পানি শোধনের নতুন পদ্ধতি

সোলার স্পঞ্জ ব্যবহার করে উৎ​পাদিত বাষ্প পাতনের মাধ্যমে পানি লবণমুক্ত করা হয়।
সোলার স্পঞ্জ ব্যবহার করে উৎ​পাদিত বাষ্প পাতনের মাধ্যমে পানি লবণমুক্ত করা হয়।

সূর্যালোকের সাহায্যে পানি লবণমুক্ত করার নতুন একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক। এ পদ্ধতিতে তাঁরা ব্যবহার করেছেন কার্বনের যৌগ থেকে তৈরি সোলার স্পঞ্জ। এটি সূর্যের আলোয় উত্তপ্ত হয়ে লবণাক্ত পানি থেকে বাষ্প তৈরি করে। সেই বাষ্প থেকে পাতন প্রক্রিয়ায় পাওয়া যাবে পরিশোধিত পানি।
ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) গবেষকদের উদ্ভাবিত নতুন পদ্ধতিটির মাধ্যমে প্রাপ্ত বাষ্প পানি শোধন ছাড়াও বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম ও বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি পরিষ্কার করার কাজে ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। এ-সংক্রান্ত একটি গবেষণা নিবন্ধ নেচার কমিউনিকেশনস সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
সোলার স্পঞ্জের গঠন ও কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে ওই গবেষকেরা বলেন, স্পঞ্জের মতো দেখতে কয়েক স্তরের বস্তুটির ওপরের অংশে গ্রাফাইট (কার্বনের যৌগ) এবং নিচে থাকে ফেনায়িত কার্বন। ছোট ছোট ছিদ্রপথ দিয়ে গ্রাফাইটের মধ্য দিয়ে তরল পদার্থ চলাচল করতে পারে। সূর্যের আলোয় গ্রাফাইটের উত্তপ্ত অবস্থায় চাপের তারতম্য সৃষ্টি হয়। ফলে নিচের পানি শোষিত হয়ে ওপরে চলে আসে এবং উত্তপ্ত গ্রাফাইটের সংস্পর্শে বাষ্পে পরিণত হয়। সোলার স্পঞ্জে সূর্যালোক থেকে ৮৫ শতাংশ আলোকশক্তি ব্যবহৃত হয়। কাজেই এই সোলার স্পঞ্জ প্রচলিত সাধারণ সৌরচুল্লির চেয়ে অনেক বেশি কার্যক্ষম।
সাধারণ সৌরচুল্লি ও সোলার স্পঞ্জের মধ্যে পার্থক্য প্রসঙ্গে এমআইটির যন্ত্রকৌশল বিভাগের গবেষক হাদি ঘাসামি বলেন, সাধারণ সৌরচুল্লিতে সূর্যালোক ব্যবহার করে পানির উত্তপ্তকরণ প্রক্রিয়ায় অনেক আয়না প্রয়োজন। এসব প্রতিফলকের সাহায্যে আলোকে কেন্দ্রীভূত করে নির্দিষ্ট পাত্র উত্তপ্ত করা হয়। এটি বেশ ব্যয়বহুল একটি প্রক্রিয়া এবং এতে সৌরশক্তির অপচয় হয়। কিন্তু সোলার স্পঞ্জের গঠন বেশ সরল এবং এটি তৈরির খরচ এবং শক্তির অপচয়ও তুলনামূলক অনেক কম।
সৌরশক্তির ব্যবহার নিয়ে বর্তমানে বিশ্বে নানা ধরনের গবেষণা চলছে। পানির সঙ্গে অতি ক্ষুদ্র কণা (ন্যানো পার্টিকেল) মিশিয়েও বাষ্প তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে প্রখর রোদের প্রয়োজন। কিন্তু এমআইটির গবেষকেরা অনেক কম শক্তির সাহায্যেই সোলার স্পঞ্জ ব্যবহার করে পানি থেকে বাষ্প তৈরির চেষ্টায় সফল হয়েছেন।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রেও বাষ্প অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে পানি উত্তপ্ত করে বাষ্প উৎপাদন করা হয়। পরে সেই বাষ্প দিয়ে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। তবে সোলার স্পঞ্জ থেকে উৎপন্ন বাষ্প দিয়ে এই মুহূর্তে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাওয়া যাবে না। কিন্তু বিদ্যুৎবিহীন অঞ্চলগুলোতে এই প্রক্রিয়ায় লবণাক্ত পানি পাতনের মাধ্যমে পানি পরিশোধন করা যাবে।
সূত্র: সায়েন্সডেইলি
সোলার স্পঞ্জের গঠন ও কাজ
৩ পানিশোষক
২ অপচয় রোধের ব্যবস্থা
১ অপরিশোধিত পানি