দ্বাদশ শ্রেণির পড়াশোনা: বাংলা ১ম পত্র

হৈমন্তী  সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
প্রিয় শিক্ষার্থী, আজ বাংলা ১ম পত্র থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।

মা,
কত দিন তোমায় দেখি না, তোমার হাতে খাবার খাই না। কী যে এক বিপন্ন বিষাদের বৃত্তে আমার বসবাস—কী করে তোমায় বলি? মানুষ এত নিষ্ঠুর আর বৈষয়িক কেন মা? সমস্ত সত্তা দিয়ে চেষ্টা করেও তাদের মন পেলাম না। টাকার জন্য এরা মনকে পিষ্ট করে। তাই তোমাদের প্রতিশ্রুত উপঢৌকন এদের প্রাপ্তির ঝুলিতে জমা না হওয়ায় আমাকে নিষ্পেষিত হতে হচ্ছে। তোমাদের নিয়ে কটুক্তি করলে কিছু বলতে পারি না বলে কষ্ট আরও বেড়ে যায়। যার হাতে তোমরা আমাকে সঁপে দিয়েছ—সবার আগে সে হাত ওঠাতে দ্বিধা করে না। আমি যে কী করব বুঝতে পারছি না। যা-ই করি—আমাকে ক্ষমা কোরো। তোমরা ভালো থেকো, ভালো থেকো।
ইতি
মিনু
(বি. দ্র. চিঠিটি প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সংবাদের আলোকে লিখিত। মেয়েটি চিঠি লেখার কয়েক দিন পর মারা যায়।)
প্রশ্ন:
ক. ‘হৈমন্তী’ গল্পে হিমালয়ের মিতা কে?
খ. হৈমন্তীর বয়স কী ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করেছিল? ব্যাখ্যা করো।
গ. মিনুর করুণ পরিণতির কারণ ‘হৈমন্তী’ গল্পের আলোকে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. তুমি কি মনে কর মিনু হৈমন্তী চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করে? উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।

উত্তর: ক. গৌরীশঙ্কর বাবু।
উত্তর: খ. তত্কালীন সমাজে মেয়েদের বাল্যবিবাহের প্রচলন ছিল। তাই ষোড়শী হৈমন্তী সমাজের কাঠগড়ায় ছিল একজন আসামি। গোঁড়া সমাজব্যবস্থায় ষোলো বছর বয়সের ত্রুটি সারাতে তার পিতাকে বিয়ের পণের টাকার অঙ্ক বাড়িয়ে দিতে হয়েছিল। তারপরও শ্বশুরবাড়িতে পদে পদে বয়সের খোঁটা তার জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল।

উত্তর: গ. মিনু হৈমন্তীর মতোই যৌতুকের যূপকাষ্ঠে বলি। গৌরীশঙ্করের গচ্ছিত অর্থ সম্পর্কে রঙিন কল্পনা শ্বশুরালয়ে হৈমন্তীর কদর বাড়িয়ে দিয়েছিল। সেই ভুল ভেঙে যাওয়ায় সে সম্পূর্ণ বিপরীত আচরণের সম্মুখীন হয়। শ্বশুর-শাশুড়ির অনাদর, আত্মীয়দের খোঁটা এবং সর্বোপরি স্বামীর নীরবতা, নিষ্ক্রিয়তা তিলে তিলে হৈমন্তীকে করুণ পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়। মিনুও হৈমন্তীর মতোই হারিয়ে যাওয়া শিশিরবিন্দু, যে শ্বশুরবাড়িতে নিতান্ত তুচ্ছ জিনিসের চেয়েও অনাদৃত। যৌতুক নামের অভিশাপে সে পদে পদে অত্যাচারিত এবং নির্যাতিত। লোভী ও নিষ্ঠুর স্বামীও তাকে প্রহার করে। তাই শ্বশুরালয়ে অসহায় এবং অনাদৃত মিনুও পিতৃতান্ত্রিক সমাজের করাল গ্রাসে হারিয়ে যায় হৈমন্তীর মতোই।

উত্তর: ঘ. মিনু হৈমন্তী চরিত্রের পূর্ণ প্রতিনিধিত্ব করে বলে আমি মনে করি না। মিনু হৈমন্তীর চরিত্রের আংশিক প্রতিনিধিত্ব করে।
‘হৈমন্তী’ গল্পে আমরা দেখতে পাই—গৌরীশঙ্কর বাবুর সঞ্চিত সম্পদ এবং অপুর ভবিষ্যত্ সম্পর্কে হৈমন্তীর শ্বশুর-শাশুড়ির কল্পনার ঘোর কেটে যাওয়ার পর হৈমন্তীর ওপর নেমে আসে মানসিক নির্যাতন। সহজাত বৈশিষ্ট্যগুণে হৈমন্তী মিথ্যাচার ও কপটতার বিরুদ্ধে ব্যর্থ প্রতিবাদ করে। ফলে তার মার্জিত হূদয় আরও বেশি বেদনায় জর্জরিত হয়। সেও চরম পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়।
উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই—যৌতুকের প্রতিশ্রুত টাকা দিতে না পারায় শ্বশুরপক্ষ থেকে মিনুর ওপর নেমে আসে অমানবিক নির্যাতন। আর এ ক্ষেত্রে তার স্বামীর হাতও প্রসারিত হয়। অর্থলোলুপ মানুষগুলোর পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা, স্নেহহীন নিষ্করুণ পরিবেশ, লাঞ্ছনা-গঞ্জনায় তিলে তিলে নিঃশেষ হতে থাকে মিনু। সে সবার মন জয় করার প্রয়াস চালায়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয় না, চরম পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়।
হৈমন্তীর সঙ্গে মিনুর সামান্য সাদৃশ্য থাকলেও বৈসাদৃশ্যও আছে। গল্পে দেখতে পাই—‘গিরিনন্দিনী’ হৈমন্তী পর্বতের মতোই উদার, নির্মল, নিষ্কলঙ্ক, আদর্শ পিতার অনুরাগী। তাই বাবাকে নিয়ে কটুক্তি করলে মার্জিত ভাষায় সে প্রত্যুত্তর করে। শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার-নির্যাতনের কোনো খবর হৈমন্তী তার বাবাকে, এমনকি অপুকেও জানায় না। উদ্দীপকের মিনু শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারের কথা মাকে চিঠিতে জানায়। তার স্বামীও তাকে নির্যাতন করে। কিন্তু অপু স্ত্রীর ব্যথায় সমব্যথী। হৈমন্তী সাহিত্যপ্রেমী, অপুর পাঠ্যগ্রহ জাগাতে সে সক্ষম। অন্যদিকে মিনুর চরিত্রে এ গুণ অনুপস্থিত। অতএব আলোচনা থেকে বলা যায়—মিনু হৈমন্তী চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করে না। তাদের মধ্যে আংশিক মিল আছে মাত্র।