মনের জানালা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন।—বি. স.

অধ্যাপক মেহতাব খানম।
অধ্যাপক মেহতাব খানম।

সমস্যা
তখন দশম শ্রেণীতে পড়ি। আমার চেয়ে এক বছরের বড় এক ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক হয়েছিল। ভুল বোঝাবুঝির কারণে এক বছর তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ ছিল। কলেজে পড়া অবস্থায় ওর সঙ্গে আবার সম্পর্ক হয় এবং সে জোর করে শারীরিক সম্পর্ক করে এবং ভিডিও করে। তারপর সে আমাকে বলে ভিডিওটা নাকি আমার পরিবারকেও দেখাবে। ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে সে আমার কাছ থেকে অনেক টাকাও নিয়েছে। এরপর সে একাধিক মেয়ের সঙ্গে প্রেম করেছে। ছেলেটি এখন আমাকে চায়, কিন্তু আমার পরিবার বা আমি কেউ মন থেকে ওকে পছন্দ করি না। সে ভয় দেখায়, সে নাকি আমার অনেক ক্ষতি করবে। যোগাযোগ না করলে বকাঝকা করে। আমি মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছি, ওই ঘটনা মনে পড়লে অনেক খারাপ লাগে। এখন আমি কী করব?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, শেরপুর
পরামর্শ
তোমার সঙ্গে যা ঘটেছে, তা খুবই অপমানজনক, যন্ত্রণাদায়ক ও ভীতিকর; তাতে সন্দেহ নেই। ছেলেটি তার বিকৃত মানসিকতার কারণেই এই কাজ করেছে। এর মাধ্যমে সে কিন্তু নিজেকেই সমাজের কাছে ঘৃণিত ও অসম্মানিত করেছে। তুমি কি একেবারেই বুঝতে পারোনি যে সে ভিডিও করছে? তুমি কি ভিডিওটি দেখেছ, নাকি তোমাকে ভয় দেখানোর জন্য সে কথাগুলো বলছে। শুনেছি, প্রেমের সম্পর্ক চলাকালীন দুজনের সম্মতিতেই তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তগুলো ভিডিওতে ধারণ করা হচ্ছে এবং পরবর্তী সময়ে দুজন বসে সেটি দেখছে। এই ব্যাপারটি যেমন সুস্থ রুচির পরিচয় বহন করে না, ঠিক তেমনি এর ফলে পরবর্তী সময়ে মেয়েরা যে বিপদে পড়তে পারে, সেটিও তারা খেয়াল রাখছে না। কাউকে না বলে এভাবে দিনের পর দিন নির্যাতিত হতে থাকলে তোমার পক্ষে মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখা একেবারেই সম্ভব হবে না। এ বিষয়ে যে নতুন আইনটি হয়েছে, তাতে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা আছে। তুমি আর দেরি না করে পরিবারের যার ওপর মোটামুটি নির্ভর করা যায়, এমন কাউকে বলে ঢাকায় এসে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রে যোগাযোগ করো। যোগাযোগের নম্বর: ৮১২৬১৩৭, ৮১২৬০৪৭। ঠিকানা: ৭/১৭ লালমাটিয়া, ব্লক-বি। যদি এই অপরাধীরা শাস্তি না পায়, তাহলে এ ধরনের আচরণ আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হবে। আশা করি, এই অভিজ্ঞতা থেকে তুমি অনেক বড় একটি শিক্ষা নিয়েছ। ।

সমস্যা
আমি প্রথম শ্রেণীর একজন সরকারি কর্মকর্তা। আমার বয়স ৩০ বছর। সমস্যা হলো, আমি কোনো প্রকার ইভ টিজিং সহ্য করতে পারি না। এটাই স্বাভাবিক, কেননা ইভ টিজিং খুবই ঘৃণিত একটা কাজ। এই সভ্যতাবিবর্জিত ঘটনা আমার সামনে ঘটলে আমি সহজে মন থেকে দূর করতে পারি না। ইভ টিজিং দূর করার জন্য আমি বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকার চিঠিপত্র কলামে লেখা পাঠিয়েছি এবং সেগুলো প্রকাশিত হয়েছে। অনেক বছর আগে একটি ছেলে দূর থেকে কয়েকটি চাকমা মেয়েকে ঢিল ছুড়ে মেরেছিল এবং সেই ঢিলের আঘাতে তাদের একজন রক্তাক্ত হয়েছিল। ঘটনাটি ঘটেছিল রাতে এবং সেই চাকমা মেয়েরা গার্মেন্টসে চাকরি করে বাসায় ফিরছিল। প্রায় ৮-১০ বছর আগের এই ঘটনা আমাকে আজও তাড়া করে। এ রকম আরও কয়েকটি বিভীষিকাময় ঘটনা আমার মনে খুবই চাপ সৃষ্টি করে এবং মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে।
মো. আরিফুর রহমান
পরামর্শ
তোমার মতো সুস্থ মানসিকতা এবং মেয়েদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছেলেদের সংখ্যা সমাজে বেশি হলে সামগ্রিক পরিস্থিতিই অনেক স্বস্তিকর ও মেয়েবান্ধব হতে পারত। মেয়েদের যৌন হয়রানির বিষয় নিয়ে তোমার মনোভাব ও মূল্যবোধটি তুমি যে পত্রিকায় চিঠি লিখে প্রকাশ করেছ, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তবে এ নিয়ে তোমার মধ্যে যদি অতিরিক্ত মানসিক চাপ সৃষ্টি হয় এবং তোমাকে তা সারাক্ষণ তাড়া করে বেড়ায়, তাহলে সেটি অবসেশনের পর্যায়ে পড়ে। সে ক্ষেত্রে নিজেকে চাপমুক্ত রাখার জন্য রিলাক্সেশন, মেডিটেশন ইত্যাদি করতে পারো। যদি তাতেও ফল না পাও, তাহলে কোনো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মনোবিজ্ঞানীর কাছ থেকে কাউন্সেলিং সেবা গ্রহণ করতে হবে। আরও একটি সুন্দর উদ্যোগও তুমি নিতে পারো। সেটি হচ্ছে তোমার এলাকার কিছু সমমনা মানুষের সহায়তা নিয়ে তুমি অল্প বয়সী ছেলেদের একত্র করে একটি দল তৈরি করতে পারো, যাদের কাজ হবে মেয়েরা যাতে রাস্তায় হয়রানির শিকার না হয় সেটি নিশ্চিত করা। যদিও কাজটা খুব সহজ নয়। আমি নিশ্চিত, তোমার মতো ছেলেরা সমাজে আছে বলেই বাংলাদেশের মেয়েরা এখনো নিশ্চিন্তে বাইরে গিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশ নিতে পারছে।