পড়তে চাইলে সিএমএ

বেড়ে চলেছে পেশাগত ডিগ্রির কদর। তাই শুধু প্রাতিষ্ঠানিক সনদে মিলছে না চাকরি নামের সোনার হরিণ। আবার অনেকের প্রতিষ্ঠানে পদোন্নতির জন্য প্রয়োজন পেশাগত সনদ। কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যয় নিরীক্ষা ও ব্যবসায়-বাণিজ্যে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের হিসাব বিভাগ, প্রশাসনসহ কর্মরতদের জন্য একটি কোর্স হচ্ছে সিএমএ। সিএমএ হচ্ছে কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টসের সংক্ষিপ্ত রূপ। নিজেদের এগিয়ে রাখতে সদ্য স্নাতক শেষ করা শিক্ষার্থীরাও করতে পারেন কোর্সটি। বিশ্বস্বীকৃত এই পেশাগত ডিগ্রিটি বাংলাদেশে প্রদান করে থাকে দি ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টস অব বাংলাদেশ, সংক্ষেপে যা আইসিএমএবি নামে পরিচিত।
ভর্তির সময়: সিএমএ কোর্সে দুটি ভাগে ভর্তি হওয়া যায়। সদ্য স্নাতক বা যাঁরা এখনো চাকরিতে ঢোকেননি তাঁদের জন্য কোর্সটির নাম কোচিং কোর্স। আর যাঁরা মূলত পেশাজীবী তাঁদের জন্য করেসপনডেন্স কোর্স। তবে কেউ চাইলে দুটোর যেকোনো একটাতে ভর্তি হতে পারবেন। কোর্স দুটির মৌলিক পার্থক্য হচ্ছে, কোচিং কোর্সের ক্ষেত্রে নিয়মিত ক্লাস করতে হয় এবং নির্দিষ্ট সময় শেষে পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। অন্য দিকে করেসপনডেন্স কোর্সের জন্য ক্লাসের বাধ্যবাধকতা নেই। শুধু নির্দিষ্ট সময়ে অভিসন্দর্ভ জমা দিতে হবে। বছরে দুইবার ভর্তি-কার্যক্রম চলে কোচিং কোর্সের জন্য—জানুয়ারি ও জুলাই। করেসপনডেন্স কোর্সের ক্ষেত্রে জানুয়ারি থেকে জুন সেশনে ভর্তি হতে চাইলে ডিসেম্বর থেকে মার্চ এবং জুলাই থেকে ডিসেম্বর সেশনের জন্য জুন থেকে সেপ্টেম্বর।
খরচ: সিএমএ কোর্স সম্পন্ন করতে আপনাকে পাঁচটি লেভেল পার করতে হবে। এ জন্য প্রতিটি লেভেলে চারটি করে বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে। প্রতিটি লেভেলে কোর্সের মেয়াদ ছয় মাস। কোচিং কোর্সের ক্ষেত্রে পাঁচটি লেভেল মিলে ভর্তি হিসেবে খরচ হবে মোট ৪৮ হাজার ৪০০ টাকা। করেসপনডেন্স কোর্সের জন্য এ খরচ দাঁড়াবে ৫৩ হাজার ৬০০ টাকা। এ ছাড়া প্রতিটি লেভেলে পরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট অঙ্কের আলাদা ফি দিতে হবে। জানালেন আইসিএমএবির সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম।
যোগ্যতা: যেকোনো বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিধারীরা ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে স্নাতক পর্যন্ত সব পরীক্ষা মিলে ফল থাকতে হবে ন্যূনতম ৬ পয়েন্ট। পয়েন্ট হিসাবের ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণীর জন্য ৩ পয়েন্ট ধরা হয়। এ ক্ষেত্রে সিজিপিএ ৫-এর মধ্যে ৩.৫ থেকে ৫ এবং সিজিপিএ ৪-এর মধ্যে ৩ থেকে ৪ পর্যন্ত ধরা হয় প্রথম শ্রেণী। দ্বিতীয় শ্রেণীর জন্য ২ পয়েন্ট হিসাব করা হয়। এ ক্ষেত্রে সিজিপিএ ৫-এর মধ্যে ২.৫ থেকে ৩.৫ এবং সিজিপিএ ৪-এর মধ্যে ২ থেকে ৩ পর্যন্ত ধরা হয় দ্বিতীয় শ্রেণী। তৃতীয় শ্রেণীর জন্য দেওয়া হয় ১ পয়েন্ট। এ ক্ষেত্রে সিজিপিএ ৫-এর মধ্যে ২.৫ নিচে এবং সিজিপিএ ৪-এর মধ্যে ২ নিচে ধরা হয় তৃতীয় শ্রেণী।
বৃত্তি ও শিক্ষানবিশ কাজ: গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিষ্ঠান থেকে বৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়। এ ছাড়া চারটি লেভেল বা প্রফেশনাল লেভেল-৩ সমাপ্তির পর ৩ মাসের জন্য গবেষণা ও শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজের সুযোগ করে দেওয়া হয়।
কাজের ক্ষেত্র: সিএমএ সম্পন্ন করে বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায় ও বাণিজ্যক প্রতিষ্ঠানের হিসাব বিভাগ, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বিভাগসহ প্রশাসন বা অন্যান্য বিভাগেও এ ডিগ্রির কদর রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থায়ও কাজের ক্ষেত্র বাড়ছে। কাজের ক্ষেত্র সম্পর্কে আইসিএমএবির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ শামসুল আলম যোগ করেন, ‘আইসিএবি স্বীকৃত বিভিন্ন ফার্ম অথবা নিজেই স্বাধীনভাবে একটি ফার্ম খুলে বসতে পারেন ব্যবসা-বিশ্লেষণ, কর পরামর্শ, ব্যবস্থাপনা পরামর্শ এবং আর্থিক বিশ্লেষণসহ বিভিন্ন সেবা দেওয়ার জন্য। এ ছাড়া নিজে উদ্যোক্তা হতে চাইলেও করতে পারেন কোর্সটি।
যোগাযোগ: ঢাকা ছাড়াও চারটি আঞ্চলিক শাখার মাধ্যমে আইসিএমএবি তাদের কার্যক্রম চালায়। ঢাকার জন্য আইসিএমএ ভবন, নীলক্ষেত। ফোন: ৯৬১৫৪৬০। চট্টগ্রামে যোগাযোগ করুন সিডিএ, আগ্রাবাদ। ফোন: ০৩১-৭২৭৬৩৮। রাজশাহীর যাঁরা ভর্তি হতে চান তাঁরা যোগাযোগ করুণ, ফোন: ০৭২১-৭৫১৩৩২। খুলনাতে ভর্তির জন্য, ফোন: ০৩১-৭২২৩৩৫। কুমিল্লার জন্য সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ। ফোন: ০৮১-৬৮৪৬৩/১০৪। এ ছাড়া সার্বিক বিষয় জানতে আইসিএমএর ওয়েবসাইট www.icmab.org.bd ভিজিট করুন।