জী ব বি জ্ঞা ন

মাসুক হেলাল
মাসুক হেলাল

অধ্যায়-৭

প্রিয় শিক্ষার্থীরা, আজ জীববিজ্ঞান বিষয়ের ৭ নম্বর অধ্যায় থেকে সৃজনশীল পদ্ধতির একটি নমুনা প্রশ্নোত্তর আলোচনা করব।
প্রশ্ন:
ক. ইলিশ মাছের বৈজ্ঞানিক নাম কী?
খ. প্রতিসাম্যের ভিত্তিতে মানুষ কোন ধরনের প্রাণী—ব্যাখ্যা করো।
গ. প্রতিকূল পরিবেশে P চিত্রের প্রাণীটি টিকে থাকলেও Q চিত্রের প্রাণীটির পক্ষে অসম্ভব—ব্যাখ্যা করো।
ঘ. চিত্রের প্রাণী দুইটি যে পর্বের অন্তর্গত, তাদের মধ্যে যে পর্বের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বেশি তা যুক্তিসহ বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: ক. ইলিশ মাছের বৈজ্ঞানিক নাম Tenualosa ilisha.
উত্তর: খ. প্রতিসাম্যের ভিত্তিতে মানুষ দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম প্রাণী। জীবদেহের বিভিন্ন অঙ্গের আনুপাতিক আকৃতি, গঠন, আকারের বিবরণ ইত্যাদিকে প্রতিসাম্য বলে।
আর মানুষের বিভিন্ন অঙ্গের আনুপাতিক আকৃতি ও গঠন অনুযায়ী মাত্র একটি তল দ্বারাই একে সমদ্বিখণ্ডিত করা যায়। তাই প্রতিসাম্যের ভিত্তিতে মানুষ দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম প্রাণী।

উত্তর: গ. P চিত্রের প্রাণীটি sarcomastigophorea পর্বের অ্যামিবা এবং  Q চিত্রের প্রাণীটি আর্থ্রোপোডা পর্বের। Q চিত্রের প্রাণীটি উন্নত হলেও এরা প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে পারে না।

প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার জন্য P চিত্রের প্রাণীটি (অ্যামিবা) দেহের চারদিকে একটি প্রাচীর গড়ে তোলে। একে সিস্ট আবরণী বলে।

সিস্টের ভেতরে অ্যামিবার নিউক্লিয়াস বহু বিভাজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিভাজিত হয়ে অসংখ্য স্পোর সৃষ্টি করে। শুরুতে নিউক্লিয়াসের আবরণী বিলুপ্ত হয় এবং নিউক্লিয়াসটি বারবার বিভাজিত হয়ে অনেক ক্রোমাটিন খণ্ডে বিভক্ত হয়।

এরপর ক্রোমাটিন খণ্ডগুলো নিউক্লিয়ার আবরণী, সাইটোপ্লাজম, প্লাজমালেমা ও স্পোর আবরণী দ্বারা পর্যায়ক্রমে বেষ্টিত হয়। এভাবে একটি অ্যামিবার দেহে শতাধিক স্পোর গঠিত হয়। পরে প্লাজমালেমা ভেদ করে এ স্পোরগুলো বাইরে মুক্ত হয় এবং অনুকূল পরিবেশ পেলে স্পোর থেকে অপত্য অ্যামিবা বাইরে মুক্ত হয়।

Q চিত্রের প্রাণীটির (arthropoda পর্বের) পক্ষে প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকা অসম্ভব। কারণ, প্রতিকূল পরিবেশে এরা সিস্ট গঠন করতে পারে না। এরা অ্যামিবার মতো সিস্ট গঠন করতে অক্ষম হওয়ায় Q চিত্রের প্রাণীটির পক্ষে প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকা অসম্ভব।

উত্তর: ঘ. P চিত্রের প্রাণীটি sarcomastigophorea পর্বের এবং Q চিত্রের প্রাণীটি arthropoda পর্বের।

এ দুইটি পর্বের মধ্যে arthropoda পর্বের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বেশি। নিচে তা যুক্তিসহ বিশ্লেষণ করা হলো:

১। Arthropoda প্রাণীজগতের সবচেয়ে বড় পর্ব। এরা পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র বিস্তৃত এবং সম্ভাব্য সব ধরনের পরিবেশে বসবাস করার জন্য অভিযোজিত।

২। এই পর্বের চিংড়ি ও কাঁকড়া সুস্বাদু আমিষ জাতীয় খাদ্য, যা তুলনামূলকভাবে কম খরচে চাষ করে প্রচুর লাভবান হওয়া যায়। তাই চিংড়ি ও কাঁকড়া চাষের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব।

৩। এই পর্বের মৌমাছি থেকে মধু ও মোম পাওয়া যায়। মৌমাছি বিভিন্ন ফুলের পরাগায়ণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৪। এই পর্বের রেশম মথ থেকে বিভিন্ন মানের রেশম সুতা পাওয়া যায়। রেশমি কাপড় সারা বিশ্বে সুন্দর ও মূল্যবান কাপড় হিসেবে সমাদৃত। রেশমি সুতা সার্জিক্যাল সুতা হিসেবে অস্ত্রোপচারের সময় ব্যবহার করা হয়।

৫। এ পর্বের বিভিন্ন প্রাণী (যেমন: ধানের হলুদ মাজরা পোকা, পাটের চেলে পোকা ইত্যাদি) পেস্ট নামে পরিচিত, যা মানুষের বিভিন্ন অর্থনৈতিক ফসলের ক্ষতি করে।

অপর দিকে sarcomastigophorea পর্বের অনেক প্রজাতি পরজীবী হিসেবে অন্য কোনো উদ্ভিদ বা প্রাণীর দেহে বাস করে।

সুতরাং ওপরের আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে দুইটি পর্বের মধ্যে arthropoda পর্বের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক বেশি।