গায়ে জ্বর নিয়ে তোমায় লিখছি মাগো। তোমায় চিঠি লিখছি কেনো, জানো মা? ফোনে যদি তোমাকে বলি আমার জ্বর হয়েছে, তাহলে তুমি অনেক চিন্তা করবে। বাবাও করবে। দুজনরই তো বয়স হয়েছে, নাকি? কিন্তু তোমাকে না বললে যে জানটা বের হয়ে যায়।
মা, তুমি কেমন আছ?
আচ্ছা মা, আমাদের পেঁপেগাছটা কেমন আছে?
একটা নয়তো, অনেক গাছ। গাছভর্তি পেঁপে। পেঁপেগাছগুলোকে অনেক মিস করছি। মা, টিউবওয়েলের পাশে বেলগাছটার কী খবর? গতবার অনেক বেল ধরেছিল গাছটায়। মামাদের বাড়ির পাশ লেবুগাছটার কথা খুব মনে পড়ে। খুব লক্ষ্মী একটা লেবুগাছ।
মা, ওদের জিজ্ঞেস করো তো, ওরা কি আমাকে খুব মিস করে? হলদে পাখিটা কি আমাকে মিস করে? সন্ধ্যার জোনাকির দল কি আমার কথা ভাবে? তোমার সঙ্গে প্রতিদিনই ওদের কথা হয়, দেখা হয়। জিজ্ঞেস করো তো, জোছনা রাতের কবিতার মতো চাঁদটা আমার জন্য অপেক্ষা করে নাকি? বাবা ধান কেটে উঠানে তুলেছে শুনলাম। আমি আমার বাবাকে নিয়ে গর্বিত, মা। সহজ, সরল, মাটির মানুষ। সৎ-পরিশ্রমী ও দায়িত্বশীল একজন বাবা। মা, বাবা হয়তো আমাকে ছোটবেলায় অ, আ, ক, খ পড়ায়নি, সেই সুযোগটা তার হয়নি, অনেক বছর বিদেশ ছিল। জীবনের সবচেয়ে সোনালি সময়টা ত্যাগ করেছে আমাদের সুখের জন্য। তবে বাবার কাছ থেকে আমি শিখেছি ত্যাগ আর ভালোবাসা। প্রিয় মানুষের জন্য ত্যাগ আর তাদের জন্য অপরিসীম ভালোবাসা।
মা, আমিও বাবার মতো সবাইকে ভালোবাসতে চাই। সবার জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে চাই। সবাইকে ছুঁয়ে যেতে চাই।
মা জানো, নিজেকে মাঝেমধ্যে তোমাদের কাছ থেকে খুব দূরে দূরে মনে হয়। কারণ, তোমাদের জন্য এখনো কিছু করতে পারিনি আমি। আমার জমজ ভাইটা অনেক ভাগ্যবান। ওর জন্য আমি খুব গর্ব অনুভব করি। বাবার মতো ও খুব ত্যাগী আর সৎ। দারুণভাবে গোটা সংসার চালিয়ে নিচ্ছে। তুমি দেখো মা, আমি আমার লক্ষ্য ছোঁব, তোমাদের সবাইকে খুশি করব। শুয়ে শুয়ে লিখছি বলে আঙুলে ব্যথা হচ্ছে, মা। তোমার দোয়ায় যেন তাড়াতাড়ি জ্বর সেরে যায়, আবার যেন হাসতে পারি।
ইতি, তোমার আদরের ছেলে।
সুদীপ্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।