জী ব বি জ্ঞা ন ১ ম প ত্র

মোহাম্মদ আক্তার উজ জামান, প্রভাষক, রূপনগর মডেল স্কুল ও কলেজ, ঢাকা

অধ্যায়-১১

প্রিয় শিক্ষার্থী, আজ জীববিজ্ঞান ১ম পত্রের অধ্যায়-১১ থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।

প্রশ্ন:

ক. রেসট্রিকশন এনজাইম কী?

খ. বায়োগ্যাস বলতে কী বোঝায়?

গ. উদ্দীপকের প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করো।

ঘ. উদ্ভিদ প্রজনন ও উন্নত জাত উদ্ভাবনে উল্লিখিত প্রক্রিয়াটির ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: ক. যে এনজাইম প্রয়োগ করে DNA অণুর সুনির্দিষ্ট অংশ কর্তন করা যায়, তাকে রেসট্রিকশন এনজাইম বলে।

উত্তর: খ. যেকোনো পচনশীল জৈব পদার্থ যেমন: গোবর, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা, মলমূত্র, আবর্জনা, লতাপাতা, গৃহস্থালির বর্জ্য ইত্যাদি বাতাসের অনুপস্থিতিতে বিশেষভাবে পচনের ফলে যে বর্ণহীন গ্যাস উৎপন্ন হয়, তাকে বায়োগ্যাস বলে। বায়োগ্যাসের শতকরা ৬০-৭০ ভাগ মিথেন। তাই একে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। সাধারণত অবায়বীয় ব্যাকটেরিয়ার কার্যকারিতায় গোবর, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা, মানুষের মল, সকল প্রকার আবর্জনা ইত্যাদি পচে এ গ্যাস সৃষ্টি হয়।

উত্তর: গ. উদ্দীপকের প্রক্রিয়াটি টিস্যু কালচার। নিচে টিস্যু কালচার প্রক্রিয়াটি বর্ণনা করা হলো:

১. এক্সপ্লান্ট নির্বাচন: এক্সপ্লান্ট হলো ওই উদ্ভিদাংশ, টিস্যু কালচারে ব্যবহারের জন্য যাকে কোনো উদ্ভিদ থেকে পৃথক করা হয়। যে উদ্ভিদ থেকে এক্সপ্লান্ট নেওয়া হবে, ওই উদ্ভিদটি অবশ্যই নীরোগ ও উৎকৃষ্ট বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হতে হবে। ২. কালচার মিডিয়াম: টিস্যু কালচার কাজের জন্য প্রাথমিকভাবে একটি কালচার মিডিয়াম তৈরি করা আবশ্যক। উদ্ভিদের পুষ্টি ও বৃদ্ধির জন্য যেসব রাসায়নিক উপাদান প্রয়োজন হয়, তার সমন্বয়ে এ মিডিয়াম প্রস্তুত করা হয়। বিভিন্ন ধরনের মুখ্য ও গৌণ উপাদান, ভিটামিন, সুকরোজ, ফাইটোহরমোন প্রভৃতি এ মিডিয়ামে থাকা প্রয়োজন। ৩. জীবাণুমুক্তকরণ: কালচার মিডিয়ামে পুষ্টি উপাদান থাকে। ফলে এতে সহজেই জীবাণু জন্মাতে পারে। কিন্তু কালচার করার জন্য মিডিয়াম এবং এক্সপ্লান্ট অবশ্যই জীবাণুমুক্ত থাকা আবশ্যক। তাই মিডিয়ামকে কনিক্যাল ফ্লাস্ক বা টেস্টটিউবে ঢেলে নির্জীবকরণ তুলা দিয়ে পাত্রের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়, যাতে বায়ু ঢুকতে না পারে। এরপর পাত্রটিকে নির্জীবকরণ যন্ত্র দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা হয়।

৪. মিডিয়ামে এক্সপ্লান্ট স্থাপন: এক্সপ্লান্ট নির্জীব করে (সঙ্গে হাত, চিমটা ইত্যাদিকে অ্যালকোহল দিয়ে নির্জীব করতে হয়) সম্পূর্ণ নির্জীব অবস্থায় কাচের পাত্রে রাখা মিডিয়ামে স্থাপন করা হয়। ৫. ক্যালাস সৃষ্টি ও সংখ্যা বৃদ্ধি: মিডিয়ামে এক্সপ্লান্ট তথা টিস্যু স্থাপনের পর পাত্রটিকে একটি বৈদ্যুতিক আলো (৩০০০-৫০০০ লাক্স) ও তাপমাত্রা (১৭হ্ন-২০হ্ন সে.) নিয়ন্ত্রিত কক্ষে রাখা হয়। কয়েক দিন পর টিস্যুটি বারবার বিভাজিত হয়ে একটি কোষীয় মণ্ডে পরিণত হয়। এই কোষীয় মণ্ডকে ক্যালাস বলে। ক্যালাস থেকে একসময় অসংখ্য মুকুল সৃষ্টি হয়। ৬. চারা উৎপাদন: মুকুলগুলোকে সাবধানে কেটে নিয়ে মূল উৎপাদনকারী মিডিয়ামে রাখা হয় এবং সেখানে প্রতিটি মুকুল মূল সৃষ্টি করে পূর্ণাঙ্গ চারায় পরিণত হয়। ৭. চারা টবে স্থানান্তর: উপযুক্ত অসংখ্য সুগঠিত মূল সৃষ্টি হলে পূর্ণাঙ্গ চারাগাছ কালচার করা পাত্র থেকে সরিয়ে নিয়ে ধীর প্রক্রিয়ায় সাবধানতার সঙ্গে টবে স্থানান্তর করা হয়। ৮. প্রাকৃতিক পরিবেশে স্থানান্তর: টবসহ চারাগাছকে কিছুটা আর্দ্র পরিবেশে রাখা হয়। তবে রোপিত চারাগাছকে কক্ষের বাইরে রেখে মাঝে মাঝে বাইরের প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হয়। পূর্ণাঙ্গ চারাগাছগুলো সজীব ও সবল হয়ে উঠলে সেগুলোকে একপর্যায়ে প্রাকৃতিক পরিবেশে মাটিতে লাগানো হয়।

উত্তর: ঘ. উল্লিখিত প্রক্রিয়াটি টিস্যু কালচার। টিস্যু কালচার প্রযুক্তি উদ্ভিদ প্রজনন ও উন্নত জাত উদ্ভাবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিচে এর বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো:

১. চারা উৎপাদন: যেসব উদ্ভিদের বীজ উৎপাদন করা সম্ভব হয় না (যেমন: থুজা, সাগর কলা) সেসব উদ্ভিদের ক্ষেত্রে টিস্যু কালচার প্রয়োগ করে চারা গাছ উৎপাদন ও বিপণন করা যায়। ২. উদ্ভিদ সংরক্ষণ: বর্তমানে অনেক বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য টিস্যু কালচার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। কারণ, স্বল্প সময়ে উল্লিখিত উদ্ভিদ থেকে চারাগাছ উৎপাদন করা এ প্রযুক্তি ব্যবহারেই সম্ভব। ৩. ভ্রূণ কালচার: টিস্যু কালচার প্রযুক্তির আর একটি বিশেষ দিক হলো ভ্রূণ কালচার। ভ্রূণ কালচারের মাধ্যমে উদ্ভিদ প্রজননবিদ্যার অনেক সমস্যার সমাধান করা যায়। বিশেষ করে আন্তপ্রজাতি সংকরের ক্ষেত্রে ভ্রূণ পূর্ণতা লাভ না করায় সংকর উদ্ভিদ পাওয়া সম্ভব হয় না। সেসব ক্ষেত্রে সংকরায়ণের পর ভ্রূণ কালচার করা হয়। ফলে ভ্রূণ নষ্ট হয় না এবং পরে এ ভ্রূণ বিকাশ লাভ করে পূর্ণাঙ্গ সংকর উদ্ভিদ উৎপাদন করে। এভাবে উৎপাদিত সংকর উদ্ভিদের সাহায্যে উন্নত জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব। ৪. মেরিস্টেম কালচার: উদ্ভিদের শীর্ষমুকুলের অগ্রভাগের টিস্যুকে মেরিস্টেম বলে। মেরিস্টেম কালচারের মাধ্যমে উৎপাদিত চারাগাছ সাধারণত রোগমুক্ত হয়ে থাকে। কারণ, মেরিস্টেম টিস্যুতে কোনো রোগ-জীবাণু থাকে না। ৫. অধিক চারা উৎপাদন: টিস্যু কালচার পদ্ধতি প্রয়োগ করে একটি মাত্র উদ্ভিদ থেকে অল্প সময়ে অসংখ্য চারা উৎপাদন করা যায়।

৬. হ্যাপ্লয়েড লাইন: পরাগরেণু এবং পরাগধানী কালচারের মাধ্যমে হ্যাপ্লয়েড উদ্ভিদ উৎপাদন করা সম্ভব। বিভিন্ন উদ্ভিদের ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত হোমোজাইগাস লাইন পাওয়া অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ। কিন্তু পরাগরেণু বা পরাগধানী কালচারের মাধ্যমে হ্যাপ্লয়েড উদ্ভিদ উৎপন্ন করা সম্ভব হলে তা থেকে সহজেই ঈপ্সিত ডিপ্লয়েড উদ্ভিদ পাওয়া যায়। Gramineac, Sopanaceac ও Cruciferac গোত্রের হ্যাপ্লয়েড লাইন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে। ৭. কোষ আবাদ ও ক্যালাস টিস্যু আবাদ: কোষ আবাদ ও ক্যালাস টিস্যু আবাদ কৌশলের মাধ্যমে একদিকে দৈহিক ভ্রূণ ও অন্যদিকে অণুচারা ও সোমাক্লোনাল ভ্যারিয়েশন উৎপন্ন করার নবযুগের সূচনা হয়েছে। দৈহিক ভ্রূণ থেকে কৃত্রিম বীজ উৎপাদন ও সোমাক্লোনাল ড্যারিয়েশনকে কাজে লাগিয়ে উন্নত জাত যেমন: গম উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে।