মনের রঙে ঈদ

বাজার ঘুরে কোনোভাবেই পছন্দ হয় না মনের মতো পোশাক। তাঁদের জন্য তো দরজিবাড়ি আছেই। বানিয়ে ফেলুন না নিজের নকশায় নিজের পোশাক। আর কারও সঙ্গে মিলেও যাবে না। তবে এ জন্য ফরমাশ দেওয়া চাই আগেভাগেই।
দরজিবাড়ি সরগরম
এর মধ্যেই বেশ সাজ সাজ রব পড়ে গেছে নগরের বিভিন্ন দরজিবাড়িতে। পড়বেই না কেন? কেউই যে এবার হাল ফ্যাশনের বাইরে যেতে রাজি নন। গুলশান পিংক সিটির শাহ আলম টেইলার্সের মাস্টার উজ্জ্বল চন্দ্র সরকার জানান এবারের ট্রেন্ড।
হাল ফ্যাশনের লম্বা কামিজের এবারও কদর রয়েছে। তবে ঝুল আর কাটে বৈচিত্র্য দেখা যাচ্ছে। নিচের দিকের ঘেরটা আগের মতো বেশিই আছে, তবে ওপরের দিকে চাপা ঘরানার কামিজ চলছে। এর সঙ্গে চলছে চাপা প্যান্ট-পাজামা। চুড়িদারের চলটা একেবারেই চলে যায়নি, তবে নিচের দিকের ঘের বেশি—এমন ভেলভেট পাজামা বা পালাজো প্যান্টের ফরমাশ দিচ্ছেন কেউ কেউ। এর সঙ্গে মিলিয়ে লম্বা হাতার নিচের দিকের ঘেরটাও বেশি। চুড়িদার পাজামার সঙ্গে মিলিয়ে কামিজের হাতা চুড়িদার দিতেও দেখা যাচ্ছে। কামিজের সামনের দিকের গলার বৈচিত্র্য থাকে সবারই। এবার পেছনের দিকে হাইনেক বা ওপরের দিকে ওঠানো গলার ফরমাশ বেশি। লম্বা কামিজের পাশাপাশি খাটো ও টিউনিক ঘরানার কামিজের কিছু ফরমাশ এসেছে।
যাঁরা ঈদে শাড়ি পরবেন, তাঁরা এর মধ্যেই এর সঙ্গে মিলিয়ে ব্লাউজের ফরমাশ দিতে শুরু করেছেন। এবার শাড়ি সাদামাটা হলেও ব্লাউজের নকশা ও কাটে জমকালো ভাব দেখা যাচ্ছে। হাতা ছোট না দিয়ে অনেকেই কনুই অবধি বা কবজি অবধি দিচ্ছেন। গলা ও হাতায় রঙিন পাইপিংয়ের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে।
ঢাকার ধানমন্ডির এ আর এ সেন্টারের জয়তি লেডিস টেইলার্সের মাস্টার অলি আমিন জানান পোশাকের কাপড়ের পরিমাপ আর বানানোর খরচের খবরাখবর। লম্বা কামিজ বানাতে কাপড় লাগবে তিন থেকে সাড়ে তিন গজ। বানানোর খরচ পড়বে কাপড় ও নকশাভেদে ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা। পাজামা বানাতে কাপড় লাগবে আড়াই থেকে তিন গজ। খরচ পড়বে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা। ফ্রক ধাঁচের কামিজ বা আনারকলি বানাতে কাপড় লাগবে তিন থেকে সাড়ে চার গজ। বানাতে খরচ লাগবে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। লম্বা হাতার ব্লাউজের জন্য কাপড় লাগবে এক গজ ১২ গিরা, হাত খাটো হলে এক থেকে সোয়া গজ হলেই হবে। বানানোর খরচ পড়বে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা।

গজ কাপড়ের বাজার
তিল ঠাঁই আর নাহিরে’...না, আকাশ নয়, গজ কাপড়ের বাজার দেখেই এ কথা মনে হতে পারে। ভিড় যেমন, কাপড়ের বৈচিত্র্যও তেমনি। ঢাকার গাউছিয়া, চাঁদনিচক, গুলশান পিংক সিটি, ধানমন্ডির সানরাইজ প্লাজা, মেট্রো শপিং মলসহ নগরের বিভিন্ন মার্কেট জমে উঠেছে নানান নকশা ও রঙের গজ কাপড়ে। বাজার ঘুরে দেখা গেল, সময়টা বর্ষাকাল বলে এবার সুতির চেয়ে শিফন, জর্জেট, কাতান ও সিল্ক কাপড়ের কদর বেড়ে গেছে। এসব কাপড়ের ওপর এমব্রয়ডারি, চুমকি, জরি সুতার ভারী কাজের নকশাদার কাপড়ও রয়েছে। শিফন কাপড়ের দাম পড়বে গজপ্রতি ১৮০ থেকে ২২০ টাকা, নকশা করা জর্জেট এক হাজার ২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, কাতানের ওপর কাজ করা জামেবার কাতান পাবেন ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকায়, নেট ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, মাখন সিল্ক ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, আমেরিকান ক্রেপ ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, রিভার কটন ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায় ও ভয়েল ৭০ থেকে ১২০ টাকা।
লেইস ফিতা আর পাথরের চকমকি
এবারের ঈদে একরঙা কাপড়ের ওপর ইয়োকের ব্যবহার বেশ চোখে পড়ার মতো। তবে সাদামাটা লেইসে আর কেউ তুষ্ট নয়। চলছে এবার পাথরের চকমকি। মুক্তা ও পাথরের নকশা করা লেইস ও ইয়োক বেশি চলছে। রঙের মধ্যে সোনালি, সাদা, রুপালি ও কালোর এবার জয়জয়কার। এ ছাড়া কামিজে পাথর ও ধাতুর তৈরি বাহারি ব্রোকেডের ব্যবহারও নজর কাড়ছে। পাথরের লেইস পাবেন লাইনপ্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকায়, চওড়া পাথরের লেইস পাবেন ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকায়, ইয়োকের ওপর পাথরের কাজ ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায়, এমব্রয়ডারি করা ইয়োক ১০০ থেকে ৩০০ টাকা, লেইস ৩০ থেকে ৮০ টাকা ও নেট লেইস ৬০ থেকে ৮০ টাকা। লেইস ও পাথর পাবেন চাঁদনিচক, গাউছিয়া ছাড়াও গজ কাপড়ের দোকান ও নগরের বিভিন্ন শপিংমলের দরজির দোকানে।