ফেসবুকে অপ্রিয় বন্ধু

আপনি পছন্দ করেন নাম—এমন অনেককেই হয়তো ফেসবুকে বন্ধু করে রেখেছেন। বাস্তবে অপছন্দের মানুষ হলেও দু-একজনকে ফেসবুকে বন্ধুর তালিকায় রাখার পেছনে কারণ রয়েছে। তা হচ্ছে, আপনি তাঁদের খুঁটিনাটি জেনে রাখতে চান , যাতে নজরদারি ফলানো যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকেরা সম্প্রতি এক জরিপে এ তথ্য পাওয়ার কথা দাবি করেছেন বলে ডেইলি মেইল অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়। গবেষকদের দাবি, ৬৮ শতাংশ ফেসবুক ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রে এমন বন্ধুর খোঁজ পাওয়া যায়, যাঁকে তাঁরা পছন্দ করেন না। ফেসবুকে বন্ধুত্ব থাকলেও বাস্তবে রাস্তায় দেখা হলে দুজনকে এড়িয়ে যান—এমন মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়।
অর্থ সংরক্ষণ বিষয়ক ওয়েবসাইট কুপনকোডসপ্রোর গবেষকেরা দুই হাজার ৫৭০ জন মার্কিন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের মধ্যে এই জরিপ চালান। জরিপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ ব্যক্তির রায় হচ্ছে, বাস্তবে অপছন্দের হলেও ফেসবুকে তাঁরা আনফ্রেন্ড করেন না। কারণ ওই বন্ধুবেশী শত্রুর সব তথ্য এতে নখদর্পণে থাকে।
জরিপে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের তথ্য অনুযায়ী, গড়ে সবার ৬৭১ জন করে ফেসবুক বন্ধু রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র তিন শতাংশকে সত্যিকারের বন্ধু বলে মনে করেন তাঁরা।
জরিপ অনুযায়ী, শতকরা ২০ জন ফেসবুক ব্যবহারকারী ফেসবুকে কোনো বিতর্ক তৈরি হলে তাতে অংশ নেন।
কুপনকোডসপ্রোর মুখপাত্র জর্জ চার্লস এ প্রসঙ্গে বলেছেন. জরিপের ফল বেশ মজার। আমাদের অনেক অপছন্দের মানুষকে ফেসবুকে রেখে দেওয়ার তথ্য এখানে উঠে এসেছে। অনেক সময় বাস্তবে দেখা হলেও যাঁদের এড়িয়ে চলি, তাদের ফেসবুকে বন্ধু হিসেবে রেখে দেওয়ার বিষয়টিও জানা গেছে।
জর্জ চার্লস বলেন, ‘সমাজ ব্যবস্থা হিসেবে আমরা সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে অনেক তথ্য শেয়ার করি। তাই সমাজের অন্যান্য ব্যক্তিদের কী ঘটছে না ঘটছে, তার হালনাগাদ তথ্য জানার প্রয়োজনীয়তা বোধ করি। বন্ধু হোক বা শত্রু সবার তথ্যই আমাদের চাই।
ফেসবুক বন্ধুত্ব কেন নষ্ট হয়
ফেসবুকে আপনার ঘনিষ্ঠ বন্ধুটিকে কী বন্ধু তালিকা থেকে বাদ দিতে হয়েছে? হয়তো তাঁর ঘন ঘন বিরক্তিকর পোস্ট, বিতর্কিত কোনো বিষয় নিয়ে মাতামাতি কিংবা ধর্ম ও রাজনীতি নিয়ে তাঁর মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি পছন্দ হয়নি বলেই আপনার বাধ্য হয়েছেন তাঁকে ‘আনফ্রেন্ড’ করতে।
প্রিয় বন্ধুটির প্রতি বিরক্ত হয়ে তাকে বাতিল করে দেওয়ার ঘটনা যে শুধু আপনার সঙ্গেই ঘটছে, তা কিন্তু নয়। আপনার মতো অনেকেই এই কারণগুলোর জন্যই বন্ধুত্বের তালিকা থেকে প্রিয় বন্ধুকেও বাদ দিয়েছেন।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকেরা ফেসবুকে আনফ্রেড করার কারণগুলো নিয়ে অন্য একটি মজার গবেষণা করেছেন। তাঁরা দাবি করেছেন, ফেসবুক বন্ধুকে ‘আনফ্রেন্ড’ করার অন্যতম কারণ হচ্ছে ধর্ম ও রাজনীতি নিয়ে বিতর্কিত মতামত পোস্ট করা। এ ছাড়াও ঘন ঘন নিরস মন্তব্য বা স্ট্যাটাস পোস্ট করে বিরক্তি উত্পাদন করার জন্য অনেকেই বন্ধু তালিকা থেকে প্রিয় মানুষকে বাদ দেন।
গবেষকেরা জানান, সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে মতবিরোধের বিষয়টি বা বিতর্কিত বিষয়গুলো সবচেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো ডেনভারের গবেষক ক্রিস্টোফার সিবোনা জানিয়েছেন, ফেসবুক বন্ধুকে বন্ধুত্বের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে বাস্তব জীবনে তার সঙ্গে কোনো ঝামেলা তৈরি হওয়া। তাঁর মতে, অনেক সময় সহকর্মীর সঙ্গে ফেসবুকে কোনো ঝামেলা না থাকলেও বাস্তব জীবনে ঝামেলা তৈরি হলে তাকে ফেসবুকেও বন্ধুত্বের তালিকা থেকে সরিয়ে ফেলা হয়।
গবেষকেরা এক হাজারের বেশি মানুষের ওপর গবেষণা চালিয়ে এ তথ্য পেয়েছেন।
গবেষকেরা দাবি করেছেন, ফেসবুকে প্রিয় বন্ধুকে যখন আনফ্রেন্ড করা হয় সে তখন যথেষ্ট বিরক্ত হয় এবং অনেক কষ্ট পায়। সাধারণত খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু হলে ‘আনফ্রেন্ড’ করার ঘটনা বেশি ঘটে। অবশ্য শুধু পরিচিতের ক্ষেত্রে এ ঘটনা কম।
গবেষক সিবোনা বলেন, ফেসবুকে অনেক বন্ধু থাকলে সবার সঙ্গে আন্তরিক সম্পর্ক রাখা কষ্টকর কিন্তু জেনেশুনে ঘনিষ্ঠ কাউকে বন্ধুত্বের তালিকা থেকে সরিয়ে দেওয়াটাও যথেষ্ট পীড়াদায়ক।
ফেসবুকে ব্লক করার উপায়

ফেসবুকে কোনো বন্ধুর বাড়াবাড়ি, অ্যাপ্লিকেশন, ইভেন্টের আমন্ত্রণে বিরক্তি চরমে উঠেছে? খুব সহজেই বিরক্তির বিষয়গুলোকে ব্লক করতে পারেন আপনি। ব্লক করতে হলে সেটিংস থেকে প্রাইভেসি সেটিংসে যান। সেখানে ‘হাউ ডু আই স্টপ সামওয়ান ফ্রম বদারিং মি’ নির্বাচন করে যাকে ব্লক করতে চান তার নাম বা ই-মেইল অ্যাড্রেস দিন। যাকে ব্লক করছেন তাকে ফেসবুক কোনো নোটিফিকেশন দেবে না। ব্লক করে দিলে সে ব্যক্তি আর আপনার প্রোফাইল দেখতে পারবে না বা আপনাকে বার্তা পাঠাতে পারবে না। সে আপনার কোনো স্ট্যাটাসে মন্তব্যও করতে পারবে না। আপনার বন্ধু তালিকা থেকে সে সরে যাবে।
ফেসবুকে বন্ধুত্ব হারালে
ফেসবুকের ছোটখাটো অন্য আরও অনেক নিয়মের মধ্যে একটি হলো কেউ তাঁর বন্ধু তালিকা থেকে আপনাকে বাদ দিলে, অর্থাত্ আনফ্রেন্ড করলেও ফেসবুক আপনাকে সেটা জানাবে না। সম্ভবত পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্যে অযথা তিক্ততা যাতে না বাড়ে, সে জন্য এ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কিন্তু কে কাকে তাঁর বন্ধু তালিকা থেকে ছাঁটাই করেছেন, এমনটা যদি সঙ্গে সঙ্গেই জানা যেত, তাহলে কোনো কারণে কেউ ভুল বুঝে কাজটি করে থাকলে প্রথম দফায়ই তা ভাঙানোর একটা সুযোগ অন্তত পাওয়া যেত। এ বিষয়ের সবচেয়ে ভালো একটা সমাধান হলো এফবি পিউরিটি নামের একটি ব্রাউজার এক্সটেনশন ইনস্টল করা।
www.fbpurity.com ঠিকানায় গিয়ে ওয়েবসাইট দেখার সফটওয়্যার ফায়ারফক্স, ক্রোম, সাফারি, অপেরা ব্রাউজারের জন্য এক্সটেনশন বা অ্যাড-অনসটি ইনস্টল করা যাবে। কেউ আপনাকে তাঁর বন্ধু তালিকা থেকে বাদ দিলে বা আনফ্রেন্ড করলে সঙ্গে সঙ্গেই জানিয়ে দেবে ছোট এ প্রোগ্রামটি। নিজের মতো করে সাজানো যাবে এর সেটিংগুলো। শুধু আনফ্রেন্ড সংকেত পেতে Deleted friend aler অপশনটি টিক দিয়ে নিশ্চিত করতে হবে। টুলটিতে প্রচুর অপশন আছে। অন্য অপশনগুলো অপ্রয়োজনীয় মনে করলে সেগুলো থেকে টিক উঠিয়ে দিয়ে সেভ অ্যান্ড ক্লোজ বোতামে ক্লিক করুন।
এ ছাড়া শুধু আনফ্রেন্ডের তালিকা পেতে চাইলে গুগল ক্রোম ব্রাউজারের জন্য আনফ্রেন্ড নোটিফাই নামের নতুন একটি ক্রোম এক্সটেনশন ব্যবহার করা যাবে। এটি পাওয়া যাবে goo.gl/OeEfFE ওয়েব ঠিকানায়। এর ফলে নিজের ফ্রেন্ডস পেজে লস্ট ফ্রেন্ডস নামে আরেকটি অংশ যুক্ত হবে। কারা আপনাকে আনফ্রেন্ড করলেন, তার তালিকা থাকবে এই অংশে।