সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর n
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, আজ বাংলা ১ম পত্রের ‘একটি তুলসী গাছের কাহিনী’ ছোটগল্প থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।
#খাঁচায় বন্দি ময়না পাখিটির মুমূর্ষু দশা। কদিন ধরে দানাপানি নেই। এ বাড়িতে যারা থাকত, যুদ্ধের ডামাডোলে তারা বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। এক দিন নতুন এক পরিবার এসে উঠল সে বাড়িতে। তাদের যত্নে ময়না পাখিটি প্রাণ ফিরে পেল। কিন্তু কিছুদিন পর এ পরিবারটিকেও বাড়ি ছাড়তে হলো। আবার অনিশ্চিত হয়ে পড়ল ময়না পাখির জীবন।
ক. তুলসী গাছটি প্রথম কে দেখতে পায়? ১
খ. ‘ভাবছ কী অত? উপড়ে ফেলো বলছি’। এ কথা কেন বলা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো। ২
গ. অনুচ্ছেদের ঘটনা অনুসরণে গল্পের আশ্রিত মানুষদের বাড়ি ছাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. ‘মুমূর্ষু ময়না পাখি, বিবর্ণ তুলসী গাছ এবং মানুষের অস্থির জীবন যেন একই সূত্রে গাঁথা’—মন্তব্যটি ‘একটি তুলসী গাছের কাহিনী’-এর আলোকে বিশ্লেষণ করো। ৪
উত্তর: ক. গাছটি প্রথম মোদাব্বের দেখতে পায়।
উত্তর: খ. কথাসাহিত্যিক সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ রচিত ‘একটি তুলসী গাছের কাহিনী’ গল্পে মোদাব্বের উক্তিটি করেছিল।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের ভিত্তিতে ভারত বিভক্ত হলে ভারতের কিছু উদ্বাস্তু সর্বস্ব হরিয়ে ঢাকায় একটি পরিত্যক্ত বাড়ি দখল করে। এ বাড়িতে বসবাসরত অবস্থায় মোদাব্বের একদিন সকালে রান্নাঘরের পেছনে একটা তুলসীগাছ আবিষ্কার করে। তুলসীগাছ হিন্দুদের পবিত্রতার প্রতীক। কিন্তু উগ্র সাম্প্রদায়িকতাসম্পন্ন অনুদার ও সংকীর্ণমনা মোদাব্বের এটি উপড়ে ফেলতে চাইল। তার ধারণা ছিল, হিন্দুদের কারণেই ভারত বিভক্ত হয়েছে। এ মনোভাবের কারণেই রক্ষণশীল মোদাব্বের তুলসীগাছটি উপড়ে ফেলে ওই বাড়ি থেকে যাবতীয় হিন্দুয়ানি চিহ্ন মুছে ফেলতে চেয়েছিল।
উত্তর: গ. অনুচ্ছেদটি প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ বিরচিত ‘একটি তুলসী গাছের কাহিনী’ নামক ছোটগল্প অবলম্বনে তৈরি।
অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে কোনো পরিবার যুদ্ধের কারণে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় একটি পরিত্যক্ত খাঁচায় রেখে যাওয়া বন্দী ময়না পাখির দানা-পানির অভাবে মৃতপ্রায় অবস্থা। পাখিটির মুমূর্ষু অবস্থায় ওই বাড়িতে একটি নতুন পরিবারের আবির্ভাব ঘটে এবং এদের যত্নে ময়না পাখিটি পুনরায় প্রাণ ফিরে পায়। কিন্তু কিছুদিন পর সেই পরিবারটিও বাড়ি ছেলে চলে যাওয়ায় ময়না পাখিটির জীবন আবার বিপন্ন হয়ে পড়ে।
মূল গল্পে প্রখ্যাত কথাশিল্পী জীবনের সার্থক রূপকার সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ১৯৪৭ সালের দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতবর্ষ বিভাগের পর কলকাতা থেকে আগত একদল মুসলমান উদ্বাস্তু ঢাকা এসে একটি পরিত্যক্ত হিন্দুবাড়ি দখল করার ইতিহাস তুলে ধরেছেন। একদিন সকালে উদ্বাস্তু মোদাব্বের বাড়ির ভেতরে একটি তুলসীগাছ আবিষ্কার করে। বাড়িটি যে হিন্দুবাড়ি, তাতে আর কোনো সন্দেহ থাকে না। কিছুদিন পর পুলিশ তাদের জানায়, সরকার বাড়িটি বাজেয়াপ্ত করেছে এবং তাদের অনতিবিলম্বে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দেয়। নিরুপায় উদ্বাস্তুরা বাড়িটি ছেড়ে চলে যায়। ফলে, মূল গল্পের তুলসীগাছটির মতো অনুচ্ছেদে বর্ণিত ময়না পাখিটি পরিত্যক্ত বাড়ি ছাড়া উদ্বাস্তুদের মতো মানবিক মূল্যবোধের শিকার হয়।
উত্তর: ঘ. লেখক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ রচিত ‘একটি তুলসী গাছের কাহিনী’ একটি সার্থক ছোটগল্প। এ গল্পে সাহিত্যিক উদ্বাস্তু হওয়া কিছু মানুষের জীবনযন্ত্রণা উপস্থাপন করেছেন।
উদ্দীপকে মুমূর্ষু ময়না পাখির জীবন তখনই মৃতপ্রায় হয় দানা-পানির অভাবে, যখন বাড়ির লোকজন যুদ্ধের অস্থিরতায় বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল। নতুন পরিবার আসায় মুমূর্ষূ পাখিটার বেঁচে থাকার আশার প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত হলো। কিন্তু অল্প কিছুদিন পর তারা বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হলে ময়না পাখিটির সেই প্রদীপ আবার নিভে গেল।
অপর দিকে গল্পে বর্ণিত দেশ বিভাগের নিষ্ঠুরতায় কলকাতা থেকে আগত একদল উদ্বাস্তু যখন ঢাকায় এসে একটি পরিত্যক্ত বাড়ি, অথচ সুন্দর ও খোলামেলা বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে নতুন উদ্যমে বাস করতে লাগল, তখন তাদের একজন আবিষ্কৃত মৃতপ্রায় তুলসীগাছটি অন্য একজনের যত্নে ও প্রতিপালনে সজীব ও সতেজ হয়ে উঠল। পক্ষান্তরে উদ্বাস্তুদের খুঁজে পাওয়া আশ্রয়স্থল বেশিদিন স্থায়ী হলো না। পুলিশের নির্দেশে তারা সাত দিনের মাথায় বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হলো। শূন্য বাড়িটিতে শুধু তাদের ব্যবহূত জিনিসের অংশবিশেষ আর সেই তুলসীগাছ রইল। আবারও তুলসীগাছটি যত্নের অভাবে মৃতপ্রায়।
ওপরের আলোচনায় এটাই প্রতীয়মান হয় যে মুমূর্ষু ময়না পাখি, বিবর্ণ তুলসীগাছ এবং মানুষের অস্থিরতার জীবন যেন একই সূত্রে গাঁথা।
প্রভাষক, রূপনগর মডেল কলেজ, ঢাকা