পাগলে কী না বলে...

আমাদের পাশের এলাকায় এক পাগল থাকেন। দেখলে অবশ্য বোঝা যাবে না তিনি পাগল। তবে ভেতরে ভেতরে মাথাটা একদম শেষ! তাঁর কাজ হলো বিভিন্ন এলাকায় ঘুরঘুর করা, মানুষের কাছে হাত পাতা। পাগল মানুষ, যে যা খেতে দেয়, খায়। তাঁর কথাবার্তায় কোনো আগামাথা নেই। আকাশকে বলেন সাগর, পাহাড়কে বলেন মরুভূমি!
তাঁর অদ্ভুত সব কর্মকাণ্ড আমাদের নিত্যদিনের হাসির খোরাক। প্রথম প্রথম মানুষ এক-আধটু অবাক হতো, পরে একসময় তাঁর কথায় কেউ আর পাত্তাটাত্তা দেয় না। অবশ্য তাতে তাঁরও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই! তিনি পাগল মানুষ, কে কী বলল, তাতে তাঁরই বা কী যায়-আসে? আগে অবশ্য এমনটা ছিলেন না। আমাদের পাড়ার প্রতি তাঁর বড় অনীহা, সেখান থেকেই নাকি এমন পাগলদশা। তাঁদের পূর্বপুরুষ আমাদের এলাকায় লুটতরাজ চালাতে এসে উল্টো কঠিন ধোলাই খেয়েছিল। ফলে তিনি আমাদের এলাকার কাউকে দেখলে একদম সহ্য করতে পারেন না।
তার মধ্যে আবার গেলবার ঘটে গেল মহা ঘটনা। ডাংগুলি খেলায় আমাদের এলাকার সঙ্গে তাঁর এলাকা পেরে ওঠেনি। এটাও অবশ্য পাগলামিটা আরও বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে। অল্প শোকে কাতর, অধিক শোকে পাথর হয় বলে আমরা জানি। কিন্তু তিনি অধিক শোকে পাথর না হয়ে একদম পাগল হয়ে গেছেন! আফসোস!
তাঁর নাম নাকি আবার রাজা! মাঝেমধ্যে তাঁকে হাতে মাইক্রোফোনের মতো একটা লাঠি বা অন্য কিছু ধরে থাকতে দেখা যায়। কল্পিত মাইক্রোফোন ধরে এমন একটা ভান করেন, যেন কোনো খেলার ধারাভাষ্য দিচ্ছেন! সেটাও ঠিকঠাক দিতে পারলে হতো। মাঝে মাঝে দু-একটা ইংরেজিও বলে ফেলেন! মাঝে একবার তাঁকে বাজারে ডেকে এনে লোকজন মজা দেখতে লাগল। কেমন ইংরেজি পারে, সেটা পরখ করার জন্য আমাদের পাড়ার আতাহার ভাই কাগজে future শব্দটা লিখে বললেন, ‘রাজা, বল তো, এটার উচ্চারণ কী?’
রাজার মুখে সবজান্তার ভাব। বলল, ‘কী আবার! ফুটুরি।’
রাজার ইংরেজির দৌড় দেখে সবাই নিশ্চিন্ত হয়। ভাবে, এর ‘ফুটুরি’ আসলেই ভালো! লোকজনের মুখে ফিচেলমার্কা হাসি দেখে রাজা আরও খেপে যায়। কী এক অদ্ভুত ভাষায় গালিগালাজ করতে শুরু করে। তবে আমাদের পাড়ার কেউ বিষয়টা নিয়ে অত মাথা ঘামায় না। অনেকে আবার তাঁর নামের সার্থকতা খুঁজে পায়। সে আসলেই রাজা, পাগলদের রাজা। পাগলে কী না বলে!