জ-য, ন-ণ, ি- ী নিয়ে তালগোল

সব পাঠ্যবইয়ে সাধারণ ভুলটি হচ্ছে -িকার এবং ী-কার-এর ইচ্ছামতো ব্যবহার। ‘জ’ এবং ‘য’ কাছাকাছি বর্ণ হলেও শব্দের কোথায় কোনটির ব্যবহার হবে, তা নির্দিষ্ট করা আছে। কিন্তু পাঠ্যবই পড়ে শিক্ষার্থীরা এই দুটি অক্ষরের ব্যবহার সম্পর্কে বিভ্রান্ত হবে।একই শব্দের তিন ধরনের বানান পড়ে শিক্ষার্থী কোনটি শিখবে, এর জবাব শিক্ষক-শিক্ষার্থী কারও জানা নেই। অথচ নবম শ্রেণীর ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বইটির ৩ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘সুরা’, ১৭ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘সূরা’ এবং ১৬১ পৃষ্ঠায় ‘সুর’ লেখা হয়েছে। বইয়ের দুই নম্বর পৃষ্ঠায় ‘শাফায়াত, লেখা আছে। একই বানান ২৯ নম্বর পৃষ্ঠায় লেখা আছে ‘শাফা‘আত’।জ এবং য নিয়ে হ-য-ব-র-ল: নবম শ্রেণীর ইসলাম শিক্ষা বইটির ১৩৩ পৃষ্ঠায় ‘ওযু’ এবং ১৬৮ পৃষ্ঠায় ‘অযু’ লেখা আছে। ২১ পৃষ্ঠায় ‘ইনজিল’ লেখা আছে। একই শব্দ ‘ইঞ্জিল’ লেখা আছে ২৫ পৃষ্ঠায়। ৪৭ পৃষ্ঠায় ‘ফযিলত’ এবং ১০৭ পৃষ্ঠায় ‘ফজিলত’ লেখা রয়েছে।এভাবে বইটির ৫৫ পৃষ্ঠায় ‘জুলুম’ এবং ১০০ পৃষ্ঠায় ‘যুলুম’ লেখা আছে। ৬৫ পৃষ্ঠায় ‘রোজা’ এবং ৯০ পৃষ্ঠায় ‘রোযা’ লেখা রয়েছে। ৭৫ পৃষ্ঠায় ‘ওজন’ এবং ‘ওযন’ লেখা আছে। ১৫৮ পৃষ্ঠায় ‘জড়িয়ে’ শব্দটি লেখা হয়েছে ‘জাড়িয়ে’।
ণ এবং ন বৃত্তান্ত: নবম-দশম শ্রেণীর অর্থনীতি বইয়ের ৩৯ পৃষ্ঠায় অগ্রহায়ণ শব্দে ণ, খনিজ শব্দে ণ ব্যবহার করা হয়েছে। বইটির ৪৪ পৃষ্ঠায় সংমিশ্রণ এবং দ্বিগুণ বানানে ‘ন’ ব্যবহার করা সঠিক নয়। ৫৪ পৃষ্ঠায় গঠন শব্দে ণ ব্যবহার, ৫৬ পৃষ্ঠায় নিয়ন্ত্রণ শব্দে ‘ন’ ব্যবহার, ৯৫ পৃষ্ঠায় শণ বানানে ন ব্যবহার করা ভুল হয়েছে। বইটির ১০০ পৃষ্ঠায় পরিবহন বানানে ণ, সংরক্ষণ বানানে ন এবং অভ্যন্তরীণ বানানে ন লেখা হয়েছে। ১৩১ পৃষ্ঠায় গৃহায়ণ শব্দটি ‘ন’ দিয়ে লেখা হয়েছে।
্য-ফলা, ৎ, -িকার এবং ী-কার: নবম-দশম শ্রেণীর অর্থনীতি বইয়ে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে সঠিক হলেও বইয়ের বিভিন্ন স্থানে লেখা আছে উদ্দেশে। দারিদ্র্য শব্দ থেকে ্য বাদ দেওয়া হয়েছে এবং বইয়ে এই ভুলটির সংখ্যা অনেক।
৪৫ পৃষ্ঠায় বাবদ শব্দে দ-এর বদলে লেখা হয়েছে ৎ। ৬৪ পৃষ্ঠায় উৎপাদন শব্দটি লেখা হয়েছে উদপাদন।
বইটির ৬২ পৃষ্ঠায় দোকানি শব্দে ী-কার, ৬৩ পৃষ্ঠাসহ বিভিন্ন স্থানে নিট শব্দে ী-কার ভুলভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। ৭৩ পৃষ্ঠায় কাগজি শব্দটি লেখা হয়েছে কাগজী, ৭৭ পৃষ্ঠায় বন্ধকি শব্দটি বন্ধকী এবং দেশীয় শব্দটি দেশিয় লেখা হয়েছে। বইটিতে মেয়াদি শব্দটি সর্বত্র লেখা হয়েছে মেয়াদী। ১০৯ পৃষ্ঠায় মৌসুমি শব্দটিতে ী-কার দেওয়া হয়েছে। ১১৬ পৃষ্ঠায় উপযোগী বানানে -িকার, ডেইরি শব্দে ী-কার, কার্যকরী শব্দে -িকার, চাষি শব্দে ী-কার, জ্বালানি শব্দে ী-কার, লেভি শব্দে ী-কার, কর্মসূচি শব্দে ী-কার ব্যবহার করা হয়েছে।
হিন্দুধর্মের বইয়ে মুদ্রণপ্রমাদ: নবম-দশম শ্রেণীর হিন্দুধর্ম বইটির ৬৩ ও ৬৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত ও উল্লিখিত, ৭১ পৃষ্ঠায় প্রতীমা ও প্রতিমা, ১০০ পৃষ্ঠায় আনায়াসে ও অনায়াসে দু রকমই লেখা আছে। ৫৮ পৃষ্ঠায় সঠিক শব্দ উদ্দেশে, লেখা আছে উদ্দেশ্যে। ৬৪ পৃষ্ঠায় সান্মিধ্য লেখা হয়েছে, হবে সান্নিধ্য। ৮৮ পৃষ্ঠায় বৃাসনটি লেখা হলেও সঠিক শব্দ বৃক্ষাসনটি। ৯৭ পৃষ্ঠায় লেখা আছে চসদ্, হবে সদ্।
বইটিতে অর্জন শব্দটি ১০৫ পৃষ্ঠায় লেখা আছে আর্জন। ১১৩ পৃষ্ঠায় ভুলে জীবত্মা লেখা হয়েছে, আসলে তা জীবাত্মা। ১১৪ পৃষ্ঠায় ব্রাহ্মালগ্ন শব্দটি আসলে ব্রহ্মলগ্ন। ১৩২ পৃষ্ঠায় স্নান লেখা হলেও তা হবে ম্লান। বিধবা শব্দটি বিধব লেখা হয়েছে ১৪৩ পৃষ্ঠায়। ১৪৬ পৃষ্ঠায় অশ্রমে লেখা হলেও শব্দটি আশ্রমে। নরোহপরাণি শব্দটি ১৫ পৃষ্ঠায় লেখা আছে নরোহপরণি। একই পৃষ্ঠায় তারকায় সঠিক হলেও বলা আছে তারকার।
অর্ধশতাধিক অসংগতি ইতিহাসে: নবম শ্রেণীর মাধ্যমিক ইতিহাস বইয়ের ৭৫ পৃষ্ঠায় ‘দুর্গ’ এবং ‘দূর্গ’ দুভাবে লেখা আছে। ১৩৬ পৃষ্ঠায় ‘শহিদ’ ও ‘শহীদ’ দুই রকম বানান থাকায় কোনটি সঠিক তা নিয়ে বিভ্রান্ত হবে শিক্ষার্থীরা। ২৯ পৃষ্ঠায় ‘সংকর’ ও ৩০ পৃষ্ঠায় ‘সঙ্কর’ লেখা হয়েছে। ৩০ পৃষ্ঠায় ‘বাঙ্গালি’ ও ‘বাঙালি’
বইটির সাত পৃষ্ঠায় সৃজনশীল প্রশ্ন ‘ঘ’-এর ‘কি’ বানানটিও ভুল। ৮০ পৃষ্ঠায় সৃজনশীল প্রশ্নে (২০-এর ঘ) ‘কি’-এর জায়গায় ‘কী’ লেখা হয়েছে। বইটিতে একই ধরনের ভুলের সংখ্যা অনেক।
বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠায় ‘শত্রুমুক্ত’, ২৩ পৃষ্ঠায় ‘বীরত্ব’ ও ২৬ পৃষ্ঠায় ‘জ্যেষ্ঠ’ শব্দটি ভুল। ৩৫ পৃষ্ঠায় ‘প্রস্তর’ ও ৪২ পৃষ্ঠায় ‘পর্যবেক্ষণ’ ও ৬৯ পৃষ্ঠায় ‘বাঙালি’ বানান ভুল। ৬৫ পৃষ্ঠায় সৃজনশীল উদ্দীপকে ‘বিপক্ষ’ ও ৬৯ পৃষ্ঠায় ‘ষষ্ঠী’ বানানটি ভুল। ৭৩ পৃষ্ঠায় ‘নয়’ শব্দটি সাধু ভাষায় লেখা হয়েছে ‘নহে’। ৭৯ পৃষ্ঠায় ‘যায়’ শব্দটি বাদ পড়েছে। ৮৫ পৃষ্ঠায় ‘উচ্চাকাঙ্ক্ষা’ বানানটি ভুল। ১২২ ও ১২৩ পৃষ্ঠায় ‘সাম্প্রদায়িক রোয়েদাদ’ ও ‘সাম্প্রদায়িক রোয়োদাদ’ দুভাবেই লেখা আছে। ১২৯ পৃষ্ঠায় ‘তালিকা’-এর জায়গায় ‘ভূমিকা’ লেখা হয়েছে। ১৭২ পৃষ্ঠায় ‘তৎকালীন’ ও ‘মন্ত্রী’ বানান ভুল। ১৭৩ পৃষ্ঠায় ‘সাহায্য’ বানান ভুল। বইয়ের ৪১ পৃষ্ঠায় সৃজনশীল প্রশ্ন ১ (ঘ)-তে ‘কোন’-এর জায়গায় ‘কোনো’ এবং প্রশ্নের শেষে প্রশ্নবোধক (?) চিহ্নের জায়গায় দাঁড়ি (।) দেওয়া আছে।
১৪৩ পৃষ্ঠায় সৃজনশীল প্রশ্নে ‘আকাঙ্ক্ষা’ বানান ভুল। ১৯০ পৃষ্ঠায় অভিন্ন প্রশ্ন ৪-এর বাক্যটি অসম্পূর্ণ। ১৫৬ পৃষ্ঠায় সৃজনশীল প্রশ্নে ১ (ক) প্রশ্নবোধক (?) চিহ্নের জায়গায় দাড়ি (।) দেওয়া হয়েছে।
রসায়ন বইয়ে সংখ্যা ও চিহ্নের গরমিল: নবম-দশম শ্রেণীর রসায়ন বইয়ের ৩৮ পৃষ্ঠায় 7PI8s থাকলেও হবে 7P, 8s। ৪২ পৃষ্ঠায় পর্যায় সারণিটি ভুল। ৮৭ পৃষ্ঠায় ‘চুনাপাথর এসিডের---’ লেখা হলেও প্রকৃতপক্ষে লিখতে হবে ‘চুনাপাথর হাইড্রোক্লোরিক এসিডের---।’
বইটিতে এ রকম অর্ধশতাধিক অসংগতি রয়েছে। ৯৬ পৃষ্ঠায় Ag+ উল্লেখ থাকলেও হবে K+। ১৫৭ পৃষ্ঠায় Zns (হেমাটাইট) হবে Zns (জিঙ্ক ব্লেন্ড)। একই পৃষ্ঠায় pbs (হেমাটাইট) বলা হলেও সঠিক Pbs (গ্যালেনা)। ১৩৪ পৃষ্ঠায় ভুলভাবে Ca+ লেখা হয়েছে, হবে Ca++।
এ ছাড়া পাঁচ পৃষ্ঠায় বিদ্যুতের শব্দটি থেকে ্য-ফলা বাদ দেওয়া হয়েছে। ২৫ পৃষ্ঠায় অ্যামোনিয়া শব্দটি লেখা হয়েছে অ্যামেনিয়া। গবেষণাগার শব্দটি ৩০ পৃষ্ঠায় ‘ন’ দিয়ে লেখা হয়েছে। ৩৬ পৃষ্ঠায় বর্ণালি শব্দটি লেখা হয়েছে বর্ণলি। ৯৭ পৃষ্ঠায় বিভিন্ন শব্দে ‘ন’ এবং ‘ণ’-এর ব্যবহারে গরমিল রয়েছে। ১০২ পৃষ্ঠায় সাম্যবস্থা আছে, হবে সাম্যাবস্থা। ১১৩ পৃষ্ঠায় ক্ষমারাত্মক উল্লেখ থাকলেও হবে মারাত্মক। ১১৭ পৃষ্ঠার চিত্রে গ্যালাভানিক বলা হলেও সঠিক শব্দ গ্যালভানিক।
বইটির ১৮৭ পৃষ্ঠায় ৩ ও ৪ নম্বর প্রশ্নের উদ্দীপক নেই। ২০৬ পৃষ্ঠায় চার নম্বর প্রশ্নে reaction উল্লেখ নেই।