বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়

.
.

অধ্যায়-১২ 
প্রিয় শিক্ষার্থী, আজ বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় থেকে প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।প্রশ্ন: গারোদের বাসস্থানের বর্ণনা দাও।উত্তর: গারো জাতিসত্তাদের বসবাস বাংলাদেশের বৃহত্তর ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, নেত্রকোণা, হালুয়াঘাট ও আশপাশের এলাকায়। তবে বৃহত্তর সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায়ও কিছুসংখ্যক গারো রয়েছে। গারো জনগোষ্ঠী নিজেদের আচিকমান্দি' বা পাহাড়ি মানুষ হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকে।অতীতে গারোরা বিভিন্ন পাহাড়ের পাদদেশে অথবা নদীর ধারে তাদের বাড়িগুলো নির্মাণ করত। এগুলো সাধারণত দুচালাবিশষ্টি দীর্ঘ আকারের হতো। এ ধরনের বাড়ির নাম ছিল নকমান্দি'। বর্তমানে এ ধরনের বাড়িঘর দেখা যায় না। বর্তমানে তারা সমতল বাংলাদেশের স্বাভাবিক টিনের চাল ও অন্যান্য প্রচলিত বাড়ির মতোই বাড়ি তৈরি করে।

প্রশ্ন: খাসিদের সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে লেখো।

উত্তর: বাংলাদেশের সিলেট, মেৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল ও হবিগঞ্জ জেলায় প্রধানত খাসি জনগোষ্ঠী বাস করে। অতীতে সিলেট অঞ্চলে জয়ন্তা বা জৈনি্তয়া নামে একটি রাজ্য ছিল বলে জানা যায়। ধারণা করা হয় যে খাসি জাতিসত্তারা আগে ঐ রাজ্যে বাস করত।
খাসি সমাজ মাতৃতানি্ত্রক। মায়েদের সূত্র ধরেই তাদের দল, গোত্র ও বংশ গড়ে উঠে। পারিবারিক সম্পত্তির বেশিরভাগের উত্তরাধিকারী হয় পরিবারের সবচেয়ে ছোট মেয়ে। তারা খুব সহজ সরল জীবনযাপন করে।
খাসিরা সাধারণত কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। তবে একটি জনগোষ্ঠীর নাম নার' বা প্লার' যাদের লোকসংখ্যার বেশির ভাগই পান চাষ করে। মেৌমাছি চাষও তাদের জীবিকার অংশ।
প্রশ্ন: ম্রো জাতিসত্তারা কোথায় কোথায় বসবাস করেন?
উত্তর: পার্বত্য অঞ্চলে সংখ্যাগরিষ্ঠতার দিক থেকে চতুর্থ হলো ম্রো জাতিসত্তা। ম্রোরা নিজেদের ম্রো বা অতীতে মারুসা' বললেও বাঙালিরা কখনো কখনো তাদের মুরং'ও বলে থাকে। বান্দরবান জেলার রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদম উপজেলায় তারা বসবাস করে। বান্দরবান শহরের কাছে চিম্বুক পাহাড়ে গেলেই ম্রোদের দেখা যায়।
প্রশ্ন: ত্রিপুরাদের উত্সবের বর্ণনা দাও।
উত্তর: বাংলাদেশের রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় ত্রিপুরারা বসবাস করে। তবে বেশিরভাগই থাকে খাগড়াছড়ি জেলায়। এ ছাড়া বাংলাদেশ সিলেট, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম জেলায়ও কিছুসংখ্যক ত্রিপুরা বাস করে।
ত্রিপুরা সমাজে জন্ম, মৃতু্য, বিয়ে উপলক্ষ্যে নানা আচার অনুষ্ঠান পালন করা হয়। বাংলা বছরের শেষ দুদিন ও নববর্ষের প্রথম দিনে ত্রিপুরারা বৈসু' উত্সব পালন করে। তখন গ্রামবাসী গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ায়। আর কিশোরীরা কানে ফুল, গলায় টাকার ছড়া, পুঁতির মালা, হাতে কঁুচিবালা' ইত্যাদি পরে আনন্দ উত্সবে মেতে উঠে। বৈসু' উত্সবের অন্যতম প্রধান ও আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান হলো গরয়া নৃত্য'। ত্রিপুরা শিশুরা খিলা' (গিলা) বা সুকুই' নামে বিচি দিয়ে খেলতে ভালোবাসে। যাকে তারা সুকুই থুংমুং' বলে। হাডুডু, দঁাড়িয়াবান্দাও তারা খেলে।
প্রশ্ন: সব জাতিগোষ্ঠীর মানুষের পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া প্রয়োজন কেন?
উত্তর: বাংলাদেশের পাহাড় ও সমতলে অনেকগুলো ক্ষুদ্র জাতিসত্তা বসবাস করে। দেশের উন্নয়নের জন্য সব জাতিগোষ্ঠীর মানুষের পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া প্রয়োজন। তাই সবাই একসঙ্গে লেখাপড়া ও খেলাধুলা করব। আমরা পরস্পর পরস্পরকে বিভিন্নভাবে জানার চষ্টো করব। সবাই সবার উত্সব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করব। একে অন্যের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে শ্রদ্ধা জানাব। বাংলাদেশকে আমরা সবাই ভালোবাসি। এ দেশের উন্নয়নে আমরা সবাই মিশেমিশে কাজ করব।
রাবেয়া সুলতানা, শিক্ষক, বিয়াম ল্যবরেটরি স্কুল, ঢাকা