বাংলা ২য় পত্র
ব্যাকরণ
প্রিয় শিক্ষার্থী, আজ বাংলা ২য় পত্রের প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।
শব্দ ও পদ
অর্থ হলো শব্দের প্রাণ। এক বা একাধিক ধ্বনির সম্মিলনে যদি কোনো নির্দিষ্ট অর্থ প্রকাশ পায়, তবে তাকে শব্দ বলে। যেমন: ক, ল, ম— এই তিনটি ধ্বনি একসঙ্গে জুড়ে দিলে হয় কলম (ক+ল+ম) ।
সুতরাং এটি একটি শব্দ। অর্থপূর্ণ শব্দ জুড়ে জুড়ে মানুষ তার মনের ভাব সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করে থাকে। কতগুলো অর্থপূর্ণ শব্দ যখন একত্র হয়ে বক্তার মনের ভাব সম্পূর্ণ প্রকাশ করে, তখন তাকে বাক্য বলে।
এবার লক্ষ করি: আমি, বাজার, যাই, — তিনটি অর্থপূর্ণ শব্দ।
আমি বাজারে যাই—একটি মনের ভাব প্রকাশক বাক্য।
এখানে ‘বাজার’ শব্দটি বাক্যে ব্যবহূত হওয়ার সময় কিছুটা (বাজার+এ) বদলে গেছে। বাক্যে ব্যবহূত হওয়ার সময় শব্দের শেষে এ ধরনের কিছু বর্ণ যোগ হয়। এগুলোকে বলে বিভক্তি। শব্দে বিভক্তি যুক্ত হলেই তাকে পদ বলা হয়। তাহলে বলা যায়: বিভক্তিযুক্ত শব্দকে অথবা বাক্যে ব্যবহূত প্রতিটি শব্দকে পদ বলে। পদ পাঁচ প্রকার: ১. বিশেষ্য ২. বিশেষণ ৩. সর্বনাম ৪. অব্যয় ও ৫. ক্রিয়া।
লিঙ্গান্তরের নিয়ম ও উদাহরণ
লিঙ্গ শব্দের অর্থ চিহ্ন বা লক্ষণ। বাংলা ভাষায় এমন অনেক শব্দ আছে, যেগুলো কোনোটি পুরুষ-জাতীয়, কোনোটি স্ত্রী-জাতীয়, কোনোটি আবার স্ত্রী-পুরুষ উভয়কেই বোঝায়। তাই যেসব চিহ্ন বা লক্ষণ দ্বারা শব্দকে পুরুষ, স্ত্রী বা অন্য জাতীয় হিসেবে আলাদা করা যায়, তাকে লিঙ্গ বলে।
লিঙ্গ চার প্রকার। যথা:
১. পুংলিঙ্গ বা পুরুষবাচক শব্দ। যেমন: বাবা, ছেলে, বিদ্বান, সুন্দর।
২. স্ত্রীলিঙ্গ বা স্ত্রীবাচক শব্দ। যেমন : মা, মেয়ে, বিদুষী, সুন্দরী।
৩. উভয় লিঙ্গবাচক শব্দ। যেমন: মানুষ, শিশু, সন্তান, বাঙালি।
৪. ক্লীবলিঙ্গ বা অলিঙ্গবাচক শব্দ। যেমন: বই, খাতা, চেয়ার, টেবিল।
পুংলিঙ্গ বা পুরুষবাচক শব্দকে স্ত্রীলিঙ্গ বা স্ত্রীবাচক শব্দে রূপান্তর করাকে লিঙ্গান্তর বা লিঙ্গ পরিবর্তন বলে। লিঙ্গ পরিবর্তনের কিছু সাধারণ নিয়ম আছে। যেমন:
১. পুরুষবাচক শব্দের শেষে —আ( া), —ঈ( ী), —নী, —আনী, —ইনি ইত্যাদি স্ত্রীপ্রত্যয় জুড়ে পুংলিঙ্গ শব্দকে স্ত্রীলিঙ্গে রূপান্তর করা যায়। যেমন: প্রথম > প্রথমা, বালক> বালিকা, ছাত্র > ছাত্রী, জেলে > জেলেনী।
২. কখনো কখনো ভিন্ন শব্দযোগেও পুংলিঙ্গ শব্দ স্ত্রীলিঙ্গবাচক শব্দে পরিবর্তন হয়। যেমন : বাবা > মা, ছেলে > মেয়ে, পুরুষ > নারী, সাহেব > বিবি, স্বামী > স্ত্রী, কর্তা > গিন্নি, ভাই > বোন, পুত্র > কন্যা, বর > কনে।
৩. শব্দের আগে পুরুষবাচক বা স্ত্রীবাচক শব্দ জুড়ে দিয়েও শব্দের লিঙ্গান্তর হয়ে থাকে। যেমন: পুরুষ মানুষ > মেয়ে মানুষ, হুলো বিড়াল > মেনি বিড়াল, মদ্দা ঘোড়া > মাদি ঘোড়া, ব্যাটাছেলে > মেয়েছেলে, এঁড়ে বাছুর > বকনা বাছুর, বলদ গরু > গাই গরু।
৪. কতকগুলো পুরুষবাচক শব্দের আগে মহিলা, নারী ইত্যাদি স্ত্রীবাচক শব্দ প্রয়োগ করে শব্দের লিঙ্গান্তর হয়। যেমন: কবি > মহিলা কবি, ডাক্তার > মহিলা ডাক্তার, সভ্য > নারী সভ্য, সৈন্য > নারী সৈন্য।
৫. কোনো কোনো শব্দের শেষে পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ যোগ করে পুংলিঙ্গ শব্দ স্ত্রীলিঙ্গবাচক শব্দে পরিবর্তন হয়। যেমন: গয়লা > গয়লা বউ, বোন পো > বোন ঝি, ঠাকুর পো > ঠাকুর ঝি।
৬. কতকগুলো শব্দে কেবল পুরুষ বোঝায়। যেমন: কবিরাজ, কৃতদার, অকৃতদার, বিপত্নীক, স্ত্রৈণ।
৭. কতকগুলো শব্দ শুধু স্ত্রীবাচক হয়। যেমন: সতীন, সৎমা, সধবা, এয়ো, দাই।
১. শব্দের শেষে ‘—আ’ প্রত্যয় যোগ করে:
আধুনিক > আধুনিকা, প্রবীণ > প্রবীণা
২. শব্দের শেষে ‘আ’ এর জায়গায় ‘—ই’ প্রত্যয় বসবে
চাচা > চাচি, নানা > নানি
৩. শব্দের শেষে ‘—ঈ’ প্রত্যয় যোগ করে:
ছাত্র-ছাত্রী, ময়ূর-ময়ূরী
৪.শব্দের শেষে ‘—নি/—নী’ প্রত্যয় যোগ করে:
কামার কামারনী, জেলে জেলেনি
৫. শব্দের শেষে ‘—আনি’/ ‘আনী’ প্রত্যয় যোগ করে:
ঠাকুর-ঠাকুরানি, নাপিত-নাপিতানি
৬. শব্দের শেষে ‘—ইনী’ প্রত্যয় যোগ করে:
নাগ-নাগিনী, বিদেশি-বিদেশিনী
৭. শব্দের শেষে ‘—ইকা’ প্রত্যয় যোগ করে:
লেখক-লেখিকা, অধ্যাপক-অধ্যাপিকা
৮. পুরুষবাচক শব্দের শেষে ‘তা’ থাকলে ‘ত্রী’ হয়: নেতা-নেত্রী, ধাতা-ধাত্রী
৯. পুরুষবাচক শব্দের শেষে ‘অত’, ‘বান’, ‘মান’, ‘ঈয়ান’ থাকলে ‘অতী’, ‘বতী’, ‘মতি’, ‘ঈয়সী’, হয়: শ্রীমান-শ্রীমতী, বুদ্ধিমান-বুদ্ধিমতি।
মোস্তাফিজুর রহমান লিটন, শিক্ষক
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, ঢাকা
# পরবর্তী অংশ ছাপা হবে আগামীকাল