সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
প্রিয় শিক্ষার্থী, আজ ব্যবসায় নীতি ও প্রয়োগ ১ম পত্র থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।
# সাভারের আকতার মিয়াসহ ৫০ জন মিলে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললেন। ২ বছরে তাদের মূলধন দাঁড়ায় ২০ লাখ টাকা। তৃতীয় বছরে মোট লাভের ২,২০,০০০ টাকা থেকে ৩৩,০০০ টাকা তাদের সংরক্ষিত তহবিলে এবং ১১,০০০ টাকা উন্নয়ন তহবিলে জমা করেন। অবশিষ্ট টাকা সদস্যরা প্রত্যেকে সমান ভাগে ভাগ করে নিলেন এবং নিজেদের সহযোগিতায় আরও সচেষ্ট হলেন। কিছু দিন পর সংগঠনের নির্বাহী পরিষদ নির্বাচনে সদস্যরা নিরপেক্ষভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। এই নির্বাচনের কারণে তাদের মধ্যে সামান্য ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হলেও ঐক্য অটুট ছিল।
প্রশ্ন:
ক. যৌথ মূলধনী কোম্পানি কী?
খ. ‘কোম্পানির অস্তিত্ব চিরন্তন’ বলতে কী বোঝায়?
গ. আকতার মিয়া ও তার সহযোগীগণ কোন জাতীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন?—ব্যাখ্যা করো।
ঘ. সদস্যদের মধ্যে দৃঢ় বন্ধন সৃষ্টিতে উদ্দীপকে বর্ণিত সংগঠনের কোন নীতিটি অধিক কার্যকর। ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ক. কয়েকজন ব্যক্তি মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্য নিয়ে স্বেচ্ছায় যৌথভাবে মূলধন বিনিয়োগ করে আইনের আওতায় যে ব্যবসায় সংগঠন গড়ে তোলে, তাকে যৌথ মূলধনী কোম্পানি বলে।
উত্তর: খ. কোম্পানির অস্তিত্ব চিরন্তন বলতে কোম্পানির আইনগত ভিত্তিকে বোঝানো হয়েছে। এটি আইন দ্বারা সৃষ্ট কৃত্রিম ব্যক্তিসত্তার অধিকারী। শেয়ার হোল্ডারদের মৃত্যু বা দেউলিয়াত্বের কারণে এটি বিলুপ্ত হয় না। এমনকি সব শেয়ার হস্তান্তরেও এর বিলুপ্তি ঘটে না।
উত্তর: গ. সমতার ভিত্তিতে অর্থনৈতিক স্বার্থরক্ষার জন্য সমশ্রেণি বা পেশাভুক্ত কয়েকজন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় একত্র হয়ে যে সংগঠন গড়ে তোলে, তাকে সমবায় সংগঠন বলে। আকতার মিয়া ও তার সহযোগীগণ সমবায় সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। সমবায় সংগঠনের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো সদস্যদের পারস্পরিক কল্যাণ ও আর্থিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা। এ জন্য সমবায় সংগঠনের আইনে রয়েছে ব্যবসায়ের অর্জিত লাভের সবটুকু সদস্যদের মধ্যে বণ্টিত হবে না, বাধ্যতামূলকভাবে এর ন্যূনতম ১৫ শতাংশ সংরক্ষিত তহবিলে এবং ৫ শতাংশ সমবায় উন্নয়ন তহবিলের চাঁদা হিসেবে সংরক্ষণ করে বাকি অংশ সাধারণ সভার সিদ্ধান্তক্রমে উপবিধি অনুযায়ী শেয়ার গ্রহীতাদের মধ্যে বণ্টিত হবে। উদ্দীপকে দেখা যায়, সাভারের আকতার মিয়াদের সংগঠনটিতে লাভের ২,২০,০০০,০০ টাকা থেকে ১৫ শতাংশ (৩৩,০০০.০০ টাকা) সংরক্ষিত তহবিলে এবং ৫ শতাংশ (১১,০০০.০০ টাকা) উন্নয়ন তহবিলে জমা করে। তা ছাড়া আকতার মিয়াদের সংগঠনটির সদস্যসংখ্যা ৫০ জন, যা এই সংগঠনের সর্বনিম্ন সদস্যসংখ্যা ২০ জনের শর্ত পূরণ করে। আকতার মিয়াদের সংগঠনটি সমবায় সমিতি গঠন করার সব শর্ত পূরণ করে। তাই এটি সমবায় সংগঠন।
উত্তর: ঘ. সদস্যদের মধ্যে দৃঢ়বন্ধন সৃষ্টিতে উদ্দীপকে বর্ণিত সংগঠনটির একতার নীতিটি অধিক কার্যকর হবে। আমরা জানি, দরিদ্র ও সমমনা ব্যক্তিগণ ভবিষ্যতের আশায় নিজেদের সীমিত সামর্থ্যকে একত্র করে যেমনি সমবায় গঠন করে, তেমনি সফলতা লাভে সব অবস্থায়ই এর সদস্যদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হয়। উদ্দীপকের সংগঠনটি সমবায় সংগঠন, সাভারের আকতার মিয়া ৫০ জনকে সদস্য হিসেবে নিয়ে যে ব্যবসায় শুরু করেন, তাতে তিনি সদস্যদের কল্যাণের জন্য লাভের সম্পূর্ণ অংশ বণ্টন না করে ১৫ শতাংশ সংরক্ষিত তহবিলে অর্থাত্ ৩৩,০০০.০০ টাকা ৫ শতাংশ উন্নয়নে তহবিলে সংরক্ষণ করেন। এতে ভবিষ্যত কল্যাণের চিন্তাটি ফুটে ওঠে। এ থেকেই বোঝা যায় এই সংগঠনটি শুধু মুনাফা অর্জনে ব্যস্ত না থেকে ভবিষ্যতে সদস্যদের কোনো সমস্যা হয় তার জন্য অর্থ সঞ্চয় করে রাখে। উদ্দীপকে দেখা যায়, সমবায়ের সদস্যরা নিরপেক্ষভাবে তাদের সংগঠনের নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। নির্বাচনকে ঘিরে সদস্যদের মধ্যে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হলেও পারস্পরিক কল্যাণের বিষয়টি মাথায় রেখে ‘একতাই বল’ এ মূলমন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে তাদের মধ্যে ঐক্য অটুট রাখে। এতে প্রতীয়মান হয় যে সমবায়ের সদস্যদের মধ্যে দৃঢ়বন্ধন সৃষ্টিতে একতার নীতিটি অধিক কার্যকর হয়েছে।