ভিডিও গেম মানেই খারাপ নয়

সীমিত মাত্রায় ভিডিও গেম খেলে শিশু–কিশোরদের বিভিন্ন বাধা অতিক্রমের চেষ্টা, অনুসন্ধানী চেতনা ও সমবয়সীদের সঙ্গে মেশার সামর্থ্য বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে
সীমিত মাত্রায় ভিডিও গেম খেলে শিশু–কিশোরদের বিভিন্ন বাধা অতিক্রমের চেষ্টা, অনুসন্ধানী চেতনা ও সমবয়সীদের সঙ্গে মেশার সামর্থ্য বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে

ভিডিও গেমে শিশু-কিশোরদের অনেক আগ্রহ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা খেলতে চায় তারা। এ ধরনের আসক্তি অবশ্যই খারাপ। কোনো মা-বাবাই চান না, তাঁদের সন্তান অনবরত ভিডিও গেম নিয়ে ব্যস্ত থাকুক। তবে অল্প সময়ের জন্য শিশুদের সেই সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। কারণ, পরিমিত ভিডিও গেম খেলার কিছু ইতিবাচক দিকও আছে। যুক্তরাজ্যের একদল গবেষক এমনটিই দাবি করছেন।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষকেরা বলছেন, দিনে সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা ভিডিও গেম নিয়ে থাকলে শিশুদের আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। তারা ভালো-মন্দ বিচার করতে শেখে এবং সমবয়সীদের সঙ্গে ঠিকভাবে মিশতে পারে। আর এসব গুণের বিচারে তারা সেই শিশু-কিশোরদের চেয়ে এগিয়ে থাকে, যারা ভিডিও গেম একেবারেই খেলে না।
গবেষণায় নেতৃত্ব দেন অক্সফোর্ডের মনোবিজ্ঞানী অ্যান্ড্রু প্রজিবিলস্কি। সহযোগীদের নিয়ে তিনি যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সী পাঁচ হাজার ছেলেমেয়ের ভিডিও গেম খেলার অভ্যাস, সময় এবং সংশ্লিষ্ট পরিবেশ ও অবস্থার মধ্যে সম্পর্ক যাচাই করে দেখেন।তাঁদের গবেষণা প্রতিবেদনটি পেডিয়াট্রিকস সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। ওই শিশু-কিশোরদের জিজ্ঞেস করা হয়, তারা বিদ্যালয় খোলা থাকা অবস্থায় কম্পিউটার বা গেম কনসোল (ভিডিও গেম খেলার জন্য বিশেষায়িত যন্ত্র) ব্যবহার করে কতক্ষণ ভিডিও গেম খেলে।আর সেই খেলায় তাদের জীবনযাত্রায় কী কী প্রভাব পড়ে, জানার জন্য গবেষকেরা কিছু প্রশ্নও করেন। যেমন: জীবন নিয়ে তারা সন্তুষ্ট কি না, সহপাঠী বা সমবয়সীদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কেমন, বিপদাপন্ন মানুষকে তারা সহায়তা করে কি না, তারা কী কী বিষয়ে বেশি মনোযোগী আর কোন বিষয়ে অনাগ্রহী। এসব প্রশ্নের উত্তর থেকে তাদের মানসিক বিকাশ এবং পরিপার্শ্বের সঙ্গে খাপ-খাওয়ানোর সামর্থ্য সম্পর্কে জানা যায়। পরে এসব তথ্য এবং ভিডিও গেম না খেলে অভ্যস্ত শিশুদের ব্যাপারে একই ধরনের তথ্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়।
গবেষকেরা বলেন, ব্রিটেনের ৭৫ শতাংশ শিশু-কিশোর প্রতিদিন ভিডিও গেম খেলে। যারা একদমই গেম খেলে না, তাদের চেয়ে এক ঘণ্টারও কম সময় ভিডিও গেম খেলে অভ্যস্ত শিশু-কিশোরদের ইতিবাচক গুণাবলি বেশি। এ ছাড়া অল্প সময় গেম খেলার অভ্যাসে শিশু-কিশোরদের পড়াশোনা ও পারিবারিক সম্পর্কে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে যেসব শিশু-কিশোর দিনে তিন ঘণ্টার বেশি ভিডিও গেম খেলে, জীবনের প্রতি তাদের মধ্যে একধরনের অসন্তুষ্টি তৈরি হয়।
সীমিত সময় ভিডিও গেম খেলার কারণে শিশু-কিশোরদের মানসিক ও সামাজিক পর্যায়ে ইতিবাচক পরিবর্তনের কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করেছেন গবেষকেরা। তাঁদের মতে, ভিডিও গেম থেকে বেশ কিছু নতুন বিষয় সম্পর্কে ওই ছেলেমেয়েরা ধারণা পায়। এই যান্ত্রিক খেলা শিশু-কিশোরদের ‘অভিন্ন ভাষা’ হিসেবে কাজ করে। আর যেসব শিশু-কিশোর কখনোই ভিডিও গেম খেলেনি, তারা এই ‘অভিন্ন ভাষায়’ ভাব বিনিময়ের সুযোগ থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত হয়।
প্রজিবিলস্কি বলেন, ভিডিও গেম সম্পর্কে একপেশে ধারণার ভিত্তিতে আগের গবেষণাগুলো হয়েছে। যেমন: গবেষণার বিষয় হতো, এই গেম খেলা খুবই ইতিবাচক অথবা পুরোটাই নেতিবাচক এবং এতে সহিংসতা বাড়ে। তবে নতুন গবেষণাটিতে ভিডিও গেম খেলার ভালো-মন্দ সব দিকই বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
ইনডিপেনডেন্ট ও বিবিসি।