দেশের ই-কমার্স খাত যেভাবে এগিয়ে যাবে

ই-কমার্স ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দারাজের আয়োজনে সম্প্রতি ‘ই-কমার্স ইকোসিস্টেম এবং পলিসিবিষয়ক আলোচনা’ শীর্ষক ভার্চ্যুয়াল সংলাপের আয়োজন করা হয়
ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ই-কমার্স ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দারাজের আয়োজনে সম্প্রতি ‘ই-কমার্স ইকোসিস্টেম এবং পলিসিবিষয়ক আলোচনা’ শীর্ষক ভার্চ্যুয়াল সংলাপের আয়োজন করা হয়। আলোচনায় অংশ নেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদসহ অনেকে। আলোচকদের বক্তব্য প্রকাশ করা হলো—

আলোচক:
টিপু মুনশি মন্ত্রী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়
জুনাইদ আহ্‌মেদ প্রতিমন্ত্রী, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ
সৈয়দ আলমাস কবীর, সভাপতি, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)
আবদুল ওয়াহেদ, সাধারণ সম্পাদক, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)
সৈয়দ মোস্তাহিদুল হক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, দারাজ বাংলাদেশ লিমিটেড
জাবেদ সুলতান, হেড অব ডিজিটাল বিজনেস, প্রথম আলো

আলোচনা:
জাবেদ সুলতান
ই-কমার্স একটা নতুন বাস্তবতা। করোনাকালে আমরা এর প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি করে অনুভব করেছি। এ সময়ে আমাদের জীবনধারার মধ্যে ই-কমার্স গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে এসেছে। দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা খাতে ই-কমার্স এখন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দারাজ বাংলাদেশ ‘ই কমার্স ইকোসিস্টেম এবং পলিসিবিষয়ক আলোচনা’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এ আলোচনায় সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি। মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকে অনুরোধ করছি আজকের এ আলোচনার সূচনা করার জন্য।

টিপু মুনশি
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করলেন, আমরা একটা ডিজিটাল বাংলাদেশ চাই। সেই লক্ষ্যে কাজ শুরু হলো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদের কয়েক বছরের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় আজ আমরা এই অবস্থায় এসেছি।
২০২৫ সালের মধ্যে একটি ভালো অবস্থানে যাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। করোনাকালে আমাদের প্রায় অধিকাংশ খাতে বিপর্যয় এসেছে। কিন্তু কোনো কোনো খারাপ অবস্থার মধ্যেও সুযোগ তৈরি হয়। তেমনই তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

আরও তিন বছর পর আমাদের যে লক্ষ্যে পৌঁছানোর কথা ছিল। ইতিমধ্যে আমরা সে লক্ষ্য প্রায় অর্জন করে ফেলেছি। আমাদের মাননীয় উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় একটা আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন যে পোশাকশিল্পের পরই ই-কমার্স চলে আসবে। তাঁর আশাবাদ সত্য হতে চলেছে। আপনারা দেখেছেন, এই করোনাকালে কীভাবে ই-কমার্স মানুষকে সহযোগিতা করেছে। মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। এই দুর্যোগে মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছিল না। এমনই একটা পরিস্থিতিতে ই-কমার্স মানুষের জন্য একটা মানবিক ভূমিকা নিয়েছে। এই মুহূর্তে আমাদের জন্য এটা ভীষণ দরকার ছিল। ই-কমার্সের বিস্তৃতি ঘটছে। ভবিষ্যতে মানুষ অনেকখানি এর ওপর নির্ভরশীল হয়ে যাবে। ২০২৫ সালের মধ্যে এই খাত থেকে ৫০০ কোটি ডলার আয় করার লক্ষ্য আমাদের। মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ এ খাতের উন্নয়নের জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। এ খাতে তাঁর চিন্তা ও পরিকল্পনা কথা আমরা শুনছি। তিনি একটা পরিকল্পনা করে এগোচ্ছেন।

প্রতিনিয়ত ই-কমার্স সম্প্রসারিত হচ্ছে। আমাদের মন্ত্রণালয়ের মানবসম্পদকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। প্রশিক্ষণে যারা ভালো করেছে, তাদের সনদ দিয়েছি। দেশের সব জায়গায় ই-কমার্স পৌঁছে গেছে। করোনাকালে যারা চাকরি হারিয়েছিল, তারা এ খাতে কাজের সুযোগ পেয়েছে। টিসিবির মাধ্যমে আমরা মানুষকে সেবা দিয়ে থাকি। এ ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি নারীরা ই-কমার্সের মাধ্যমে আমাদের পণ্য মানুষের ঘরে পৌঁছে দিয়েছে। নীতিমালার ব্যাপারে এটুকু বলতে পারি যে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সঙ্গে নিয়ে একটি ভালো নীতিমালা তৈরি করার কাজ চলছে। আমি এখানেই শেষ করছি। সবাইকে ধন্যবাদ।

জুনাইদ আহ্‌মেদ
ই-কমার্সের মতো এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য দারাজকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আজকের প্রধান অতিথি মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি তাঁর পরিকল্পনার কথা আমাদের বলেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল রূপকল্প বাস্তবায়নে ই-কমার্স একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। এ ক্ষেত্রে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। গত বছরের মার্চ মাসের ৮ তারিখে বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হলো। তারপর যখন লকডাউন ঘোষণা করা হলো, তখন অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়ে গেল। তখন মারাত্মক খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে আমরা পড়েছিলাম। সবার সহযোগিতায় ১১ মাস ধরে অনলাইনে আমাদের শিক্ষা, প্রশাসনিক, বাণিজ্যিক, বিচারিক কার্যক্রম চলমান রাখতে পেরেছি। এ জন্য আমি মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। পাশাপাশি ই-ক্যাব, বেসিসসহ এ ক্ষেত্রের সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। সর্বোপরি যার প্রতি আমাদের সব কৃতজ্ঞতা তিনি হলেন ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার সজীব ওয়াজেদ জয়। ১২ বছর ধরে আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁর সার্বিক তত্ত্বাবধানে আজ আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণ করতে পেরেছি।
ই-কমার্স ব্যবস্থাপনার জন্য একটা নীতিমালা প্রয়োজন। মাননীয় উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় আজ থেকে পাঁচ বছর আগেই এটা উপলব্ধি করেছেন। একটি নীতিমালা প্রণয়নের জন্য তিনি আমাদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। আমরা সেটি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর এটি আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দিয়েছি। ২০১৮ সালে ডিজিটাল নীতিমালা মন্ত্রিসভা কর্তৃক চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গেলে এই ডিজিটাল নীতিমালা যে কেউ দেখতে পারবেন, পড়তে পারবেন, এ বিষয়ে জানতে পারবেন।

এই নীতিমালার উদ্দেশ্য হলো ই-কমার্সকে সম্প্রসারিত করা, জনপ্রিয় করা, কার্যকর করা। বাংলাদেশের সর্বত্র উচ্চগতির নিরাপদ ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা। লক্ষ করে দেখবেন, গত ১২ বছরে ঢাকার বাইরে বিভাগ, জেলা, উপজেলাসহ ৩ হাজার ৮০০ ইউনিয়ন পর্যন্ত ফাইবার অপটিক্যাল কেব্‌ল নিয়ে গিয়েছি। ই-কমার্সের আরও সম্প্রসারণের জন্য আইসিটি বিভাগের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের মাধ্যমে ৬ হাজার ৬২৬টি ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে ই-কমার্স পৌঁছে গেছে। ডিজিটাল সেন্টারের যাঁরা উদ্যোক্তা আছেন, তাঁরা এই ই-কমার্স কার্যক্রমকে সম্প্রসারণের জন্য আরও কাজ করতে পারবেন।

গত ১১ মাসে ই-ক্যাব ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় আমরা সারা দেশ থেকে হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবক সংগ্রহ করেছিলাম। তাদের মাধ্যমে ওষুধসহ অনেক জরুরি পণ্য মানুষের ঘরে পৌঁছে দিয়েছি। ৩৩৩ নম্বরে কল করলেই কোনো একজন কর্মহীন মানুষ যেন তার বাড়িতে জরুরি খাদ্যপণ্য পেতে পারে, সে ব্যবস্থা আমরা করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে যদি গত ১২ বছরে প্রযুক্তি খাতের এই অবকাঠামো তৈরি না হতো, তাহলে এত দ্রুত সময়ে আমরা এই সেবাগুলো মানুষের কাছে নিয়ে যেতে পারতাম না। ই-কমার্সের আরেকটি বড় অগ্রগতি হলো ডিজিটাল লেনদেন। কারণ, ইন্টারনেট ব্যবহারকারী যে ১১ কোটি মানুষ আছে, তারা ওয়েবসাইটে পণ্য দেখল, পছন্দ করল কিন্তু যদি পেমেন্ট করার প্রযুক্তি না থাকে, তাহলে কেনাকাটা করতে পারবে না।

২০১০ সালে সরকার ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ সিস্টেম ডেভেলপ করেছে। এ জন্য আজ দেশের ৯ কোটি ওয়ালেট অ্যাকাউন্ট হোল্ডার ডিজিটাল লেনদেন করতে পারছে। গ্রামের একজন সাধারণ মানুষ অনলাইনে পেমেন্ট সুবিধা পাচ্ছে। সরকারের একেবারে শীর্ষ পর্যায় থেকে যেমন জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মাননীয় উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়—তাঁরা ই-কমার্সকে উৎসাহিত করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত কোরবানির সময় তাঁর বক্তৃতায় বলেছেন, পশু কিনতে হাটে না গিয়ে তাঁরা যেন অনলাইনে কেনেন। আপনারা দেখেছেন হাজার হাজার কোরবানির পশু ডিজিটাল হাটে বিক্রি হয়েছে। শুধু ঢাকায় নয়, জেলা-উপজেলা পর্যন্ত এটি বিস্তৃত হয়েছে। গত ১২ বছরে ই-কমার্সের প্রবৃদ্ধি ছিল ২৫ শতাংশ। গত ১১ মাসে সেটা ৩০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

শুধু এটুকু বলতে পারি, আমরা আইসিটি মন্ত্রণালয় থেকে সহযোগিতা করেছি। ডিজিটাল নীতিমালা প্রণয়নের জন্য আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করেছি। একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ২ হাজার ৫০০ নারী উদ্যোক্তা তৈরি করেছি। উদ্যোক্তা তৈরির জন্য ২১টা জেলায় পাইলট প্রকল্প করেছিলাম। সেখানে ৫০ শতাংশ ই-কমার্স উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের অনেক উদ্যোক্তা ই-কমার্সের মাধ্যমে বিদেশে পণ্য বিক্রি করছে। ১২ বছর পর আমরা যে জায়গায় পৌঁছাতে পারতাম, গত ১১ মাসে আমরা সেই জায়গায় পৌঁছে গেছি। গত ১১ মাসে প্রায় ১ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হলো। ২০২৫ সালের মধ্যে এ ক্ষেত্রে পাঁচ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান করতে চাই। দারাজের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে তাঁদের কল সেন্টার নিয়ে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে আমাদের দিক থেকে নীতিগত সহযোগিতা দিয়ে যাব। ই-কমার্সের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করে শেষ করছি।

সৈয়দ আলমাস কবীর
ই-কমার্সের জন্য আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত। ইতিমধ্যে আমাদের দুজন মাননীয় মন্ত্রী বলেছেন আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আমাদের যে লক্ষ্য অর্জন করার কথা ছিল, গত ১১ মাসে আমরা সে লক্ষ্য অর্জন করে ফেলেছি। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী বলেছেন যে গত ১২ বছরের অবকাঠামো যদি না থাকত, তাহলে এই ১১ মাসে আমরা এটা অর্জন করতে পারতাম না। অতএব আমাদের কাজ কিন্তু অনেক আগে থেকেই চলছে। বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকসহ সবাই অনুমান করেছিল যে আমাদের জিডিপি ২ শতাংশের নিচে থাকবে। কিন্তু আমরা সেটা ৫ দশমিক ২ শতাংশ করতে পেরেছি। এটি অর্জনের জন্য যে ধরনের অবকাঠামো দরকার, সেটা আমাদের ছিল।

ই-কমার্সের ক্ষেত্রে এখনো আমাদের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো লজিস্টিকস। বিশেষ করে শিপিং অ্যান্ড ডেলিভারি। আমাদের পোস্টাল সিস্টেমের মান অনেক নিম্নপর্যায়ের। অথচ গ্রামেগঞ্জে আনাচকানাচে পোস্ট অফিস আছে। দেশে আট হাজারের মতো পোস্ট অফিস আছে। এমন একটা নেটওয়ার্ককে আমরা কাজে লাগাতে পারছি না। এটাকে যদি ডিজিটালাইজড করে কাজে লাগাতে পারি, তাহলে ই-কমার্সের ক্ষেত্রে একটা বড় সাফল্য আসবে। গতানুগতিক পোস্ট অফিসের সেবার মান গ্রাহকদের সন্তুষ্ট করতে পারছে না। সরকারের ডেলিভারি সিস্টেমকে অবশ্যই আধুনিক করতে হবে। তা না হলে গ্রাহকেরা তাদের কাছে সেবার জন্য যাবে না। দারাজ ছাড়াও অনেক ছোট প্রতিষ্ঠান এই ব্যবসায় এসেছে। তাদের মজুত ও গুদাম ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা নেই। ভোক্তারা যদি পণ্য খুঁজতে গিয়ে বারবার একটা পণ্য না পান, তাহলে তিনি হতাশ হয়ে এই পদ্ধতি থেকে সরে যান। গ্রাহকের চাহিদা পূরণের জন্য যে ধরনের ব্যবস্থাপনা দরকার, তার অনেক ঘাটতি রয়েছে।

যাঁরা ই-কমার্স ব্যবসা করছেন, তাঁদের পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় অনেক বেশি দক্ষ হতে হবে। প্রয়োজন হলে তাঁরা আমাদের সহায়তায় প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। ডিজিটাল লেনদেন ১৫ শতাংশ থেকে প্রায় ৩০ শতাংশের কাছাকাছি হয়েছে। এটাকে আরও সম্প্রসারণের জন্য নীতিমালা নিয়ে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক, আইসিটি মন্ত্রণালয় পেমেন্ট পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছে। এটা যখন হয়ে যাবে, তখন এ পদ্ধতি শিল্পে অবদান রাখতে সহযোগিতা করবে। বিদেশে একজন ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীর দায় সীমাবদ্ধ থাকে। হয়তো তার সীমা পাঁচ লাখ টাকা। কিন্তু কখনো যদি তার কার্ড নিয়ে কেউ জালিয়াতি করে, তাহলে হয়তো তাকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত দায় বহন করতে হয়। বাকি দায় বহন করে ইনস্যুরেন্স কোম্পানি। কিন্তু আমাদের দেশে সেটা নেই। বিষয়টি ভাবা প্রয়োজন।

সুলভ মূল্যে মানসম্পন্ন নিরাপদ ইন্টারনেট একদম গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে হবে। আমার যদি ভালো সংযোগ না থাকে, তাহলে সময় নষ্ট করে খারাপ সংযোগ দিয়ে আমি ব্রাউজ করব না। আমি যদি জানি দারাজের ওয়েবসাইটে অনেক পণ্য পাওয়া যায় কিন্তু আমার ইন্টারনেট যদি ঠিকভাবে কাজ না করে, তাহলে আমি এ সুযোগটি নিতে পারব না। ই-কমার্স ব্যবসার জন্য এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। এই চ্যালেঞ্জ এখনো কিন্তু রয়ে গেছে। যদি আমরা গ্রাহকের চাহিদা পূরণ করতে পারি, তাহলে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্যই অনলাইনে কেনাকাটা শুরু হবে। বিষয়টি আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।

আবদুল ওয়াহেদ
ই-কমার্সের ক্ষেত্রে গত এক বছরে একটা নীরব বিপ্লব ঘটে গেছে। ইতিমধ্যে ৫০ হাজার উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। ১৬ হাজার কোটি টাকার বাজার তৈরি হয়েছে। মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদের নিরলস পরিশ্রমে ই-কমার্সে আমাদের এই বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। আমাদের এই দুজন মন্ত্রীও অনলাইনে কোরবানির গরু কিনে উদাহরণ সৃষ্টি করেছিলেন। শুধু গরুর হাটই না, আমচাষিদের আমরা অনলাইনে যুক্ত করেছি। টিসিবির পেঁয়াজ অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করেছি। এর ফলে রাতারাতি পেঁয়াজের দাম কমে গিয়েছিল। ই-কমার্সের ক্ষেত্রে এভাবে নতুন গল্প তৈরি হচ্ছে।

আপনারা যদি প্রথম দিন থেকে আমাদের সহযোগিতা না করতেন, তাহলে আজ আমরা এখানে পৌঁছাতে পারতাম না। তবে এই প্রবৃদ্ধি টেকসই করতে হবে। ধরে রাখতে হবে। এটা যেন কোনো কারণে নেমে না যায়। ক্ষতি না হয়। আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে এখানে প্রায় পাঁচ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতি সম্প্রসারণের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ক্রস বর্ডার অর্থনীতি সম্প্রসারণের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ই-কমার্স নীতিমালা ঠিকমতো বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না, সেটা গুরুত্বের সঙ্গে দেখা প্রয়োজন। বিষয়টি আমাদের আলোচনায় উপস্থিত দুজন মন্ত্রী গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন বলে আশা করি।

অনেকে ই-কমার্স ব্যবসার জন্য সনদ নিচ্ছে। কিন্তু তাদের কোনো নীতিমালা নেই। রিটার্ন-রিফান্ড পলিসি কী হবে, কত দিনের মধ্যে লেনদেন শেষ করবে—এসব বিষয়ে তাদের কোনো নীতিমালা নেই। বি টু বি বা বি টু সি অথবা যে ডেলিভারি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ই-কমার্সের সংযোগ রয়েছে, তাদের কোনো মানসম্মত ব্যবসা পরিচালনার নীতি নেই। এসব ক্ষেত্রে আমরা একটা মানসম্মত গাইডলাইন তৈরি করে দিয়েছি। এটা হলে ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে আমরা আরও এক ধাপ এগিয়ে যাব। প্রতিদিন অসংখ্য প্রতিষ্ঠান ই-কমার্স ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। ভোক্তা অধিকার সংস্থার সেই সক্ষমতা নেই এদের তদারকি করার। আমরা যেন এসব প্রতিষ্ঠানকে একটা ভালো নীতিমালার অধীনে নিয়ে আসতে পারি। লোকজন যেন তাদের অভিযোগ জানাতে পারে, তাদের সঠিক পণ্য পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারে, লেনদেনের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারে। একটা ইন্টিগ্রেটেড সিস্টেম করে দিতে হবে, তাহলে সবাই আস্থা পাবে।

লেনদেনের ক্ষেত্রে একটা আস্থার জায়গা তৈরি করতে হবে। অন্য দেশের ই-কমার্সের তুলনায় আমাদের ই-কমার্স একটু ভিন্ন ধরনের। আমাদের প্রায় দুই লাখ উদ্যোক্তা ইনফরমাল সেক্টরে। দেশের ১০ হাজার পোস্ট অফিসে ৪০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী আছে। এটা একটা বিশাল নেটওয়ার্ক। এত বড় নেটওয়ার্ক আমরা কাজে লাগাতে পারছি না। আমাদের গ্রামীণ ই-কমার্স মাত্র ২০ শতাংশ। ক্রস বর্ডার নীতিমালা হলে আমরা মিলিয়ন ডলার আয় করতে পারি। আমাদের খরচ অনেক বেশি পড়ে ভারত-চীনের তুলনায়। অথচ আমাদের পণ্যের মান ভালো। আমাদের একজন গ্রামের দরিদ্র মানুষ পণ্য বিক্রি করতে পারে, যদি এই নীতিমালাটা থাকে। বিষয়টি আপনারা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন বলে আশা করি। এর মাধ্যমে পোশাকশিল্প সম্প্রসারিত হতে পারে। বিশেষভাবে অনুরোধ করব ক্রস বর্ডার নীতিমালার ব্যাপারে যত দ্রুত সম্ভব আপনারা একটা উদ্যোগ নেবেন।

ই-কমার্সের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণটা অত্যন্ত জরুরি। আমরা ১২ হাজার মানুষকে প্রশিক্ষণের একটা প্রস্তাব দিয়েছিলাম, সেটা হয়নি। দ্রুত একটা ই-কমার্স ইউনিভার্সিটি করা যায় কি না, সে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা প্রয়োজন। এখন সময় এসেছে একটা ই-কমার্স বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার।

সৈয়দ মোস্তাহিদুল হক
আমরা এমন একটা নীতিমালা চাই, যেটা ই-কমার্স ব্যবসাকে আরও সম্প্রসারণ করবে। ই-কমার্স ব্যবসা যদিও গত এক বছরে অনেক সম্প্রসারিত হয়েছে কিন্তু আমরা যে লক্ষ্যে যেতে চাই, সেখানে কিন্তু এখনো যায়নি। আমাদের আরও অনেক সম্ভাবনা রয়েছে।

আশা করছি আগামী পাঁচ বছরে ই-কমার্সের কোটি গ্রাহক হবে। আর এ পরিমাণ গ্রাহক সেবা দিতে হলে অনেক কর্মসংস্থান হবে। এটা আমাদের অর্থনীতি, ইকোসিস্টেমের জন্য ভালো হবে। অনেক সম্ভাবনা রয়েছে যে আমরা কাজে লাগাতে পারছি না। আমাদের প্রায় ৪০ হাজার বিক্রেতা রয়েছে। তারা কোনো নীতিমালার মধ্যে নেই। যে যেভাবে পারে, সেভাবে ব্যবসা করেছে। ট্রেড লাইসেন্স ও নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা উচিত। তাহলে ভবিষ্যতে তাদের তদারক করা সহজ হবে। ক্রস বর্ডার নীতিমালা হলে আমদানি-রপ্তানি দুই ক্ষেত্রেই এটা ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। অনলাইনে মূল্য পরিশোধের প্রবণতা অনেক বেড়েছে। ২০১০ সালে এটা ছিল ১০ শতাংশ। আর আজকে সেটা প্রায় ৪৫ শতাংশ। ই-কমার্সের মূল্য পরিশোধ খরচ ১ শতাংশের কম। কিন্তু যখন কার্ডে পরিশোধ হয়, তখন ব্যাংকগুলো অনেক ক্ষেত্রে আড়াই থেকে ৩ শতাংশ চার্জ করে, যেটা বাইরের দেশের তুলনায় অনেক বেশি। ই-কমার্স যেকোনো একটা পণ্য বিক্রি করলে ২ থেকে ৩ শতাংশের বেশি মুনাফা থাকে না। কিন্তু ব্যাংক যদি ৩ শতাংশের বেশি চার্জ করে, তাহলে ই-কমার্স কিন্তু দিন শেষে আর টিকবে না। আমি মনে করি, ই-কমার্স সম্প্রসারণের জন্য এসব বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দ্রুত বিবেচনা করা প্রয়োজন।

টিপু মুনশি
সঞ্চালককে ধন্যবাদ জানাতে চাই। নিশ্চয়ই আপনার মাধ্যমে আমরা আজকের আলোচনার একটি লিখিত সংস্করণ পাব। যে গতিতে ই-কমার্স ব্যবসার সম্প্রসারণ হয়েছে, পারিপার্শ্বিক অবস্থা হয়তো সেভাবে এগোয়নি। এ জন্য ক্রস বর্ডার নীতিমালা, পেমেন্ট নীতিমালায় বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। স্বচ্ছতার কথা এসেছে। স্বচ্ছতার জন্যও আমাদের কাজ করতে হবে। সবাই চেষ্টা করলে দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান করতে পারব। ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা যাতে খুব সহজে ট্রেড লাইসেন্স পায়, এর ভিত্তিতে ব্যাংকের সহযোগিতা পায়, সে বিষয়ে আমরা উদ্যোগ নেব। আমরা আশাবাদী, ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে যে সমস্যা আছে, আমরা কার্যকর উদ্যোগ নিয়ে এর সমাধান করতে পারব।

জুনাইদ আহ্‌মেদ
বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, সোনার বাংলাদেশে গড়তে হলে সোনার মানুষ দরকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনী ইশতেহারে তিনটি মূল বাতিঘরের কথা বলেছেন। এগুলো হলো তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি, আমার গ্রাম আমার শহর ও প্রযুক্তিনির্ভর দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ। মাননীয় উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে সব সময় আমাদের নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। আইসিটি মন্ত্রণালয় তরুণদের তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে। আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। আমাদের সাড়ে ছয় হাজার ডিজিটাল সেন্টারে ১৩ হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। আমার চাই তরুণেরা চাকরি করবে না, তারা চাকরি সৃষ্টি করবে।

আগামী কয়েক বছরে যদি ই-কমার্সের পাঁচ কোটি গ্রাহক তৈরি হয়, তাহলে কমপক্ষে পাঁচ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। আপনাদের আলোচনায় এসেছে, ই-কমার্স ব্যবসায়ী ও সেবা গ্রহীতাদের মধ্যে সচেতনতা একটা বড় জায়গা। এ লক্ষ্যে আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করতে চাই। আপনারা যদি সচেতনতামূলক একটা গাইডলাইন তৈরি করে দেন, সেটা আমরা ১ লাখ ৭০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দিতে পারি। এ ছাড়া আমাদের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে এটা প্রকাশ করে সচেতনতা তৈরির কাজটি চালিয়ে যেতে পারি। আমরা একটা ভার্চ্যুয়াল বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগ নিয়েছি। এর উদ্দেশ্যই হবে প্রয়োজন অনুযায়ী শিক্ষা প্রদান করা। এখানে আমরা ই-কমার্সের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে আসতে পারি। আমাদের যে ৪৯২টা উপজেলা এবং সাড়ে ৪ হাজার ইউনিয়ন আছে, সেখানে যে ডিজিটাল সেন্টার খোলা আছে, এসব কেন্দ্র আমরা ব্যবহার করতে পারি। এখানকার উদ্যোক্তাদের আমরা স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। ডিজিটাল কেন্দ্রগুলোতে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ব্যবস্থা করেছি। বেসিস, দারাজ, ই-ক্যাব—এই কেন্দ্রগুলোকে ডিস্ট্রিবিউশন হাব হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। ওয়্যারহাউস, সফটওয়্যার ম্যানেজমেন্ট, ছোট ছোট প্রশিক্ষণ, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ডিজাইনিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, এসব ক্ষেত্রে ২ হাজার নারীকে ৫০ হাজার টাকা করে এককালীন দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। এই নারীদের মাধ্যমে আমরা একটি পাইলট প্রকল্প চালু করতে চাই। এর ফল যদি ভালো হয়, তাহলে আমরা ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মিলে বিশাল প্রকল্প নিতে পারব, যার মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। দারাজ, ই-ক্যাব মিলে একটা হ্যাকাথন প্রতিযোগিতার আয়োজন করলে অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে।

স্টার্টআপের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১০০ কোটি টাকা দিয়েছেন। কোনো কোম্পানির সম্প্রসারণের সুযোগ থাকলে তারা পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত এখান থেকে নিতে পারবে।
মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমাদের যে ৬১টি করণীয় তালিকা আছে, সেটা নিয়ে বসব। সেখানে আমাদের সব সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করি। ভবিষ্যতে আরও বেশিসংখ্যক মানুষকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনার উদ্যোগ আমাদের আছ। আমরা ই-কমার্সের সমস্যা চিহ্নিত করতে পেরেছি। সমস্যা চিহ্নিত করার অর্থ হলো অর্ধেক সমাধান হয়ে যাওয়া। পরিবর্তন আসবে বলে আমার মনে করি।

সৈয়দ আলমাস কবীর
এফ-কমার্সের (ফেসবুক কমার্স) ক্ষেত্রেও আমাদের দেশ অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের জানামতে এফ-কমার্স থেকে ৩০০ কোটি টাকার ওপরে টার্নওভার হয়। এর মাধ্যমে একেবারে গ্রামের একজন দরিদ্র নারী আচার, ফুল, কাপড় ইত্যাদি বিক্রি করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এখনই যদি ট্রেড লাইসেন্সসহ বিভিন্ন বাধ্যবাধকতার মধ্যে তাঁকে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হয়, তাহলে বিশাল এই সম্ভাবনাটা শুরুতেই শেষ হয়ে যেতে পারে। তাদের সবাইকে নিবন্ধনের আওতায় আনা যেতে পারে। তাহলে যারা নিবন্ধন করেছে, তাদের প্রতি মানুষের আস্থা তৈরি হবে। যাঁরা ই-কমার্স ব্যবসা করছেন, তাঁদের কিছু নতুন আইডিয়া জেনারেট করতে হবে। যিনি স্ক্রিনে কাপড় দেখাচ্ছেন, কাপড়টা যিনি কিনবেন, তাঁকে পরলে কেমন দেখায়, সে রকম কোনো প্রযুক্তি সংযোজন করা যেতে পারে। ভোক্তার অধিকার যেন নিশ্চিত হয়, সে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে।
আবদুল ওয়াহেদ
ই-কমার্স নিয়ে খুবই আশাবাদী। দুই থেকে তিন বছর আগেও এটা এতটা গঠনমূলকভাবে এগোয়নি। এখন অনেকটাই পরিকল্পিতভাবে পরিচালিত হচ্ছে। আইসিটি খাতে পাঁচটি অ্যাসোসিয়েশন আছে। প্রতিবার বাজেটের আগে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। প্রত্যেকের একটা ইস্যু থাকে। আমরা পাঁচ অ্যাসোসিয়েশন মিলে সমন্বিতভাবে আমাদের প্রস্তাব আপনাদের দিতে চাই। আপনারা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবেন বলে আশা করি। আর বর্তমান বাস্তবতায় এটা অত্যন্ত জরুরি। আপনাদের কাছ থেকে সব ধরনের নীতিগত সহযোগিতা পেতে চাই।
সৈয়দ মোস্তাহিদুল হক
সরকারের নীতিগত সহযোগিতা দরকার। যেন আরও বেশি পরিমাণ পণ্য আমরা বিদেশে পাঠাতে পারি। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আমাদের কিছু কাজ করতে হবে, যেটা আমরা ইতিমধ্যে শুরু করেছি। দারাজ বাংলাদেশের যেকোনো বিক্রেতা তার নিজের ইচ্ছায় পৃথিবীর যেকোনো দেশে পণ্য বিক্রি করতে পারবে। সাপ্লাই চেইন, লজিস্টিকস, কাস্টমস নিয়ে কাজ হচ্ছে। এর সঙ্গে নীতিসহায়তা যুক্ত হলে আমরা আরও বেশি পরিমাণ পণ্য বিদেশে বিক্রি করতে পারব।