ধাক্কা তত্ত্ব

উঠতে-বসতে, চলতে-ফিরতে আমরা একে অন্যের সঙ্গে ধাক্কা খাই। বাসের সঙ্গে ধাক্কা খায় বাস, সাইকেল-রিকশাও ধাক্কা খায় কখনো কখনো। বাংলা সিনেমাতেও ‘ধাক্কা তত্ত্ব’ মেনে চলা হয় প্রাচীনকাল থেকে। নায়ক-নায়িকার পরিচয়ই হয় ধাক্কা খাওয়ার মাধ্যমে। আবার অনেক সময় কোনো কোনো খবর শুনেও ভীষণ ধাক্কা খাই আমরা। তাই ধাক্কা তত্ত্বের বিশ্লেষণ করতে নামলেন মাসউদ ফোরকান

.
.

ধাক্কা তত্ত্বের জনক বিজ্ঞানী আলবার্ট নিউটন ‘ধাক্কা’ নিয়ে বলেন, ‘ধাক্কা আমাদের কাছে টেনে নিয়ে আসে। এবং ধাক্কার মাধ্যমে প্রযুক্ত বলের প্রভাবে উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষকের মনমানসিকতার সমানুপাতিক।’ ধাক্কা নিয়ে সতেরো শতকে করা এই মতবাদের সমালোচনা করেন বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী বেঞ্জামিন হকিং। তিনি বলেন, ‘ধাক্কা কেবল কাছেই টানে। এর ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতি সব সময় ধনাত্মক দিকে ক্রিয়া করে।’
সাহিত্যেও আমরা ‘ধাক্কা’র অনেক নিদর্শন দেখতে পাই। শরৎচন্দ্র ঠাকুর বলেছিলেন, ‘বড় ধাক্কা শুধু কাছেই টানে না, দূরেও ঠেলিয়া দেয়।’ আবার বিংশ শতাব্দীতে ভব ডিলারের ‘ধাক্কা সংগীত’ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। তাঁর একটা গান আছে এ রকম, ‘আমি স্বর্গের দরজায় ধাক্কা দিচ্ছি কিন্তু ফিঙ্গার প্রিন্ট ম্যাচ করছে না।’
এই একবিংশ শতাব্দীতে ‘ধাক্কা তত্ত্ব’ নতুন গলিতে মোড় নিয়েছে। বাংলাদেশের দুই কৃতী সন্তান পৃথক দুটি তত্ত্ব দিয়ে পদার্থবিজ্ঞানের সঙ্গে রাজনৈতিক তত্ত্বের সমন্বয় করেছেন। তাঁদের তত্ত্ব দুটি হলো:
তত্ত্ব ১: ইট-সিমেন্ট দিয়ে ভবন তৈরি হলেও বিরোধী দলের কয়েকজন মিলে ভবনের পিলারে ধাক্কা দিলে সেটি পড়ে যাবে।
তত্ত্ব ২: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কখনো সাংবাদিকদের নির্যাতন করে না, মাঝেমধ্যে ধাক্কা লেগে যায়।
তবে কখনো কখনো এর ফলে সাংবাদিকদের আহত কিংবা বিবস্ত্র হতেও দেখা যায়। এই সমালোচনার জবাবে ওই বিজ্ঞানী বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় থাকে। তাদের পারদর্শিতায় মুগ্ধ হয়ে সাংবাদিকেরা মাঝেমধ্যে হাই-ফাইভ দেন। এই হাই-ফাইভ দিতে গিয়ে সাংবাদিকেরা বিপদ ডেকে আনেন। কারণ, অনেক সময় একজন সাংবাদিক একই সময়ে একাধিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যের সঙ্গে হাই-ফাইভ দিতে গিয়ে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পড়ে যান। এটা পদার্থবিজ্ঞানের বেসিক।
এই দুটি জনপ্রিয় তত্ত্ব প্রকাশিত হওয়ার পর পদার্থবিজ্ঞানের সঙ্গে অন্যান্য জ্ঞানের শাখার মিশ্রণ ঘটেছে। পদার্থবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সমন্বয়ে উন্মোচিত হয়েছে নতুন আরেক বিজ্ঞান।