বা ং লা ১ ম প ত্র

সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর 

প্রিয় শিক্ষার্থীরা, আজ বাংলা ১ম পত্রের ‘আঠারো বছর বয়স’ ছোটগল্প থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।

# দুজন মনোবিজ্ঞানীর মতবাদ

সিগমন্ড ফ্রয়েড: ১৬-১৮ বছর বয়সে ছেলেমেয়েরা সমলিঙ্গীয় প্রেমের আসক্তিতে ভোগে। স্বীয় সৌন্দর্য ও পোশাক-পরিচ্ছদ সম্পর্কে অত্যধিক সচেতন হয়ে ওঠে এ বয়সেই (সাইকো-এনালাইটিক তত্ত্ব)

এরিক-এরিকসন: ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সের স্তরটি না-শিশু না-যুবক। এ বয়সে সমাজচিন্তাই প্রবল হয়ে ওঠে। সমাজের উন্নতির জন্য প্রতিবাদীও হয়ে ওঠে। সামাজিক মূল্যবোধের বিরুদ্ধাচরণ করে এ বয়সেই (সাইকো-সোশ্যাল তত্ত্ব)

ক. ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে?

খ. আঠারো বছর বয়সের জীবনবোধকে কবি কেন তীব্রতা ও প্রখরতার সঙ্গে তুলনা করেছেন?

গ. ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবির মনোভাবের সঙ্গে সিগমন্ড ফ্রয়েডের বক্তব্যের বৈপরীত্যটি ব্যাখ্যা করো।

ঘ. কবির দৃষ্টিভঙ্গি যেন এরিকসনের বক্তব্যের প্রতিফলন—বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: . ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটি ‘ছাড়পত্র’ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।

উত্তর: . আঠারো বছর বয়সের জীবনবোধকে কবি তীব্রতা ও প্রখরতার সঙ্গে তুলনা করেছেন।

আঠারো বছর বয়সে মানুষের শারীরিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মনোজগতেও পরিবর্তন ঘটে। অদম্য মানসিক শক্তি তাজা প্রাণে জোগায় অমিত তেজ। প্রাণশক্তিতে বলীয়ান তরুণেরা বিশ্বকে হাতের মুঠোয় পেতে চায়। আশপাশের সবকিছুই তাদের সংবেদনশীল মনকে তীব্রভাবে নাড়া দেয়। চিন্তা-চেতনায় থাকে সূর্যের আলোর মতো প্রখর দীপ্তি। সে কারণে কবি এ বয়সের জীবনবোধকে তীব্রতা ও প্রখরতার সঙ্গে তুলনা করেছেন।

উত্তর: . ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তরুণদের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। আর সিগমন্ড ফ্রয়েড এ বয়সের স্বভাব বৈশিষ্ট্যের তুলনায় শারীরিক দিকটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন।

সিগমন্ড ফ্রয়েডের মতে, ১৬-১৮ বছর বয়সে ছেলেমেয়েরা সমলিঙ্গীয় প্রেমের আসক্তিতে ভোগে। কিন্তু এ কবিতায় কবির এ জাতীয় কোনো মনোভাব ব্যক্ত হয়নি। কবির মতে, ১৮ বছর বয়সী তরুণেরা মানসিক শক্তিতে বলীয়ান। তাই তারা স্বপ্ন দেখে নব নব অগ্রগতি সাধনের। আর সেই সব বাস্তবায়নে নিত্যনতুন করণীয় সম্পাদনের জন্য নব নব শপথে বলীয়ান হয়ে সে এগিয়ে যায় দৃঢ় পদক্ষেপে।

আবার ফ্রয়েড এ বয়সের ছেলেমেয়েদের নিজের সৌন্দর্য সম্পর্কে সচেতনতার কথা বলেছেন। কিন্তু ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় এ জাতীয় মনোভাব প্রকাশ পায়নি। কবির মতে, দেশ ও মানবতার জন্য যুগে যুগে মানুষ এ বয়সেই এগিয়েছে বেশি। নানা দুঃসাহসী স্বপ্ন, কল্পনা ও উদ্যোগ এ বয়সের তরুণদের মনকে ঘিরে ধরে। কবির ভাষায়—

আঠারো বছর বয়সেই অহরহ

বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি।

উত্তর: . ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য বয়ঃসন্ধিকালের বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরেছেন। কবির এ দৃষ্টিভঙ্গি এরিকসনের বক্তব্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

এরিক-এরিকসন ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সের স্তরটির ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দুটি দিকের উল্লেখ করেছেন। ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় ও তারুণ্যের স্বভাব বৈশিষ্ট্যের দুটি দিক লক্ষণীয়।

এ বয়সের ধর্মই হলো আত্মত্যাগের মহান মন্ত্রে উজ্জীবিত হওয়া, আঘাত-সংঘাতের মধ্যে রক্ত শপথ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া। পাশাপাশি সমাজ-জীবনের নানা বিকার, অসুস্থতা ও সর্বনাশের অভিঘাতে এ বয়স আবার হয়ে উঠতে পারে ভয়ংকর। এ সময় দক্ষতার সঙ্গে নিজেকে পরিচালনা করতে না পারলে তার পদস্খলন হতে পারে। মূল্যবোধের অবক্ষয়ের ফলে জীবনে নেমে আসতে পারে বিপর্যয়। কবির ভাষায়—

দুর্যোগে হাল ঠিকমতো রাখা ভার

ক্ষত-বিক্ষত হয় সহস্র প্রাণ।

তথাপি এরিকসনের মতো কবিও তরুণদের জয়গান গেয়েছেন। কারণ, সব ব্যক্তিস্বার্থ তুচ্ছ করে যুগে যুগে এ বয়স সুন্দর, শুভ ও কল্যাণের জন্য রক্তমূল্য দিতে জানে—এ বয়স জানে রক্তদানের পুণ্য।’

কবি তাই এ বয়সের নেতিবাচক দিকের তুলনায় ইতিবাচক দিককেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।