্যান্য অঙ্গ যেমন: কাণ্ড ও মূলে কোনো ক্লোরোফিল থাকে না। এ জন্য সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া উদ্ভিদের পাতায় সম্পন্ন হয়।
উত্তর: গ. উল্লিখিত অবস্থায় উদ্ভিদ ও মাছগুলো কার্বন ডাই-অক্সাইড উত্পন্ন করবে। প্রতিটি জীব শ্বসনের সময় কার্বন ডাই-অক্সাইড উত্পন্ন করে। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পানি, সূর্যালোক ও কার্বন ডাই-অক্সাইড কাজে লাগিয়ে উদ্ভিদ শর্করাজাতীয় খাদ্য প্রস্তুত করে থাকে। উদ্ভিদের বেঁচে থাকার জন্য শক্তি প্রয়োজন। শক্তির জন্য উদ্ভিদ তার দেহে সঞ্চিত খাদ্য ব্যবহার করে থাকে। এ শক্তি উত্পাদনের প্রক্রিয়াই হলো শ্বসন। শ্বসন প্রক্রিয়ায় জীবকোষস্থ জটিল জৈব যৌগসমূহ জারিত হয়ে সঞ্চিত স্থিতিশক্তিকে গতিশক্তিতে রূপান্তরিত করে। শ্বসনের ফলে নির্গত এই শক্তি জীবের বিভিন্ন শক্তি শোষণকারী কাজে ব্যবহূত হয়। গ্লুকোজকে প্রাথমিক শ্বসনিক বস্তু হিসেবে ধরা হয়। শ্বসন প্রক্রিয়ায় কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়। উদ্ভিদ বা প্রাণী যা-ই হোক না কেন শ্বসনে জটিল জৈব যৌগসমূহের জারন ঘটে। তাই অবশ্যই কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হবে। এ জন্য উল্লিখিত অবস্থায় উদ্ভিদ ও মাছগুলো কার্বন ডাই-অক্সাইড উত্পন্ন করবে।
উত্তর: ঘ. সবুজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য উত্পন্ন করে। সমগ্র প্রাণীজগত্ খাদ্যের জন্য উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ শর্করাজাতীয় খাদ্য উত্পন্ন করে। প্রথম শ্রেণীর খাদক উদ্ভিদকে সরাসরি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। বোতলের ভেতরে রাখা জলজ উদ্ভিদগুলো সূর্যালোক ব্যবহার করে খাদ্য উত্পাদন করেছিল। কনক বোতলটিতে মাছ ও জলজ উদ্ভিদ রেখেছিল প্রধানত দুটি কারণে। প্রথমত, জলজ উদ্ভিদগুলো যেন সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন উত্পন্ন করতে পারে। কারণ, অক্সিজেন ছাড়া জীব বেঁচে থাকতে পারে না। বোতলটি এমন অবস্থায় আছে, যাতে বাইরের বাতাস ও ভেতরের বাতাসের বিনিময় ঘটতে না পারে। তাই বোতলের ভেতরে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন উত্পাদনের জন্য এটিকে পর্যাপ্ত সূর্যালোকে রাখা হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, খাদ্য উত্পাদনের জন্য সূর্যালোক প্রয়োজন। সূর্যালোক ছাড়া জলজ উদ্ভিদ খাদ্য তৈরি করতে পারবে না। বোতলের ভেতরের মাছগুলোও খাদ্যের জন্য জলজ উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল। আবার মাছের শ্বসনের ফলে নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইড জলজ উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় ব্যবহূত হয়। মূলত জলজ উদ্ভিদের খাদ্য উত্পাদনের প্রয়োজনেই বোতলটিকে সূর্যালোকে রাখা যৌক্তিক ছিল।