ধূসরে উজ্জ্বল জাকারবার্গ

এই তো সেদিনের কথা। ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গ ও প্রিসিলা চ্যান দম্পতির কোল আলোকিত করে জন্ম নিল এক কন্যাসন্তান। নাম রাখা হলো ‘ম্যাক্স’। খুশির বন্যা বয়ে গেল ফেসবুকে, ছুঁয়ে গেল বিশ্বব্যাপী ফেসবুক ব্যবহারকারীদেরও। কিন্তু মার্ক যতটা ব্যস্ত আর কাজপাগল মানুষ, কাজের ফাঁকে মেয়েকে সময় দেওয়া তো মুশকিল! অগত্যা, পিতৃত্বের টানে মেয়েকে সময় দেওয়ার জন্য পিতৃত্বকালীন ছুটিই নিয়ে নিলেন তিনি। এরপর মেয়েকে বিভিন্ন ধরনের বইয়ের গল্প পড়ে শোনালেন, পদার্থবিজ্ঞানের তত্ত্বীয় সব বিদঘুটে বিষয়ও বাদ গেল না। ফেসবুকের কল্যাণে তা দেখতে পেলাম আমরাও। তারপর কিছুদিন আগে দেখা গেল, এতটুকুন মেয়েকেই সাঁতার শেখাচ্ছেন মার্ক! আবার জানিয়েছেন, সাঁতার কাটতে নাকি ম্যাক্স খুব পছন্দ করে!

ছুটি শেষে গত ২৫ জানুয়ারি আবার পালো আল্টোর ফেসবুক কার্যালয়ে কাজে যোগ দেন তিনি। যোগদানের আগে কোন পোশাকটি পরবেন, তা নিয়ে কৌতুক করে একটি ছবিসহ একটা পোস্ট দেন মার্ক। কারও বুঝতে অসুবিধা হয়নি, কৌতুকটা কী! কারণ, মার্ক জাকারবার্গের পোশাকের সংগ্রহে তো টি-শার্ট এবং হুডি সবই ছাই রঙের! এর আবার বাছাবাছির কী আছে?
অনেক দিন ধরেই অনুসারীদের মনে কৌতূহল ছিল। এবার নিশ্চয়ই সেটা প্রশ্নেই রূপ নিল—এমন জনপ্রিয় বহুমূল্য প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী, যিনি নিজেই সবচেয়ে কম বয়স্ক বিলিয়নিয়ারদের একজন, কেন এমন সাদামাটা একরঙা-এক রকম পোশাক প্রতিদিন পরেন? কেন তাঁর পোশাকে চাকচিক্য কিংবা বৈচিত্র্য নেই?
২০১৪ সালে ফেসবুকের এক প্রশ্নোত্তর পর্বে মার্ক দিয়েছেন সেই প্রশ্নের উত্তর। তিনি জানিয়েছেন, প্রতিদিন একই রকমের পোশাক পরার ফলে তাঁর সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় ও শক্তি দুটোই বাঁচে এবং তিনি অফিসের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার প্রতি মনোনিবেশ করতে পারেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি সত্যিকার অর্থেই আমার জীবনটাকে এমন পরিষ্কার করে গড়ে তুলতে চাই, যেন বাকি বিষয়গুলোতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ঝামেলা এড়িয়ে সময় বাঁচিয়ে আমি যেন সর্বোত্তমভাবে এই ফেসবুক সম্প্রদায়ের জন্য কাজ করতে পারি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি এমন একজন সৌভাগ্যবান মানুষ, যে প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে কোটি কোটি মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পারে এবং জীবনের অতি সাধারণ ও তুচ্ছ বিষয়গুলো নিয়ে বেশি মাথা ঘামালে আমার কাছে মনে হয় আমি আমার প্রকৃত কাজটি সঠিকভাবে করছি না।’
সত্যিই তো। জীবনের সব সাধারণ আর খুঁটিনাটি বিষয়ের দিকে অপ্রয়োজনীয় খেয়াল রাখতে গিয়ে নিজের আসল কাজের ক্ষতি করাটা প্রকৃত কাজপাগল মানুষের কাজ তো নয়। মার্ক জাকারবার্গের এই ধারণাটি অবশ্যই মূল্যবান। নিশ্চয়ই এমন অনেক ভিন্নমত ও চিন্তাভাবনাই তাঁকে আজকের ৩১ বছর বয়সী বিলিয়নিয়ার তারকায় পরিণত করেছে।
তথ্যসূত্র: ইনডিপেনডেন্ট, টেলিগ্রাফ, স্কুপহুপ ডটকম ও মিরর