
কুলি-মজুর
প্রিয় শিক্ষার্থী, আজ বাংলা ১ম পত্র থেকে ‘কুলি-মজুর’ কবিতার একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।
সমাজের অবস্থাসম্পন্ন মানুষেরা দরিদ্র শ্রমজীবীদের সর্বদা অবজ্ঞা-অবহেলা করে আসছে। পৃথিবীর সবখানে দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার চলে। যুগ যুগ ধরে সমাজের গরিব তথা শ্রমিক-কুলি-মজুররাই বেশি বঞ্চিত ও উপেক্ষিত। তাদের শ্রমের ওপর ভর করে যারা ধনী হয়েছে, তারাই সব সুবিধাভোগী। এই ধনিকশ্রেণির লোকেরা জোঁকের মতোই রক্তচোষা। গরিবদের রক্ত চুষে তারা ফুলে-ফেঁপে ওঠে।
প্রশ্ন:
ক. ‘কুলি-মজুর’ কবিতাটি কোনো কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত?
খ. কবি কেন কুলি-মজুরের সঙ্গে দধীচির তুলনা করেছেন?
গ. উদ্দীপক ও ‘কুলি-মজুর’ কবিতার বিষয়গত সাদৃশ্য নিরূপণ করো।
ঘ. ‘গরিবদের রক্ত চুষে ওরা ফুলে-ফেঁপে ওঠে’—উদ্দীপক ও ‘কুলি-মজুর’ কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: ক. ‘কুলি-মজুর’ কবিতাটি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাম্যবাদী কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।
উত্তর: খ. দধীচি হলেন প্রাচীন ভারতীয় পৌরাণিক কাহিনির একজন মহামুণি বা সাধক। দৈত্য বৃত্তাসুর দেবতাদের রাজা ইন্দ্রের কাছ থেকে তাঁর স্বর্গরাজ্য কেড়ে নিয়েছিল। সে বর পেয়েছিল, প্রচলিত কোনো ধাতব অস্ত্র দিয়ে তাকে হত্যা করা যাবে না। তাই দেবরাজ ইন্দ্রের অনুরোধে দধীচি নামক এক মহামুণি, অর্থাৎ সাধক প্রাণত্যাগ করলেন এবং তার হাড় দিয়ে একটি অস্ত্র বানানো হলো। তার নাম বজ্র। সেই বজ্র দিয়ে ইন্দ্র বৃত্তাসুরকে হত্যা করে স্বর্গরাজ্য উদ্ধার করতে সক্ষম হলেন। তাই কবি এই ত্যাগী দধীচির সঙ্গে ত্যাগী কুলি-মজুরের তুলনা করেছেন।
উত্তর: গ. ‘কুলি-মজুর’ কবিতায় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম মানবসভ্যতার যথার্থ রূপকার শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের কথা বলেছেন। তাদের জয়গান করেছেন। উদ্দীপকে ‘কুলি-মজুর’ কবিতার বক্তব্যের প্রতিফলন দেখা যায়।
‘কুলি-মজুর’ কবিতায় কবি বলেছেন, যুগে যুগে কুলি-মজুরদের মতো শ্রমজীবী মানুষের অক্লান্ত শ্রম ও ঘামে গড়ে উঠেছে মানুষের এই সভ্যতা। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে মোটর, জাহাজ ও রেলগাড়ি চলছে। গড়ে উঠেছে দালানকোঠা ও কলকারখানা। এসব মহৎ মেহনতি মানুষকে শোষণ করেই বিত্তবানরা সুখের অট্টালািয় বাস করে। অবজ্ঞা ও বঞ্চনাই যেন এসব শ্রমজীবী মানুষের একমাত্র পাওনা। বাবু নামে খ্যাত একশ্রেণির সুবিধাবাদী লোক শ্রমিকদের শোষণ করে সম্পদের পাহাড় গড়েছে, অথচ সভ্যতার আদি নির্মাতা এসব শ্রমজীবী মানুষ তাদের মৌলিক অধিকারগুলো থেকে বঞ্চিত। তারা তাদের সঠিক সম্মানটুকু পায় না। পায় না উপযুক্ত পারিশ্রমিক। এমনকি তাদের প্রতি কারও একটু কৃতজ্ঞতাবোধও নেই। একই বক্তব্য ফুটে উঠেছে উদ্দীপকে। এখানে প্রকাশ পেয়েছে বণ্টনবৈষম্যের চিত্র। শ্রমিকেরা যে পরিশ্রম করে, তার তুলনায় পারিশ্রমিক অত্যন্ত নগণ্য। তারা সারা দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে পরিবারের প্রতি সদস্যের মুখে খাবার তুলে দিতে পারে না। অন্যদিকে, ধনিকশ্রেণি শ্রমিকের রক্ত পানি করা অর্থের ওপর ভিত্তি করে নির্মাণ করে বিলাসের প্রাসাদ। অথচ সভ্যতার কারিগর এই মেহনতি মানুষগুলো এর সুফল ভোগ করতে পারে না। সুতরাং, আমরা বলতে পারি উদ্দীপক ও ‘কুলি-মজুর’ কবিতার মূল বিষয় একই।
উত্তর: ঘ. আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর কুলি-মজুর’ কবিতায় কুলি মজুরদের প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছেন। অর্থাৎ সভ্যতার যথাযর্থ রূপকার শ্রমজীবী মানুষের জয়গান গেয়েছেন।
যারা শ্রম দিয়ে সভ্যতা গড়ে, তারাই সমাজে অবহেলিত। যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে শরীরের রক্ত জল করে শ্রম দিয়েছে, তাদেরই শ্রমের বিনিময়ে গড়ে উঠেছে বর্তমান সভ্যতা। কুলি-শ্রমিকের মতো লাখোকোটি শ্রমিকই সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত ও উপেক্ষিত। তাদের অক্লান্ত শ্রম ও ঘামে চলছে মোটর, জাহাজ, রেলগাড়ি। গড়ে উঠেছে দালানকোঠা, কলকারখানা। এই শ্রমজীবী শ্রেণিকে শোষণ করেই ধনিকশ্রেণি হয়েছে বিত্ত-সম্পদের মালিক। কিন্তু এই শ্রমজীবীরাই সমাজে সবচেয়ে লাঞ্ছিত ও বঞ্চিত। একশ্রেণির হূদয়হীন, স্বার্থান্ধ মানুষ তাদের শ্রমের বিনিময়ে পাওয়া বিত্ত-সম্পদের সবটুকুই ভোগ করছে। অথচ তাদের তারা মানুষ বলেই গণনা করে না। দেখা যাচ্ছে যাদের রক্ত-ঘামে সভ্যতা রঙিন, তারাই সুবিধাবাদীদের ক্রীড়নকে পরিণত হয়েছে। পরিশ্রমের তুলনায় তারা মজুরি পান কম। অপর দিকে, মালিক সেটার লাভ বা মুনাফা পায় অনেক বেশি।
পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপক ও ‘কুলি-মজুর’ কবিতা উভয় ক্ষেত্রেই শ্রমিকদের বঞ্চনা ও উপেক্ষার বিষয়টি ফুটে উঠেছে। তাদের জীবন যে কষ্টে কাটে, তাও এখানে প্রকাশ পেয়েছে। তাই উভয় ক্ষেত্রেই ধনিকশ্রেণিকে গরিবদের রক্তচোষা বলা হয়েছে।
মো. মাহবুবুর রহমান, সহকারী শিক্ষক
ন্যাশনাল ব্যাংক পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা