বিশ্বকাপ বনাম বন্ধুত্ব

.
.

২০০৬ সাল, ক্লাস সিক্সে পড়ি। আমি কট্টরপন্থী আর্জেন্টিনার সমর্থক। পাশের বাসায় থাকে আমার বন্ধু রাফা। সে আবার কট্টরপন্থী ব্রাজিলের সমর্থক। প্রতিদিন ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা নিয়ে তুমুল হইচই, মারামারিও লেগে যায় প্রায়! একদম ‘জানেজিগার’ দোস্ত থেকে আমরা একজন আরেকজনের মুখ দেখতে পারি না অবস্থা। বিশ্বকাপের শুরুতে আমি আমাদের বাসার ছাদে আর্জেন্টিনার পতাকা ওড়ালাম ৩ ফুট বাই ২ ফুট। রাফা আমার পতাকার ঠিক পাশেই ওড়াল ৪ ফুট বাই আড়াই ফুট! আমার তো মানসম্মান যায় যায় অবস্থা। আরও বড় আরেকটা পতাকা ওড়ালাম শেষে। এভাবে আমাদের মধ্যে বেশ কয়েকবার পতাকা ওড়ানোর খেলা চলল। শুধু তা-ই না, খেলা শুরু হওয়ার সময় ব্রাজিল গোল খেলে ওর বাসার সামনে গিয়ে আমি চিৎকার করি, আবার ব্রাজিল গোল দিলে ও আমার বাসার সামনে এসে চিৎকার করে। আর্জেন্টিনার বেলায়ও একই অবস্থা।
কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনা আর জার্মানির খেলা। আর্জেন্টিনা এগিয়ে আছে এক গোলে, আমার লাফালাফি দেখে কে! ওর বাসার সামনে গিয়ে সে কী হইহল্লা! বেচারা তো মনের দুঃখে শেষ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টিনা হেরে গেল। রাগে-দুঃখে-অপমানে আমার মারা যাওয়ার অবস্থা। তারপর আবার রাফার হইহল্লা। ভাবলাম, পরদিনই তো ব্রাজিলের খেলা। একদিন অপেক্ষা করা যাক!
হা হা! আমার চাওয়ামতোই ব্রাজিল হেরে গেল। রাত দেড়টা কি দুইটার দিকে রাফার বাসার সামনে আমার লাফালাফি কে দেখে! যেন আর্জেন্টিনা জিতলেও এত খুশি হতাম না।
পরদিন রাফা এসে বলল, ‘দোস্ত, আমি তোর সাথে যা করছি, তুইও তাই করলি। আর্জেন্টিনাও বাদ, ব্রাজিলও বাদ; চল আমরা আবার বন্ধু হয়ে যাই।’ আমি আর কী বলব? মেনে নিলাম ওর প্রস্তাব!
মোস্তফা মনোয়ার
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা