
সে অনেক কাল আগের কথা। সে সময় আমাদের দেশে অনেক মাঠ ছিল। একেকটা বিশাল সাইজের মাঠ। তাই বাউন্ডারিও বড়। উড়িয়ে বলকে মাঠছাড়া করা যেনতেন কাজ নয়! একমাত্র ভরসা ছিল চার, মানে গড়িয়ে গড়িয়ে বাউন্ডারি।
তো একদিন খেলা চলছে। তুমুল উত্তেজনাপূর্ণ খেলা। কমলাকান্দি একাদশ বনাম মিঠাপুর একাদশ। কমলাকান্দি একাদশ প্রথমে ব্যাট করে ১২৩ রানের টার্গেট দিয়েছে। মিঠাপুরও কম যায় না। যেমন টার্গেট, তেমন প্রতিপক্ষ। বল বাই বল এক-দুই করে রান হচ্ছে। ভেন্যু নিজেদের বলে দর্শকও প্রায় সবটা মিঠাপুরের পক্ষে। এরা কঠিন ভক্তকুল। পেটে-পিঠে ‘গর্জে ওঠো মিঠাপুর’, ‘শাবাশ মিঠাপুর’ টাইপের স্লোগান লিখে এনেছে। অন্যদিকে, এলাকার তরুণীরাও ভীষণ টেনশনে। কারণ, তাদের প্রিয় ব্যাটসম্যান বশির হোসেন যে এখনো ক্রিজে।
ক্রিজের এক প্রান্তে বশির, অন্য পাশে আসগর। বশির আজ তার ন্যাচারাল ভঙ্গিতে নেই। বিরক্তিকরভাবে ডিফেন্স করছে। একেবারে কঠিন ডিফেন্স। এদিকে দর্শক সব ‘ফো-ও-র! ফো-ও-র!’ বলে চেঁচিয়ে অস্থির। সোজা-সাপটা বলগুলোতেও বশির ঠেকিয়ে যাচ্ছে শুরু থেকেই। কেবল সিঙ্গেলই হচ্ছে। এ নিয়ে দর্শকমহলে মৃদু ক্ষোভ। মারকুটে খেলোয়াড়ের এমন ব্যাটিংয়ে তারা হতাশ। কেউ কেউ চিৎকার করছে, ‘ওই বশির্যা, মাইরা খেল!’
বলতে না-বলতেই আরও একটা দারুণ বল দারুণভাবে ঠেকিয়ে দিল বশির। এর পরের বলেই সপাটে ব্যাট হাঁকাল সে। দুই ড্রপে বাউন্ডারি পার। চার রান। দর্শক সব নড়েচড়ে বসার আগেই আরও একটি চারের মার। পাশেই এক দর্শক মাটিতে বসে কী যেন লিখছে। দাঁড়িয়ে জানান দিল, ১৬ বলে ৪৪ রান দরকার। একেবারে টানটান উত্তেজনা। ছক্কা মারা টাফ, তবে টানা বাউন্ডারি হলে জেতা সম্ভব। পরের বল। এবারও সজোরে! এবং চার! একে একে সবাইকে অবাক করে ১০-১০টি বলে বাউন্ডারি হাঁকাল বশির।
লাস্ট বল। জিততে আর দুই রান দরকার। এক নিলে ড্র। কোনো ঘটনাই না। দর্শক সব দাঁড়িয়ে গেছে। বোলার হারুন দৌড়ে আসছে হাটখোলা প্রান্ত থেকে। বল করল এবং বোল্ড! পরিষ্কার বোল্ড আউট হলো বশির হোসেন।
কথিত আছে, এর পরই নাকি এক প্রবাদের জন্ম হয়: সময়ের এক ফোর, অসময়ের দশ ফোর। পরে সেটি পরিবর্তিত হয়ে হয় ‘সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড়।’