ধ্বনি, বর্ণ ও বর্ণমালা

প্রিয় শিক্ষার্থী, আজ বাংলা ২য় পত্রের ব্যাকরণ অংশের ওপর আলোচনা করা হলো।

ধ্বনি

কোনো ভাষার উচ্চারিত শব্দকে বিশ্লেষণ করলে যে উপাদানসমূহ পাওয়া যায় সেগুলোকে পৃথকভাবে ধ্বনি বলে। ধ্বনির সঙ্গে সাধারণত অর্থের সংশ্লিষ্টতা থাকে না, ধ্বনি তৈরি হয় বাগ্যন্ত্রের সাহায্যে। ধ্বনি তৈরিতে যেসব বাগ্-প্রত্যঙ্গ সহায়তা করে সেগুলো হলো ফুসফুস, গলনালি, জিহ্বা, তালু, মাড়ি, দাঁত, ঠোঁট, নাক ইত্যাদি। মানুষ ফুসফুসের সাহায্যে শ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগ করে। ফুসফুস থেকে বাতাস বাইরে আসার সময় মুখের বিভিন্ন জায়গায় বাধা পায়। ফলে মুখে নানা ধরনের ধ্বনির সৃষ্টি হয়। তবে সব ধ্বনিই সব ভাষা গ্রহণ করে না।

বাংলা ভাষায় ব্যবহূত ধ্বনিগুলোকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয় :

১. স্বরধ্বনি ২. ব্যঞ্জনধ্বনি।

১. স্বরধ্বনি: যে ধ্বনি অন্য ধ্বনির সাহায্য ছাড়া নিজেই সম্পূর্ণভাবে উচ্চারিত হয় এবং যাকে আশ্রয় করে অন্য ধ্বনির সৃজন হয়, তাকে স্বরধ্বনি বলে। বাংলা ভাষায় মৌলিক স্বরধ্বনি সাতটি। যথা  অ, আ, ই, উ, এ, ও, অ্যা।

২. ব্যঞ্জনধ্বনি: যে ধ্বনি স্বরধ্বনির সাহায্য ছাড়া স্পষ্টরূপে উচ্চারিত হতে পারে না এবং যে ধ্বনি সাধারণত অন্য ধ্বনিকে আশ্রয় করে উচ্চারিত হয়, তাকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। যেমন: ক্, খ্, গ্, ঘ্, প্, স্, ইত্যাদি। এই ধ্বনিগুলোকে প্রকৃষ্টভাবে শ্রুতিযোগ্য করে উচ্চারণ করতে হলে স্বরধ্বনির আশ্রয় নিতে হয়। যেমন: (ক্+অ=) ক; (গ্+অ=) গ; (প্+অ=) প ইত্যাদি।

বর্ণ

ধ্বনি মানুষের মুখনিঃসৃত বায়ু থেকে সৃষ্ট, তাই এর কোনো আকার নেই। এগুলো মানুষ মুখে উচ্চারণ করে এবং কানে শোনে। ভাষা লিখে প্রকাশ করার সুবিধার্থে ধ্বনিগুলোর প্রতিনিধি হিসেবে কিছু প্রতীক তৈরি করা হয়েছে। এই প্রতীকের নাম বর্ণ। এই বর্ণসমূহের সমষ্টিই হলো বর্ণমালা। বাংলা ধ্বনির মতো বর্ণও তাই দুই প্রকার: ১. স্বরবর্ণ, ২. ব্যঞ্জনবর্ণ।

১. স্বরবর্ণ: স্বরধ্বনির লিখিত চিহ্ন বা প্রতীককে বলা হয় স্বরবর্ণ। বাংলা ভাষায় মৌলিক স্বরধ্বনি সাতটি। কিন্তু স্বরবর্ণ ১১টি।

যথা: অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, এ, ঐ, ও, ঔ।

২. ব্যঞ্জনবর্ণ: ব্যঞ্জনধ্বনির লিখিত চিহ্ন বা প্রতীককে ব্যঞ্জনবর্ণ বলা হয়। বাংলা ভাষায় ব্যঞ্জনবর্ণ ৩৯টি। যথা:

ক         খ         গ           ঘ         ঙ           চ         ছ           জ        ঝ           ঞ        ট           ঠ         ড           ঢ         ণ           ত        থ            দ         ধ            ন

প         ফ        ব            ভ        ম

য         র         ল           শ         ষ            স         হ           ড়        ঢ়            য়         ত্           ং          ঃ   

বর্ণমালা

কোনো ভাষা লিখতে যে ধ্বনি-দ্যোতক প্রতীক বা চিহ্নসমূহ ব্যবহূত হয় তার সমষ্টিই হলো বর্ণমালা। বাংলা ভাষায় ব্যবহূত বর্ণসমূহকে একত্রে বাংলা বর্ণমালা বলে।

বাংলা বর্ণমালায় মোট ৫০টি বর্ণ আছে।

বাংলা বর্ণমালায় স্বরবর্ণের লিখিত রূপ দুটি:

১. পূর্ণরূপ ২. সংক্ষিপ্ত রূপ।

১. স্বরবর্ণের পূর্ণরূপ: বাংলা ভাষা লেখার সময় কোনো শব্দে স্বাধীনভাবে স্বরবর্ণ বসলে তার পূর্ণরূপ ব্যবহূত হয়। যেমন:

শব্দের প্রথমে: অনেক, আকাশ, ঋণ, এক।

শব্দের মধ্যে: বেদুইন, বাউল, আবহাওয়া।

শব্দের শেষে: বই, বউ, যাও্

২. স্বরবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপ: অ-ভিন্ন অন্য স্বরবর্ণগুলো ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে সংযুক্ত হলে পূর্ণরূপের বদলে সংক্ষিপ্ত রূপ পরিগ্রহ করে। স্বরবর্ণের এ ধরনের সংক্ষিপ্তরূপকে ‘কার’ বলে। স্বরবর্ণের ‘কার’-চিহ্ন ১০টি। যথা:

আ—কার ( া)— মা, বাবা, ঢাকা।

ই—কার ( ি)— কিনি, চিনি, মিনি।

ঈ—কার ( ী)— শশী, সীমানা, রীতি।

উ—কার (  ু )— কুকুর, পুকুর, দুপুর।

ঊ—কার (  ূ )— ভূত, মূল্য, সূচি।

ঋ—কার (  ৃ )— কৃষক, তৃণ, পৃথিবী।

এ—কার ()ে— চেয়ার, টেবিল, মেয়ে।

ঐ—কার ()ৈ— তৈরি, বৈরী, নৈঋত।

ও—কার ( ো)— খোকা, পোকা, বোকা।

ঔ—কার ( ৌ)— নৌকা, মৌসুমি, পৌষ।

মোস্তাফিজুর রহমান লিটন, শিক্ষক

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, ঢাকা

# পরবর্তী অংশ ছাপা হবে আগামীকাল