ফেসবুকে ‘লাইক’-এর চেয়ে ‘লাভ’ ও ‘অ্যাংরি’ কেন পাঁচ গুণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ

হঠাৎ গুঞ্জন উঠল, ‘লাইক’-এর পাশে ফেসবুকে যোগ হবে ‘ডিজলাইক’ বোতাম। কোনো পোস্ট ব্যবহারকারীর পছন্দ না হলে ডিজলাইক চেপে তা জানাতে পারবেন পোস্টকারীকে। তবে গুঞ্জন মিথ্যা প্রমাণ করে লাইকের পাশে যুক্ত হলো আরও পাঁচটি রিঅ্যাকশন ইমোজি: ‘লাভ’, ‘হাহা’, ‘ওয়াও’, ‘স্যাড’ এবং ‘অ্যাংরি’। সেখানে ডিজলাইক বলে কিছু নেই। এসব অবশ্য বছর পাঁচেক আগের ঘটনা।

মানুষ ফেসবুক পোস্টে প্রতিক্রিয়া জানানোর নতুন উপায় পেল। আর সেটাকে কাজে লাগাল ফেসবুক। অ্যালগরিদম এমনভাবে নির্ধারণ করল যেন মানুষ তাঁদের নিউজফিডে আবেগতাড়িত এবং উত্তেজক কনটেন্ট বেশি দেখতে পান। সে কনটেন্ট মানুষের ভালো যেমন লাগতে পারে, তেমনি ক্রোধও ছড়াতে পারে। আর সে অ্যালগরিদম নির্ধারণের মূলে রয়েছে লাইকসহ ওই পাঁচটি ইমোজি। কিংবা ফেসবুকের ভাষায় ‘রিয়েকশনস’।

ফেসবুকের অভ্যন্তরীণ নথি থেকে জানা যায়, যে পোস্টগুলোতে ব্যবহারকারীরা লাইক ভিন্ন অন্য রিঅ্যাকশন জানাবেন, যেমন লাভ বা অ্যাংরি, নিউজফিডে দেখানোর ক্ষেত্রে সে পোস্টগুলোকে পাঁচ গুণ বেশি গুরুত্ব দেবে ফেসবুক। সহজভাবে বললে, ফেসবুকের কাছে লাইকের চেয়ে লাভ বা অ্যাংরির গুরুত্ব পাঁচ গুণ বেশি এবং নিউজফিডেও তেমন গুরুত্ব নিয়েই দেখানো হয়। এই নিয়ম শুরু হয় ২০১৭ সালে। অন্যভাবে বললে, যে পোস্টগুলোতে ইমোজি রিঅ্যাকশন বেশি থাকে, সেগুলো ব্যবহারকারীকে ফেসবুকে বেশি যুক্ত রাখে। আর সেটাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটির ব্যবসার মূল হাতিয়ার।

প্রতীকী ছবি
মূল ছবি: ফ্রিপিক

মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, সে নিয়মে যে ত্রুটি আছে, তা ফেসবুকের নিজস্ব গবেষকেরাই দ্রুত শনাক্ত করেন। মনে করুন, কোনো পোস্ট দেখে ব্যবহারকারীরা ক্রোধে ফেটে পড়লেন, সবাই ‘অ্যাংরি’ রিঅ্যাকশন দিয়ে প্রতিবাদ জানালেন, তখন ফেসবুক সে পোস্টকে পাঁচ গুণ গুরুত্বসহকারে অন্যদের নিউজফিডে দেখাবে। পোস্টের তথ্য যদি মিথ্যা হয় এবং ফেসবুক যদি তা ধরতে না পারে, তবু সেটা দ্রুত ছড়াবে। আর সেটাই ফেসবুকের মাধ্যমে দাঙ্গা ছড়ানোর কারণ।

ফেসবুকের অভ্যন্তরীণ নথিতে এক কর্মীর মন্তব্য ছিল, ‘ক্রোধ ছড়ায় এমন পোস্টসহ বিতর্কিত পোস্টগুলোকে গুরুত্ব দিলে তা অসাবধানতাবশত আরও স্প্যাম, অপব্যবহার, ক্লিকবেইটের দরজা খুলে দিতে পারে।’ তখন তাঁর সহকর্মী সংক্ষেপে মন্তব্য করেন, ‘সম্ভব।’

ওই গবেষকদের আশঙ্কা সত্যি প্রমাণিত হয় পরে। ফেসবুকের ডেটাবিজ্ঞানীরা ২০১৯ সালে জানান, যে পোস্টগুলোতে অ্যাংরি রিঅ্যাকশন বেশি জানান ব্যবহারকারীরা, সেগুলোতে ভুল তথ্য, বিষাদ ও নিম্নমানের সংবাদ থাকার আশঙ্কা বেশি।

রয়টার্স ফাইল ছবি

এর অর্থ দাঁড়াল, তিন বছর ধরে ফেসবুক নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে তাদের প্ল্যাটফর্মে অনেক ভুল তথ্য ছড়িয়েছে, ব্যবহারকারীর নিউজফিডে গুরুত্ব দিয়ে সামনে এনে অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। অ্যালগরিদমের মাধ্যমে এই ভুয়া তথ্যের প্রসারে ঢাকা পড়ে যায় কনটেন্ট মডারেটর ও ইন্টিগ্রিটি দলের কর্মীদের প্রচেষ্টা। এই কর্মীরা বিষোদ্‌গার ও ক্ষতিকর কনটেন্ট সরাতে দিন–রাত লড়েও কোনো কূল পাননি।

এই তথ্যগুলো উঠে আসে যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে জমা দেওয়া নথিতে এবং প্রতিষ্ঠানটির সাবেক কর্মী ফ্রান্সেস হাউগেনের ফাঁস করা নথিতে। সোমবার ব্রিটিশ সংসদে হাউগেন বলেন, ‘ফেসবুকে সবচেয়ে সহজে ছড়ায় ক্রোধ এবং ঘৃণা’।

বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, ফেসবুকের ইন্টিগ্রিটি বিভাগের কর্মীরা নানা বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করলেও নির্বাহীরা তাতে কান দেননি।